অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি
কমবেশি তেল থাকেই আমাদের প্রতিদিনের খাবারে। তবে কেউ কেউ রাইস ব্রান তেল, সরিষার তেল কিংবা ঘি খান। বিশেজ্ঞদের মতে এসব তেলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অলিভ অয়েল।
প্রাচীনকালে তরল সোনা মনে করা হতো অলিভ অয়েলকে যা মূলত জলপায়ের তেল থেকে তৈর হয় এবং অনেকে রান্নায় ব্যবহার করে। তবে কিছু মানুষ সরিষা এবং সয়াবিন তেলের বদলে অলিভ অয়েল তেল ব্যাবহার করে থাকে।
কোলোরেক্টাল ক্যানসার, গলব্লাডারে সমস্যা, মাইগ্রেনে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, জরায়ু ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, আর্থারাইটিস ও হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের রোগ নিরাময়ে অলিভ অয়েল গুরুত্বপূণ্য ভূমিকা পালন করে। তাই অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি তা বলে শেষ করা যাবে না।
অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, উপকারী ফ্যাটি এসিড এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া অলিভ অয়েল প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ করার উপায়
ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি তার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য প্রমান হচ্ছে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল অনেক কার্যকারী ফল দেয়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এই তেল ব্যাবহার করা যায়। নিম্নে কিছু বিষয়ে উল্লেখ করা হল-
১। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা
আমাদের ত্বকে পানির স্বল্পতা দেখা দিলে শরীর রুক্ষ হতে শুরু করে। এই তেলের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ই। এর পামাপাশি এই তেলে ভিটামিন ডি ও কে থাকে যা ত্বককে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়। তাই এটিকে ক্রিমের সাথে মিলিয়ে বা সরাসরি ময়েশ্চার হিসাবে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
২। ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ঠিক রাখতে
কোন হালকা আঘাতে কনুই বা হাঁটুর ছিলে যাওয়া চামড়াই অলিভ ওয়েল ব্যাবহার বেশ কার্যকারী হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
এই তেলটির বিভিন্ন উপাদান ব্রনের ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিতে বাধা দেয়। অলিভ অয়েল তেল রোজাসিয়া ও সোরিয়াসিসের মতো রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
৩। মুখের সজীবতায়
আমাদের ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ায় অলিভ অয়েল। তাছাড়া এতে থাকা অলিক এসিড মুখের স্বাভাবিক উজ্জলতা বৃদ্ধি করে, মুখের ত্বককে করে তুলে আরোও নরম ও ত্বকের নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে।
৪। বয়সের ছাপ দূর করতে
মুখে ও শরীরে বয়সের ছাপ পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার অনেক সময় মানসিক চাপ, দূ্ষিত পরিবেশের ও অন্যান্য কারণেও বয়সের ছাপ পড়ে। আর অলিভ ওয়েলের মাধ্যমে এর সমাধানও পাওয়া যায়।
এই তেলে বযস্ক হওয়ার জন্য দায়ী ফ্রিরেডিকেল তৈরি হতে দেয় না। কারণ অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে পলিফেনল নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট। অলিভ অয়েল মুখকে সুরক্ষা দেয় সূর্যের আলো থেকে।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি – যেসকল রোগের ঝুঁকি কমায়
১। ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় অলিভ অয়েল তেল। অলিভ অয়েল রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। ৪১৮ জন সুস্থ ব্যক্তির উপর ক্লিনিকেল ট্রায়ালে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেছে নিয়মিত অলিভ অয়েল গ্রহণের ফলে।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও ঠেকানো যায় অলিভ অয়েলের তেল গ্রহণের ফলে। কারন এই তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্টসম্পন্ন। ফ্রির্যাডিকাল অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্রিড্যান্ট ধ্বংস করে। যা অন্যতম প্রদান চালিকাশক্তি ক্যান্সারের। ক্যান্সার কোসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জলপাইয়ের তেলের যৌগগুলো।
৩। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায়
বর্তমানে অনেক মানুষি ভুগে থাকে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসকে বলা হয়ে থাকে অটোইমিউন রোগ। আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল তেলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি তার মধ্যে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৪। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
অনিয়মিত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভাসের কারনে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয় ফাস্টফুড জাতীয় খাবার।
সয়াবিন তেল দিয়ে তৈরি করা হয় ফাস্টফুড জাতীয় খাবার। এজন্য নিয়মিত অলিভ অয়েল তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
৫। প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে
অলিভ অয়েলে থাকা উপদাদানসমূহ আমাদের শরীরে প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, হজমে সমস্যা, আলঝেইমার, র্সথূলতার সাথে লড়াই করে থাকে অলিভ অয়েলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে সাড়ে ৩ চামচ এক্রট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল।
শেষ কথা
একটি বিশেষ কার্যকারী তেল হলো অলিভ অয়েল যা ত্বকের সুরক্ষায় নিয়মিত ব্যাবহার করা যেতে পারে।তবে বিবিন্ন ধরণের ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেনসিটিভ বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে। অলিভ অয়েল নানা রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল তেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ
১। প্রতিদিন কখন অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ এক চা চামচ এবং এক টেবিল চামচ (তিন চা চামচ) অলিভ অয়েলের মধ্যে খাওয়া আপনার পেট খারাপ না করে উপকার পেতে যথেষ্ট হবে। যদিও আপনি দিনের যে কোন সময় জলপাই তেল পান করতে পারেন, অনেকে বলেন যে তারা সকালে খালি পেটে এটি করতে পছন্দ করেন।
২। অলিভ অয়েল কোনটি ভালো?
উত্তরঃ সবচেয়ে উচ্চ মানের অলিভ অয়েল হলো এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। স্যালাড ড্রেসিং হিসেবে এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। সবজি রান্না করার জন্যও এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মাখনের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও চলতে পারে এই অলিভ অয়েল।
৩। অলিভ অয়েল কতদিন খেলে রক্তচাপ কমে?
উত্তরঃ উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রেসক্রিপশন ওষুধ গ্রহণের সময় 6 মাস ধরে ডায়েটে উচ্চ পরিমাণে অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল যুক্ত করা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তচাপ উন্নত করতে পারে।
আরও পড়ুন-
কিসমিস এর উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম
বড়দের কাশির সিরাপ, কার্যকারিতা ও সেবনবিধি