চিরন্তন সত্য বাণী ও সু-নির্বাচিত বাণী

চিরন্তন সত্য বাণী

চিরন্তন সত্য (universal truth) বা শাশ্বত সত্যঃ নিরবধি এবং অপরিবর্তনীয় সত্য বাস্তবতার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে।এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক সময়কাল জুড়ে প্রযোজ্য। যেমন নৈতিকতা বা নৈতিক নীতি।

যুগে যুগে অনেক মনিষী এবং দিক নির্দেষক কে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন চিরন্তন সত্য বাণী প্রচারের জন্য এবং তারা চলেও গিয়েছেন এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে।তবে তারা রেখে গেছেন  চিরন্তন সত্য বাণী।এই চিরন্তন সত্য বাণী, নৈতিকতা ও নৈতিকনীতি বা আদর্শের একমাত্র উদাহরণ হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানাবো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)এবং অন্যান্য আরও কিছু মণীষীর চিরন্তন সত্য বাণী সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান, এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ৩০টি চিরন্তন সত্য বাণী

চিরন্তন সত্য বাণীচিরন্তন সত্য বাণী choronton sotto bani
চিরন্তন সত্য বাণী

১.তুমি মুমিন হবে তখন, যখন তোমার ভালো কাজ তোমাকে আনন্দ দেবে, আর মন্দ কাজ দেবে মনোকষ্ট। (আহমাদ)

২.যে পূত পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পূত পবিত্র রাখেন। (সহীহ বুখারী)

৩. আল্লাহর অনুগত দাস আর কুফরীর মাঝে মিলন সেতু হলো সালাত ত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিম)

৪.সাওম এবং কুরআন বান্দার জন্যে সুপারিশ করবে। (বায়হাকী)

৫.যখন রমযান শুরু হয়, তখন রহমতের দুয়ার খুলে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী)

৬.আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা গোটা পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের চেয়ে উত্তম। (সহীহ বুখারী)

৭. অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা সবচেয়ে বড় জিহাদ। (তিরমিযী)

৮. যে জ্ঞানের সন্ধানে বের হয়, সে আল্লাহর পথে বের হয়। (তিরমিযী)

৯.আমার পরে সবচেয়ে বড় দানশীল সে, যে কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলো, অতপর তা ছড়িয়ে দিলো। (বায়হাকী)

১০.কুরআনকে আঁকড়ে ধরো, তাহলে কখনো বিপথগামী হবেনা। (মিশকাত)

১১. যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো, সে আমার লোক নয়। (সহীহ মুসলিম)

১২.প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের সেই ফলই পাবে,যা সে নিয়্যত করেছে।[সহীহ বুখারী)

১৩.আল্লাহ তোমাদের চেহারা সুরত ও ধনসম্পদ দেখবেননা,তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর ও কাজ [সহীহ মুসলিম)

১৪.আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। (সহীহ বুখারী)

১৫.আল্লাহকে ভয় করো, তাতেই সবচেয়ে বড় ইবাদতকারী হতে পারবে।(মিশকাত)

১৬. সে ব্যক্তি দোযখে প্রবেশ করবেনা, যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। (তিরমিযী)

১৭. শ্রেষ্ঠ আমল হলো, আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যে ঘৃণা করা। (আবু দাউদ)

১৮. দুনিয়া মুমিনের জন্যে কারাগার আর কাফিরের বেহেশত। (সহীহ মুসলিম)

১৯.দুনিয়াতে এমন ভাবে জীবন যাপন করো যেনো তুমি একজন গরীব কিংবা পথিক। (সহীহ বুখারী)

২০. অনাড়ম্বর জীবন যাপন ঈমানের অংশ। (আবু দাউদ)

২০.তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ তারা, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। (ইবনে মাজাহ)

২১. ডান হাতে খাও এবং যা নিকটে তা থেকে খাও। (সহীহ বুখারী)

২২. মুসলমান সে, যে নিজের অনিষ্টকর ভাষা ও কর্ম থেকে মুসলমানদের নিরাপদ রাখে। (সহীহ বুখারী)

২৩. মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্য করা কুফরী। (সহীহ বুখারী)

২৪.প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপর মুসলমানদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত সম্মানযোগ্য। (সহীহ মুসলিম)

২৫.মুসলমানের জন্যে মুসলমানের রক্তপাত করা এবং সম্পদ ও ইজ্জত নষ্ট করা হারাম।

২৬. মুহাজির সে,যে আল্লাহর নিষেধ করা কাজ ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী)

