মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়মসমুহ

মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

একজন নারীর সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে আয়রনের ভুমিকা অনেক বেশি। এই আয়রনের অভাবে মাথা ব্যাথা, দুর্বলতা, মাথা ঝিম ঝিম করা এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।

মুলত আয়রন ট্যাবলেট রক্তের আয়রনের ঘাটতি চিকিৎসা এবং খাদ্যতালিকার সম্পূরক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। এটি মনোযোগের ঘাটতি, হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার, মুখের ট্রমা, খেলাধুলা ইত্যাদি চিকিৎসায় অনেক কার্যকরী।

তাই মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকা অনেক জরুরী। কতটুকু খেতে হবে বা কখন খেতে হবে তার পরিমান ডাক্তারের কাছে জেনে নিতে হবে।

আজকের আর্টিকেলে মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাব। আশা করছি অনেকেই উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুনঃ- কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম ও সময়

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরমর্শ করতে হবে। কারণ ডাক্তার আয়রন ট্যাবলেটের সঠিক ডোজ নির্ধারণ করতে পারে। 

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়মগুলো আলোচনা করা হলো: 

১। খাবারের সাথে বা খাবোরের পরে এক বা দুইবার আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।

২। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় প্রচুর পানি খেতে হয়।

৩। অয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর কোন প্রকার অ্যালকোহল পান করা যাবে না। 

৪। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর ক্যালসিয়াম বা দুধ জাতীয় খাবার পরিহার কতে হবে। 

৫। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে। 

মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

চুলের সমস্যার সমাধান

আয়রনের সমস্যা হলে মেয়েদের বিভিন্ন রকম চুলের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ কর চুলের বৃদ্ধি জনিত সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যার সামাধানের জন্য নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। 

আমিষের অভাব পূরণ করে 

আমরা অনেকেই আমিষ কম পরিমাণ খেয়ে থাকি। যে সকল মেয়েরা আমিষ কম খেয়ে থাকেন তাদেরকে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। তবে ডাক্তারের পরমর্শ নিয়ে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। 

মেয়েদের মাসিক ওগর্ভকালীন সময়ে 

যেসকল মেয়েরা মাসিক হয় বা যারা গর্ভবতী হয় তারা আয়রনের ঘাটতির অভাব অনুভাব করে। এ জন্য তাদেরকে মাছ, পালংশাক, ডিম,দুধ ইত্যাদি খাবার খেতে হবে অথবা আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। 

শাররীক আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে

আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে বিভিন্ন প্রকার শাররীক এবং মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে। এ জন্য আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য সাপ্লিমেন্ট হিসাবে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে।  

আয়রন ট্যাবলেটের নাম

  1. Zif-CI
  2. Hemofix FZ
  3. Ipec- plus
  4. ZIF Forte
  5. Zivit Capsule
  6. Xvit Capsule
  7. Xvit Capsule
  8. Anorexia Ds plus
  9. Arubin

গর্ভাবস্থায় আয়রন এর অভাবজনিত জটিলতা

গর্ভবতী নারীদের শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হলো  গর্ভকালীন সময়ে আয়রনের ঘাটতি থাকলে গর্ভবতী মা এবং শিশুর দেহে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। 

আয়রনের অভাবজনিত কারণে গর্ভবতী মায়েদের শরীরে রক্তশূন্যতা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের শরীরে আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো: 

১। শরীরে ক্লান্তি অনুভব করা

২। শরীর দুর্বল লাগা এবং শরীরে শক্তি কমে যাওয়া

৩। অল্প পরিশ্রমে শরীর হাঁপিয়ে ওঠা

৪। বুক ধড়পড় করা

৫। ত্বক ফ্যাকশে হয়ে যাওয়া 

৬। গর্ভকালীন সময়ে শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে  শিশু ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৭। আয়রনের অভাবে গর্ভের শিশু শারিরীক গঠন ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। ফলে শিশুর জন্মের সময় এবং জন্মের পরে নানা রকমের সমস্যায় ভুগে থাকে। যেমন-

৮। প্রিম্যাচিউর অবস্থায় সন্তান জন্ম নেওয়া

৯। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হওয়া

১০। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক ও স্বাভাবিক ব্যাবহারগত আচারণ বাধাগ্রস্ত হওয়া।

১১। শিশুর শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যাওয়া।

গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত আয়রনযুক্ত খাবার খেলে মা ও শিশুর স্বাস্থ জটিলতা কমে যাবে। 

