চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ সমূহ

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড একটি অত্যন্ত উপকারী প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। এটি মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়েছে।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের পুষ্টিগুণ সরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। চিয়া সিডের ছোট আকারের বীজ খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর।

এটি বীজের মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং স্বাস্থ্যকর ভাবে ক্ষুধা মেটায়। 

চিয়া সিডের অনেক ঔষধিগুণ আছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে প্রাচীন সভ্যতাগুলো, যেমন অ্যাজটেক এবং মায়ান, এই চিয়া সিড ব্যবহার করেছে আরোগ্য ও পুষ্টি উন্নয়নের জন্য। 

সাধারণ অসুখে এবং ক্ষুধা মেটানোর জন্য চিয়া সিড খাওয়া হয়েছিল প্রাচীন সময়ে। এখনও এই গাছের বীজ খাবারের প্রচলন অনেক বেশি এবং বিশ্বব্যাপী হয়েছে।

কারণ এর গুণাবলী মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আজকের আর্টিকেলে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ- জাফরান এর উপকারিতা, স্বাস্থ্যগুন ও ব্যবহারবিধি

খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড একটি স্বাদ ও গন্ধবিহীন খাবার। এটা রান্না করার দরকার নেই, পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খাওয়া যায়। চিয়া সিড যেভাবে খাওয়া যায়, তা আমাদের ভালো করে জানা দরকার। 

কিছু চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রথমে কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিডসহ পানীয়টি পান করতে হবে। 

চাইলে স্মুথি বানিয়ে খেতে পারবেন। টক দই, চিয়া সিড ও শসা দিয়ে স্মুথি বানিয়ে বিকেলে নাশতা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে সুপারফুডটি। 

আরো একটি পছন্দের রেসিপি হলো: ২ কাপ নারকেলের পানির সঙ্গে পছন্দের ফলের রসের সঙ্গে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ চিয়া বীজ দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে পানিও যোগ করতে পারেন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে খেয়ে নিতে হবে।

চিয়া সিড কি

চিয়া বীজ একটি উত্তেজক খাদ্য যা মূলত মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোর এলসালভাডোর অঞ্চলে উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই ছোট বীজগুলি পুষ্টিকর এবং ব্যবহারিক গুণগুলির জন্য পরিচিত। 

চিয়া বীজ ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য উপাদানগুলির ভালো উৎস। এটি স্বাস্থ্যকর হৃদরোগ,

ওজন নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন প্রতিস্থাপন, চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্য, অনুষ্ঠানিক বা উত্তেজিত সময়ে চুলের বৃদ্ধি, এবং মস্তিষ্ক স্বাস্থ্যে উপকারী হতে পারে।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ

চিয়া সিডে ১০০ গ্রামে বা ৩.৫ আউন্সে প্রায় ৪৮৬ ক্যালোরি, ৬% পানি, ৪২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩৪.৪ গ্রাম ফাইবার বা খাদ্যআঁশ, ১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০ গ্রাম চিনি, ০% গ্লুটেন, ৩০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। 

এছাড়াও, এটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ক্যাফিক অ্যাসিড নামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ ও অন্যান্য উপাদানগুলি থাকে। 

চিয়া সিডে মুরগির ডিমের থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন থাকে, দুধের থেকে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার থেকে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, এবং পালং শাকের থেকে ৩ গুণ বেশি পরিমাণে আয়রন,

কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, স্যামন মাছের থেকে ৮ গুণ অধিক পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে। এককথায় সুপারফুড হিসেবে যা যা থাকা প্রয়োজন তার সবকিছু চিয়া সিডে উপস্থিত।

চিয়া সিড কেন খাবেন

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানার পূর্বে জানতে হবে আমরা চিয়া সিড কেন খাবো?

  • চিয়া সিড ক্যান্সার রোধ করে। 
  • চিয়া বীজ রক্তের চিনি স্বাভাবিক রাখে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। 
  • এটি শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
  • হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় চিয়া সীড বিশেষ উপকারী। 
  • চিয়া সীড মলাশয় (colon) পরিষ্কার রাখে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। 
  • চিয়া সীড খেলে ডিপ্রেশন কমে এবং ভাল ঘুম আসে। 
  • এটেনশান ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার (ADHD) কে দূর করে। 
  • মানব শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। 
  • চিয়া বীজ ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে।

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: চিয়া বীজ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

৩. প্রোটিনের ভাল উৎস: বিশেষজ্ঞদের মতে, মুরগির ডিমের তুলনায় চিয়া বীজে 3 গুণ বেশি প্রোটিন থাকে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী।

৪. হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল: দুধের চেয়ে চিয়া বীজে 5 গুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং শক্তিশালী করে তোলে।

৫. ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি: গবেষকদের মতে, স্যালমন মাছের তুলনায় চিয়া বীজে 8 গুণ বেশি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

৬. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে: চিয়া বীজ রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

৭. আরও উপকারিতা:

  • গ্যাসের সমস্যা কমায়।
  • ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

চিয়া বীজ ব্যবহারের কিছু উপায়

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এর কিছু ব্যবহার রয়েছে-

  • স্মুদি, সিরিয়াল, দই, স্যালাদে যোগ করুন।
  • বেকড পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করুন।
  • চিয়া পুডিং তৈরি করুন।
  • চিয়া জল তৈরি করে পান করুন।

পরিশেষে

প্রত্যেকটি খাবারের নিয়ম আছে। ঠিক তেমনি চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। চিয়া সিড খেলে অনেক উপকারিতা রয়েছে।

তাই সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে চিয় সিড খেতে হবে। তবে ই আমরা এর উপকার বুঝতে পারব। আশা করি চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। প্রতিদিন চিয়া সিড খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? 

উত্তরঃ বীজ জাতীয় যেকোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। চিয়া সিডকে বলা হয় সুপারফুড। এতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।

২। চিয়া সিড কি ভিজিয়ে রাখতে হয়? 

উত্তরঃ খাওয়ার আগে চিয়া সিড অবশ্যই জলে ভেজানো জরুরি। হয়তো এই বীজ জলে বা দুধে ভেজালে জেলের আকার ধারণ করে। কিন্তু এভাবেই পুডিং বা স্মুদিতে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া উচিত। চিয়া সিড জলে ভেজালে যে জেল উৎপন্ন হয়, তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো ভেঙে যায়।

৩। সিয়াসিড কিভাবে খেতে হয়?

উত্তরঃ চিয়া সিড সরাসরি যে কোন ফলের স্মুদি বা জুসের সাথে পান করা যায়। শুধু পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়। চিয়া বীজের নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে এটা সব ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। বেক করা খাবার (বিস্কুট, কেক ইত্যাদি), সুপ, সালাদ ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও চিয়া সীড খাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ-

হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায় ও রোগের লক্ষণসমুহ

মেথির উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার

Leave a Comment