হাতিসুরা গাছ এর ঔষধি গুণ জানলে অবাক হবেন

হাতিসুরা গাছ

হাতিসুরা গাছ সাধারণত পুরানো ভবনের কাছে বা রাস্তার পাশে অন্যান্য আগাছার মধ্যে দেখা যায়। এই গাছের বাঁকা কান্ডে সাদা ফুল ফোটে। ফুলটি হাতির দাঁতের মতো সাদা এবং গাছটি আগাছার সাথে বেড়ে ওঠে তাই এই গাছটি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লুকানো থাকে।

 প্রায় দেড় ফুট লম্বা কাণ্ড ফাঁপা নরম এবং সারা শরীরে সূক্ষ্ম লোম রয়েছে। কাণ্ডের উপরের অংশটি বর্গাকার এবং নীচের অংশটি গোলাকার। এই গাছের সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী।

এই ভেষজ উদ্ভিদ একটি ছোট বহুবর্ষজীবী গুল্ম। এই গাছটি সর্বত্র পাওয়া যায় এবং আগাছায় পরিপূর্ণ, তাই এটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লুকিয়ে থাকে। গাছটির পাতাগুলি খাস্তা এবং একে অপরের বিপরীত।

বড় পাতাগুলি বর্শার মতো দেখতে; বড় পাতাগুলি 21/2 x 2 ইঞ্চি। আঙ্গুল দিয়ে পাতা ঘষলে সুগন্ধ বের হবে।এর ফুল সাদা। পুষ্পগুলি বৃন্তের উপর দুটি সারিতে সাজানো হয় এবং দেখতে খুব সুন্দর। 

বৈজ্ঞানিক নাম

হাতিসুরা গাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম হেলিওট্রোপিয়াম ইনডিকাম Heliotropium indicum, এবং ইংরেজি নাম ‘Indian heliotrope’।

শ্রীহস্তিনী বা হাতির সুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum এবং গাছটি Boraginaceae পরিবারের অন্তর্গত। Heliotropium শব্দের অর্থ সৌন্দর্য (হেলিওস – সূর্য রূপক – অভিযোজন); এর অর্থ হল ফুলটি সূর্যের মুখোমুখি।

আধুনিক বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত এই উদ্ভিদের ঔষধি গুণাবলী অধ্যয়ন করছেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে এই গাছটি বিভিন্ন রোগের ওষুধে পরিণত হবে।

ভেষজ উপকারিতা:

হাতিসুরা গাছ এর ঔষধি গুন সম্পর্কে আমদের অনেকের কোন ধারণা নেই। এই গাছের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপকারিতা আছে। এখন আমি এই গাছের ভেষজ উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।

১) এর পাতার রস শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে কালো চাক চাক দাগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

২) পাতা এই গাছের পাতা পেস্ট করে সামান্য গরম করে ফোলা জায়গায় লাগালে ফোলা কমে যায়।

৩) জ্বর ও কাশি হলে এই ভেষজের মূল পানিতে মিশিয়ে পান করুন।

৪) বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় – জ্বলন এবং ফোলা কমাতে পাতার রস ব্যবহার করুন।

৫) আঘাতজনিত ফোলাভাব এবং ব্যথা – ফোলা কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে এই গাছের পাতা পেস্ট করে হাল্কা গরম করে ফোলা জায়গায় লাগালে ফোলা কমে যাবে।

৬) সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই গাছের পাতার রস দুই চামচ খেলে সর্দি কাশি কমে যাবে।

৭) টাইফয়েড জ্বর: এই গাছের পাতা কার্যকরভাবে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করতে পারে। এর পাতার রস গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড জ্বর ভালো হয়।

৮) একজিমা: একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিসুরা গাছ এর পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে কয়েকদিন পর একজিমা সেরে যাবে।

৯) বাতঃ পাতার রসের সাথে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে এই পাতার রস খেলে বাতের ব্যথা কমে যাবে।

১০) মাড়ির ফোলা: মাড়ির প্রদাহে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই গাছের পাতা প্রধানত মাড়ির ফোলা কমায়।

১১) কাটা: হাতিশুরের পাতা কাটা স্থানে থেঁতলে গেলে তাতে রস লাগালে কাটা সেরে যায়।

১২) ব্রণ: ব্রণ বা দাগ থাকলে  গোসলের এক ঘণ্টা আগে এই গাছের পাতা ও ডাল মেখে ব্রণের ওপর লাগালে ব্রণ সেরে যাবে এবং ব্রণ আর দেখা দেবে না। 

গাছের উপকারী অংশ

এই গাছ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সাহায্য করে। এই দেড় ফুট গাছের সে সব অংশ ঔষধ হিসাবে খাওয়া যায়। 

হাতিসুরা গাছ heliotrope

  • পাতা
  • মূল 
  • কান্ড 
  • শিকড়

শিকড় খাওয়ার নিয়ম

এই গাছের শিকড় ঔষধ হিসাবে সংগ্রহ করার আগে আপনাকে বুঝতে হবে এই গাছের বয়স কেমন। গাছটি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে দেখবেন এই গাছে ফুল ধরেছে। এবার গাছটি থেকে শিকড় সংগ্রহ করুন। শিকড় থেকে ঔষধ বানানোর জন্য চারটি উপাদান লাগে।

  • শিকড়
  • মধু
  • পান
  • কালোজিরা

এই গাছের শিকড় এক ইঞ্চি করে কেটে পানের সাথে দিয়ে খেতে হয়। কালোজিরা, মধু, এবং শিকড় পানের মধ্যে দিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম। প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম করে এই ঔষধ খেতে হবে। এই ভাবে নিয়ম করে কয়েক সপ্তাহ খেলে আপনি এই ঔষধের গুনাগুন বুঝতে পারবেন।

অপকারিতা

হাতিসুরা গাছ ঔষধ হিসাবে আমরা ব্যবহার করি। এই গাছ ঔষধ হিসাবে ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে উপকার হয়। তবে অতিরিক্ত পরিমান ব্যবহারের ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। এই গাছে এমন কিছু রাসায়নিক উপদান

রয়েছে যার ফলে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে আমাদের শরীরে টিউমার হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এই টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।

পরিশেষে

হাতিসুরা গাছ গ্রাম অঞ্চলে একটা বহুল পরিচিত গাছ। তবে এই গাছের ভেষজ উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কারোর ধারণা নেই। এই গাছের প্রায় প্রতিটা অংশ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

উপরিউক্ত আলোচনায় আমি এই গাছের ভেষজ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ 

হাতিসুরা গান সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর/FAQ

প্রশ্নঃ হাতিশুর গাছ কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তরঃ এই গাছটি সাধারণত পুরানো ভবন বা রাস্তার পাশে অন্যান্য আগাছার মধ্যে পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ হাতি সুরের গাছের শিকড় খেলে কি হয়?

উত্তরঃসর্দি-কাশিতে ভুগলে সর্দি-কাশির ওষুধ হিসেবে রস ব্যবহার করতে পারেন। একজিমার সমস্যা থাকলে আক্রান্ত স্থানে লাগালে একজিমা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ হাতিশুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কি?

 উত্তরঃ এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum, এবং এর ইংরেজি নাম হল Indian heliotrope এবং Indian Turnsole. এটি এশিয়া মহাদেশের একটি উদ্ভিদ।

Leave a Comment