গর্ভাবস্থায় মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার মতে, একজন গর্ভবতী নারীকে প্রতিদিন ৬০ মিলিগ্রাম আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য আয়রন -ফলিক এসিড ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এই ট্যাবলেটের মধ্যে আয়রন এবং ফলিক এসিড একত্রে থাকে। এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের চাহিদা মেটায়।

ফলিক এসিড শিশুর জন্মগত ক্রটি প্রতিরোধ করে এবং শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্তের বিকাশে সাহায্য করে।  মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম 

হলো যেসকল গর্ভবতী মায়েদের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডাক্তারেরা তাদেরকে ৬০ মিলিগ্রাম আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরমর্শ দিয়ে থাকে।

কীভাবে খাবেন

আয়রন ফলিক এসিড খালি পেটে খেলে শরীরে জন্য বেশি উপকারী হয়ে থাকে।  মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম  হলো 

এই ট্যাবলেট ১ গ্লাস পানি দিয়ে  খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অথবা ২ ঘন্টা পরে এই ট্যাবলেট খেতে হয়।  তবে কমলার রস দিয়েও এই ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। 

খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট খেলে অনেকের পেটে অস্বস্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারেরা খাবার খাওয়ার পরপরিই ভরা পেটে ট্যাবলেট খাওয়ার পরমর্শ দিয়ে থাকে। 

সতর্কতা

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার পর ক্যালসিয়াম অথবা অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে আয়রন ফলিক এসিডের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। 

মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম  হলো    আয়রন ট্যাবলেট  ক্যালসিয়াম বা অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অথবা পরে খাওয়া উচিত। 

এ ছাড়াও কিছু কিছু খাবার শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় তাই এসকল খাবার পরিহার করা উচিত। এমন কিছু খাবার হলো: 

১। চা ও কফি 

২।  দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

৩। ডিম

৪। সয়াবিনযুক্ত খাবার 

কখন থেকে খাবেন 

গর্ভাবস্থার শুরু থেকে প্রসাব পরবর্তী তিন মাস সময় পর্যন্ত নিয়মিত প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। সন্তান জন্মের তিন মাস পর পর্যন্ত আয়রন ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

পরিশেষে

সাধারণত রক্তস্বল্পতা এবং রক্তে হেগ্লোবিন তৈরির জন্য ডাক্তারেরা গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। মেয়েদের গর্ভবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে এমন কোন কথা নাই।

গর্ভবতী মায়েদের আয়রনের ঘাটতি না থাকলে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারণ আয়রন ট্যাবলেট খেলে অনেক সময় হবু মায়েদের মল ও মুত্রের রং গাঢ় হয়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বমি বমি ভাব হয়। 

আয়রন ট্যাবলেট সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ

১। আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি পায়খানা কালো হয়?

উত্তর: আয়রন ট্যাবলেট খেলে মলের রং কালো হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। তবে পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের ফলেও মলের রং কালো হতে পারে।

২। আয়রন কখন খাওয়া উচিত সকালে না রাতে?

উত্তর: খালি পেটে আয়রন সবচেয়ে ভালো শোষিত হয়, কিন্তু পরিপূরক খাবার পেট খারাপ করতে পারে। পরিপূরক গ্রহণ, একটি বিভক্ত ডোজে সকাল এবং সন্ধ্যায় বা প্রতি দ্বিতীয় দিন শুরু করতে, অল্প পরিমাণে খাবারের সাথে আপনাকে এটি এড়াতে সহায়তা করতে পারে। আপনার আয়রন পরিপূরক হিসাবে একই সময়ে দুধ বা অ্যান্টাসিড গ্রহণ করবেন না।

৩। অ্যানিমিয়া হলে দিনে কতটুকু আয়রন খাওয়া উচিত?

উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতির জন্য একটি সাধারণ জেনেরিক পদ্ধতির দৈনিক ডোজ 150-200 মিলিগ্রাম মৌলিক আয়রন থাকে। এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন 3 বার একটি ফেরাস সালফেট ট্যাবলেট নির্ধারণ করা প্রয়োজন কারণ প্রতিটি ট্যাবলেটে প্রায় 60 মিলিগ্রাম এলিমেন্টাল আয়রন থাকে।

আরও পড়ুনঃ-

ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর কাজ কি ও এর গুরুত্ব

আয়রন ট্যাবলেট এর নাম ও ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment