গোসলের ফরজ কয়টি, ফরজ গোসলের বিধান ও নিয়ম

গোসলের ফরজ কয়টি

পেশাব-পায়খানা, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি নাপাক জিনিস হতে পাক সাফ থাকাকেই পাক-পবিত্রতা বলে। পাক-পবিত্র হওয়ার একটি উপায় হল গোসল। পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়াকে গোসল বলে। ঈমানদারকে সবসময় শারীরিক পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অজুর পাশাপাশি তাদের সময় সুযোগ সুবিধা আবশ্যিকতা ভেদে গোসলও করতে হয়। তাই গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এবং কখন গোসল ফরজ হয় অর্থাৎ কখন গোসলের ফরজ আদায় করা জরুরি তা আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের ই জানা দরকার।

আপনাদের সুবিধার্থেই আমরা আজকের আর্টিকেলে গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি, গোসলের সুন্নত, গোসল কখন ফরজ হয়, গোসল কখন সুন্নত এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।


আরও পড়ুনঃ নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম


গোসল সম্পর্কিত ইসলামের বিধান

গোসলের ফরজ কয়টি

রাসুলুল্লাহ (সা.) অপবিত্র দূর করার জন্য গোসল করার তাগিদ দিয়েছেন। গোসলের তিনটি ফরজ ও ছয়টি সুন্নত রয়েছে। মুমিনরা এগুলো একনিষ্ঠভাবে পালন করেন। যথাযথভাবে এসব ফরজ পালন না করলে ফরজ গোসল ঠিকমতো হয় না।

এতে গোসলকারী অপবিত্র থেকে যায়। অনেকেই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানেন না; আবার সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারেন না। ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অসংখ্য মুসলিমের নানা আমল কবুল হয় না। অথচ নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।

আল্লাহ বলেন- হে ঈমানদার গণ! নামাযের ধারে-কাছে যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বুঝো কি তোমরা বলছো, অথবা যৌন-সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ। [সূরা আন’নিসা : ৪৩]

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি  

  • গোসলের সর্বমোট ফরজ ৩ টি।
  • একবার গড়গড়া সহ কুলি করা।
  • নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পোঁছানো এবং পরিষ্কার করা।
  • সম্পূর্ণ শরীর উত্তমরূপে ধৌত করা ( যাতে কোন অংশ শুকনো না থাকে)।

গোসলের সুন্নত

  • গোসলের পূর্বে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করতে হবে।
  • ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম’  বলে গোসল শুরু করতে হবে ।
  • ওযুর মতো দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুতে হবে ।
  • প্রথমে শরীরের নাপাকি ধুয়ে ফেলা।
  • ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিনবার, মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।

ফরজ গোসলের বিস্তারিত বর্ণনা

গড়গড়াসহ কুলি করা

গোসলের প্রথম ফরজ গড়গড়াসহ কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে। গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে। তাই গড়গড়াসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাঃ ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৭ ও ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)

নাকে পানি দেওয়া

গোসলের আরেকটি ফরজ নাকের ভেতর পানি দেওয়া। এমনভাবে পানি দেয়া যাতে নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। রাসুলুল্লাহ সাঃ ও নাকে পানি দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)

সমস্ত শরীরে পানি দেওয়া

এমনভাবে গোসল করতে হবে যাতে শরীরের কোনো অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭)

গোসল কখন ফরজ হয়

পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। কারণগুলো

  • স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে কিংবা পুরুষের স্বপ্নদোষ হলে। 
  • নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
  • সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে।
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
  • কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।

গোসল কখন সুন্নত হয়

চারটি কারণে গোসল সুন্নত। কারণগুলো

  • জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। 
  • ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে গোসল করা সুন্নত। 
  • ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। 
  • হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।

পরিশেষে

প্রত্যেক মুমিনদের গোসলের ফরজ কয়টি তা জানা প্রয়োজন। কারন প্রত্যেকের জন্য ফরয গোসলের এই বিধান একই। তবে ফরজ গোসল করতে অপারগ হলে বা পানি না পেলে সেক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে তায়াম্মুমের বিধানও রয়েছে। তবে বিনা ওজরে ফরজ গোসল না করলে তার জন্য রয়েছে শাস্তি।

সুন্নত পালন করে সঠিক নিয়মে ফরজ গোসল করতে হবে। আমাদের সকলকে গোসলের ফরজ মাথায় রেখে সহি ভাবে উত্তম রূপে গোসল করতে হবে। যাতে কোনটি বাদ না পড়ে। একটি ফরজ বাদ পড়লে সহি গোসল হবে না।

আমাদের সকলের গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে ফরজ গোসল করে পবিত্র হওয়ার চেষ্টা করব। অপবিত্র অবস্থায় নামাজের সময় অতিবাহিত করা গুনাহের কাজ। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলে গোসলের ফরজ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা আপনার উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।

গোসলের ফরজ কয়টি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। গোসলের ফরজের কোন দোয়া আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, বাংলা উচ্চারণ : “নাওয়াইতুয়ান গোছলা লিরাফিল জানাবা-তি।” অর্থ : “আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”

২। গোসলের সুন্নত পালন কি জরুরী? 

উত্তরঃ হ্যাঁ, গোসল সহি ভাবে করতে হলে সুন্নত পালন করা জরুরী।

৩। ফরজ গোসলে অবহেলার শাস্তি কি? 

উত্তরঃ ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তি কবীরা গুনাহগার হবে। কবীরা গুনাহের শাস্তি আল্লাহ্‌ জানেন। তবে কিছু হাদিসে কবীরা গুনাহের শাস্তির মধ্যে জাহান্নামের আযাবের কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

ফরজ গোসল না করার শাস্তি, শরীয়তের বিধান ও নিয়ম

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে, পরিমান ও আদায়ের নিয়ম

Leave a Comment