৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলো পেটের ভিতর গর্ভবতী অবস্থায় শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া যায়। শিশুর সুস্থতা সর্ম্পকে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ্য ধারণা পাওয়া যায়।
এই নড়াচড়া একেকরকম হয়ে থাকে একেকজনের ক্ষেত্রে। তাই মোটা দাগে বলে দেওয়া কঠিন যে স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক বাচ্চার নড়াচড়ার ধরণ।
বিপদের লক্ষণ হতে পারে গর্বের শিশুর নড়াচড়ার বিশেষ ধরণের পরিবর্তন আসলে। তাই মা শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এই বিষয়ে সর্তক থাকা জরুরি।
ছয় মাসে একটি বাচ্চার পরিপূর্ণ অঙ্গ তৈরি হয়ে যায় এবং হার্টবিট পরিপূর্ণভাবে হয়ে যায় তাই এই সময় বাচ্চারা অনেক বেশি নড়াচড়া করে। এই নড়াচড়া স্বাভাবিকভাবেই হবে এবং অনেকটা জোরে হবে তাই ছয় মাস বাচ্চার নড়াচড়া অবশ্যই বাচ্চার মা বুঝতে পারে।
তবে ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে যদি হঠাৎ করে বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। আজকের আর্টিকেলে ৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃ ৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা
ষষ্ঠ মাসে শিশুর বেড়ে ওঠা

গর্ভস্থ শিশুটি ষষ্ঠ মাসে, আর ততটা ছোট থাকে না। আট থেকে বারো ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে ৬ মাস বয়স্ক ভ্রণ। এই ভ্রণের ওজন হতে পারে ৮০০ থেকে ১০০০ গ্রাম। এ সময় পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায় বাচ্চার ফুসফুস এবং অন্যান্ন আঙুলের ছাপ।
ষষ্ঠ মাসে বাচ্চার রক্ত কণিকা তৈরি শুরু হয় বোনম্যারো বা অস্থি মজ্জা থেকে। ষষ্ঠ মাসে বাচ্চার আইল্যাশ এবং আইব্রো (ভ্রু) তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। তাই বাচ্চার নড়াচড়া ,বাচ্চার হাত পা ছোড়ার হিসাব রাখতে পারেন ছয় মাসের গর্ভবতী মা যদিও ‘কিক কাউন্ট’ করা হয় না আটাশ সপ্তাহের আগে।
৬ষ্ঠ মাসের গর্ভাবস্থার সাধারণ লক্ষণ
১। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম এই পর্যায়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর উপসর্গগুলির একটি। এই একই জিনিসের কারণ ভিন্ন হয় গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের অভিজ্ঞতা হয় হরমোনগুলির পরিবর্তনের কারণে। এর ফলে হজমক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় অন্ত্রের চারপাশে পেশিগুলোর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে।
বদহজম সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভিটামিন খাওয়া যার কারণে মলকে শক্ত করে দেয়। প্রচুর পরিমাণে জল,রস ও সবরকম তরল, দই এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
২। এডেমা
গর্ভবতী মায়ের কখনও কখনোও হাত ফোলাভাব, পায়ের পাতার এবং গোড়ালি ফোলাভাব দেখা যায় শেষ ত্রৈমাসিকে প্রবেশ করতে যাওয়ার সাথে সাথে। এটি ফোলাভাব সৃষ্টি করে শিশুকে পুষ্ট এবং টিস্যুতে তরল বজায় রাখার জন্য।
তবে চোখ এবং গালের চারপাশের ফুলে ওঠা প্রিক্ল্যার্ম্পসিয়ার একটি চিহ্ন হতে পারে যা রক্তচাপকে বাড়াতে পারে। আঁটসাঁট জামাকাপড় পরা এবং পা উপরে রাখতে হবে এডেমা এড়ানোর জন্য।
৩। ক্ষুধার প্রবল ইচ্ছা এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি
এই সময় গর্ভবতী মহিলা শুধু নিজের জন্য না বাচ্চার জন্য খেতে হবে। এই সময় শরীরকে পুষ্টি ও ভিটামিন সরবারহ করতে হবে কারণ শিশুটি তার অঙ্গগুলি বিকাশ ঘটে এবং পরিপক্ক হয়।
গর্ভবতী মহিলাদের এই সময় প্রচুর পরিমাণে ক্ষুধা লাগে।৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া করে তাই এই সময় প্রচুর পরিমাণে জল এবং অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া ভালো।
৪। নাক ডাকা
গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা নাক ডাকে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে। নাক ডাকার অন্যতম একটি কারণ হলো শরীরে ওজন বৃদ্ধি যার কারণে ঘাড় এবং মাথার টিস্যুকে ষ্ফীত করে। নাসাল স্ট্রাইপ ব্যাবহার করা ভালো ঘুমানোর সময় ভালোভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য।
গর্ভাবস্থায় নাক ডাকলে রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে ডাইবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।
৫। পিঠে যন্ত্রণা
৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এবংপিঠে যন্ত্রণার সমস্যাটি গর্ভাবস্থার শুরু হলেও প্রসবের সময় পর্যন্ত চলে। গর্ভবতী নারীদের পিঠে যন্ত্রণা এবং পিঠের নিচ দিক বাঁকিয়ে দেওয়ার কারণ হলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং গর্ভাশয়ের বৃদ্ধি।
শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করতে রিল্যাক্সিন হরমোনগুলি পেলভিক পেশিীগুলোকে আলগা করে দেয় যা আবার পিঠের যন্ত্রণাকে ট্রিগার করে। বসার সময় পা উপরে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৬। পেটের এলাকায় চুলকানী
পেটের এলাকায় চুলকানী দেখা দেয় গর্ভাবস্থার ৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সময়। এ সময় চুলকানী শুরু হয় এবং ত্বক শুকিয়ে যায়। এ সময় ক্রিম এবং মলম প্রয়োগ করতে হবে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য এবং চুলকানী হ্রাস করার জন্য।
৭। ঘুমহীন রাত্রি
গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন বাথরুম যাওয়া, বুকজ্বালা, হরমোনের পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে গর্ভবতী মা প্রায়ই অনিদ্রায় থাকেন। তাছাড়া ৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া কারণে রাতের মাঝামাঝি সময় যখন বাচ্চা লাথি মারে তখন রাতে ঘুম কম হয়।
ঘুমের সমস্যা এড়ানোর জন্য রাতের খাবার খাবারের ২-৩ ঘন্টা আগে খেতে হবে, বই পড়া ,গান শোনা, উষ্ণ জলের স্নান, শ্বাস -প্রশ্বাসের যোগব্যায়াম এবং আরামদায়ক বিছানায় ঘুমাতে হবে।
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মহিলার গর্ভের বাচ্চার ছয় মাসের সময় খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এ সময় গর্ভবতী মহিলাকে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য খেতে হবে। নিম্নে ৬ মাসের বাচ্চার গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা আলোচনা করাপ হরো:
১। প্রোটিন ও আইরন সমৃদ্ধ খাবার
২। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
৩। বিশেষ করে ফোটিফাইড দুগ্ধ জাত পণ্য খেতে হবে।
৪। ফোটেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৪। শস্য বা হোম গ্রেইন জাতীয় খাবার খেতে হবে
৫। ডিম ও মুরগী
৬।মাছ
৭। শাকসবজি
৮। বাদাম ও বীজ
৯। কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি।
৬ মাসের গর্ববতী বাচ্চার ওজন
৬ মাস অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহে গর্ভবতী বাচ্চার ওজন থাকে ১.৬৮ পাউন্ড বা ৭৬০ গ্রাম এবং শিশুর উচ্চতা থাকে ১৪.০২ ইঞ্চি বা ৩৫.৬ সেন্টিমিটার। এ সময় পেয়াজ কোলের মত বা সমান লম্বা শিশুদের আকার।
বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে করণীয়
গর্ভবতী নারীর পেটের বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে যদি শিশু সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকে। ৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া গর্ভবতী মা ভালোভাবে বুঝতে পারে। বাচ্চা অনেক সময় অক্সজেনের অভাবে নড়াচড়া কম করে থাকে।
এই অবস্থায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই ডাক্তরের পরমর্শ নিতে হবে যদি পূর্বে যে সময়গুলোতে বাচ্চা নড়াচড়া করে অথবা দিনে যে কয়বার নড়াচড়া করে কিন্তু এখন যদি নড়াচড়া একবারেই না করে তাহলে।
শেষ কথা
গর্ভবতী মা প্রাথমিক ধাপ পার করে ফেলে যখন মা ষষ্ঠ মাস শেষ করে সপ্তম মাসে পা দেয়। একটি সুস্থ শিশু জেন জন্ম দিতে পারে এ জন্য গর্ভবতী নারীর শারীরিক এবং মানুষিকভাবে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া বিষয়টি মা ভালোভাবে বুঝতে পারে। এ সময় গর্ভবতী মায়ের ক্ষুধা লাগে তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ
১। ৬ মাসের বাচ্চার নড়াচড়া চেনার উপায়?
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরায়ুতে আপনার শিশুর কাছ থেকে আপনি কত লাথি অনুভব করেন তার সংখ্যা গণনা করে এটি করা হয়। গর্ভাবস্থার 20 সপ্তাহের মধ্যে, বেশিরভাগ মহিলারা তাদের শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে সক্ষম হন। আন্দোলন শক্তিতে পরিবর্তিত হয় এবং কত ঘন ঘন হয়।
২। ৬ মাসের বাচ্চার কতবার নড়াচড়া করা উচিত?
ঊত্তরঃ আপনার তৃতীয় ত্রৈমাসিক জুড়ে দিনে কয়েকবার ভ্রূণের নড়াচড়া গণনা করুন এবং হঠাৎ করে কোনো হ্রাস বা বৃদ্ধি আপনার ডাক্তারকে অবিলম্বে রিপোর্ট করুন। আপনি যদি দুই ঘন্টার মধ্যে 10টি নড়াচড়া অনুভব না করেন বা 10টি কিক, রোল, জ্যাব বা সুইশে পেতে যতটা সময় লাগে, এখনই আপনার অনুশীলনকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।
৩। শিশুর দিনে কতবার লাথি মারা উচিত?
উত্তরঃ আপনি যদি দুই ঘন্টার মধ্যে 10টি নড়াচড়া অনুভব না করেন তবে ঠিক আছে। ভ্রূণকে “জাগানোর” উপায় আছে বা ভ্রূণ আরও সক্রিয় হলে আপনি আবার চেষ্টা করতে পারেন।
আরও পড়ুন-
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
অনিয়মিত মাসিক কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসা