ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সমুহ

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়। ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক রোগ।

অজান্তেই, ডায়াবেটিস আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, হার্ট, চোখ এবং লিভারে জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, এর ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

এমনকি আমাদের শারীরিক  অবস্থা এমন গুরুতর হয় যার ফলে একাধিক অঙ্গ অচল হতে পারে। উপরন্তু, আপনার ডায়াবেটিস থাকলে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।

এই কারণেই এই সমস্যাটির সমস্ত দিকগুলিতে সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন শরীর কম ইনসুলিন হরমোন তৈরি করে। ফলে শরীরের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না।

এতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গ্লুকোজ সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনঃ অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ও এর ব্যবহার

ডায়াবেটিস শরীরে বৃদ্ধি পাবার কারন

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

আপনি যদি প্রতিদিন অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া করেন এবং মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাবার খান তাহলে আপনার শরীরে ডায়বেটিস বাড়িয়ে দেয়।

ফলে, এই সব কারণে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রন আগে থেকেই করতে হবে। এছাড়া পরিবর্তন করতে হবে আপনার জীবনযাত্রা এবং সেই সাথে পরিবর্তন করতে হবে খাদ্যাভ্যাসও।

ডায়েটে এমন কিছু খাবার যোগ করতে  করতে হবে যা আপনার রক্তের শর্করার স্তরকে মোকাবেলা করতে সক্ষম করবে। তাই আপনি প্রতিনিয়ত ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো ফলো করবেন তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হবে।

ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া পদ্ধতি 

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। শুধু শর্করার মাত্রা কমাবেন এমনটা  নয়, আপনি এমন খাবার নির্বাচন করুন যেগুলো খেলে বয়সের চাপ ও যাতে না পড়ে।

গবেষকদের দাবি, আপনি যদি প্রোটিন এবং শাক-সব্জি আগে থেকে বেশি পরিমানে গ্রহণ করেন তাহলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের আগেই আপনার  শরীরে পৌঁছে যায় ফাইবার।

এর ফলে আপনার পরিপাকের গতি ধীর ও স্থির হয় এবং শরীরের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না বলতে গেলেই চলে।

এই নিয়ম মেনে খাবার গ্রহন করলে আপনার দেহের  হরমোনের ভারসাম্য যেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং সুন্দর থাকে আপনার ত্বকও। এর ফলে আপনার চেহারায় বয়সের ছাপ ও পড়বে না।

চর্বিযুক্ত মাছ

চর্বিযুক্ত মাছের মধ্যে রয়েছে স্যামন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর একটি বড় উৎস, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

উপরন্তু, এই মাছ নিয়মিত সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। এসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে। এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো।

শাকসবজি

প্রতিদিন নিয়মিত শাকসবজি খান। প্রয়োজনে মাছ-মাংসের পরিবর্তে সমান পরিমাণে শাকসবজি খান। তাতেও শরীর সুস্থ থাকবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ভিটামিন সি

শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি আপনার নিয়মিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। এর ফলে আপনার শরীর ও চোখ ভালো থাকবে। ভিটামিন সি ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এর মধ্যে অন্যতম।

ডিম

ডিম শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খান। এই ক্ষেত্রে, সিদ্ধ ডিম সবচেয়ে ভাল। হৃদরোগের রোগীরাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডিম খেতে পারেন।

ডুমুর

ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী। ডুমুরে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে।

গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।

মটরশুঁটি

মটরশুটি একটি খুব কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকরও বটে। এ কারণেই মটরশুটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এটি সম্পূর্ণরূপে কার্বোহাইড্রেট মুক্ত এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

টকদই

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, ওজন কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে টকদই অন্যতম। টকটই নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাবেন। ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো টকদই। 

চিয়া সিডস

চিয়া সিডসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে চিয়া সিডস। এটি নিয়মিত খেতে পারলে অনেক রকম উপকার পাবেন।

ফ্ল্যাক্সসিডস

তিসিবীজ বীজও শরীরের জন্য ভালো। নিয়মিত খেলে সুগার ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি কোলেস্টেরলের সমস্যার জন্যও দারুণ উপকারী । ফ্ল্যাক্সসিড ইনসুলিন নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে।

করলা

করলা ডায়াবেটিস কমানোর জন্য একটি ভাল ঘরোয়া প্রতিকার। করলা ইনসুলিন পেপটাইড-পি সমৃদ্ধ, যা উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করার ক্ষমতা রাখে। করলা ক্যারোটিন এবং মোমর্ডিন নামক দুটি প্রয়োজনীয় যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ যৌগ।

সপ্তাহে একবার করলা তরকারি খেলে ডায়াবেটিস কমে যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস করলার  জুস পান করুন। এটি নিয়মিত পান করলে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

আমের পাতা

আমের পাতা আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমের পাতা ব্যবহার করা যায়। তাজা আম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিত্সার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার।

আমের পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, এ এবং ট্যানিন, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক চিকিৎসায় সাহায্য করে। আমের পাতা ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করলে ডায়াবেটিস কমে।

প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় পানির সাথে এই গুঁড়ো পান করুন। এক কাপ পানিতে কিছু তাজা আম পাতা সিদ্ধ করে সারারাত ঠান্ডা হতে দিন। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মেথি

মেথি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মেথি খাওয়া হজমশক্তি হ্রাস করে, রক্তে শর্করার সঠিক শোষণের অনুমতি দেয়।

এটি টাইপ 1 এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস উভয় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে 2 চা চামচ মেথির বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি বীজযুক্ত পানি পান করুন। এছাড়াও, প্রতিদিন গরম বা ঠাণ্ডা জল বা দুধের সাথে মেথি বীজের গুঁড়ো খান।

ডায়াবেটিস গাছ গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স

“গাইনুরা প্রোকাম্বেন্স” নামের এই ঔষধি গাছটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এটি চীনে একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। “Gainura procumbens” উদ্ভিদের বোটানিক্যাল নাম, তবে ইংরেজিতে একে বলা হয় “সাবুঙ্গা” এবং চীনে বলা হয় “জিয়ান ফেং ওয়েই”।

উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুটি পাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তবে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন এবং গ্যাস্ট্রাইটিস আছে তাদের সকালে খালি পেটে ২টি পাতা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২টি পাতা খেতে হবে।

উপসংহার 

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।এমন কোন ব্যক্তি নেই যে তার ডায়াবেটিস হচ্ছে না। ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় প্রয়োগ করে ডায়বেটিস ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তবে ডায়বেটিস লক্ষন দেখা দিলে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের অবিলম্বে ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করা উচিত। নিয়মিত আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন।

নির্ধারিত হিসাবে আপনার ঔষধ গ্রহণ করুন. সারাদিন হাঁটার জন্য অন্তত এক ঘণ্টা বরাদ্দ রাখুন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়াবেটিস সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি খাওয়া উচিত? 

উত্তরঃ ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেলে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। নিয়মিত তরমুজ, বাঙ্গি এই ফলগুলো ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে খেতে পারেন। এছাড়া মিষ্টি আলু খেলে পেট ভরে এবং ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণ করে।

২। ডায়াবেটিস হলে কি ওষুধ খেতে হবে?

উত্তরঃ 

Diolin M 5 mg/500 mg Tablet

Aviglen Mf Tablet

Getrol Forte 5 Mg/500 Mg Tablet

Duotrol 5 mg/500 mg Tablet

Glucored Forte Tablet

Daonil M Tablet

আরও পড়ুন-

পাইলস এর চিকিৎসা, প্রকারভেদ ও লক্ষণ

কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে

Leave a Comment