২৭.যে খেয়ে শোক আদায় করে, সে ধৈর্যশীল রোযাদারের সমতূল্য। (তিরমিযী)

২৮. যে কাউকেও প্রতারণা করলো সে আমার লোক নয়। (সহীহ মুসলিম)

২৯. সাবধান! তোমরা হিংসা করা থেকে আত্মরক্ষা করো। (আবু দাউদ)

৩০. তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করোনা, ঘৃণা বিদ্বেষ কারো না এবং পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়োনা। (সহীহ মুসলিম)

উপরে উল্লেখিত মনিষী বা দিক নির্দেষক ছাড়াও আরও অনেক মণীষী রয়েছেন যারা যুগে যুগে মানুষের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে চিরন্তন সত্য বাণী রেখে গেছেন।চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের চিরন্তন সত্য বাণী সমূহ।

অন্যান্য মণীষীদের চিরন্তন সত্য বাণী সমূহ

১) অনুমান ও কুধারণা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা অনুমান হলো বড় মিথ্যা কথা।

_হযরত মোহাম্মদ সাঃ

2) অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায় ।

_শেক্সপিয়র

৩) অনেক কিছু ফিরে আসে, ফিরিয়ে আনা যায়, কিন্তু সময়কে ফিরিয়ে আনা যায় না

_আবুল ফজল

৪) মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যেই ব্যবহারটা করে সেটাই তার আসল চরিত্র।

_রেদোয়ান মাসুদ

৫) অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা ভালো।

_হোমার

৬) অসহায়কে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, কারণ মানুষ মাত্রেই জীবনের কোন না কোন সময় অসহায়তার শিকার হবে ।

_গোল্ড স্মিথ

৭) শক্তিশালী সে , যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

_হযরত মোহাম্মদ সাঃ

৮) যে ব্যক্তি একজন মুসলমানের দোষ গোপন করবে , আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন।

_হযরত মোহাম্মদ সাঃ

৯) প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার পার্থক্য হলো দুঃখ। তাই নিজের প্রত্যাশাটা একটু কমিয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার দুঃখও কমে গেছে।

_রেদোয়ান মাসুদ

১০) কিছু কিছু মানুষ সত্যি খুব অসহায়। তাদের ভালোলাগা মন্দলাগা, ব্যথা বেদনা গুলো বলার মত কেউ থাকে না। তাদের কিছু অবাক্ত কথা মনের গভীরেই রয়ে যায়, আর কিছু কিছু স্মৃতি – এক সময় পরিনত হয় দীর্ঘশ্বাসে।

_হুমায়ূন আহমেদ

১১) আমার বন্ধুর জন্যে সবচেয়ে বেশি যা করতে পারি তা হলে শুধু বন্ধু হয়ে থাকা। তাকে দেয়ার মতো কোন সম্পদ আমার নেই। সে যদি জানে যে আমি তাকে ভালবেসেই সুখী, সে আর কোন পুরস্কারই চাইবে না। এক্ষেত্রে বন্ধুত্ব কি স্বর্গীয় নয়।

_হেনরি ডেভিড থিওরো

১২) আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। তারপর সেই মানুষকে ভয় পাই যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না।

_শেখ সাদী

১৩) কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চাও? তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখো। কারণ প্রেম একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু বন্ধুত্ব কোনদিন হারায় না

_উইলিয়াম শেক্সপিয়র

১৪) মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে |

_কাজী নজরুল ইসলাম

১৫)মিথ্যার দাপট ক্ষণস্থায়ী সত্যর দাপট চিরস্থায়ী।

_হজরত সোলাইমান(আঃ)

১৬) আমি ব্যর্থতা কে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা।

_মাইকেল জর্ডান

১৭) স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।

_এ পি জে আব্দুল কালাম

১৮) এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না , যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।

_আইনস্টাইন

১৯) উচ্চাশা যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই শান্তির শুরু হয়

_ইয়ং

২০) একজন আহত ব্যক্তি তার যন্ত্রনা যত সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত ব্যক্তি তত সহজে অপমান ভোলে না ।

_জর্জ লিললো

২১) একজন ঘুমন্ত মানুষ আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারেনা।

_শেখ সাদী

২২) একজন বিশ্বস্ত বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান

_ইউরিপিদিস [গ্রীক নাট্যকার]

২৩) একজন মহান ব্যক্তির মহত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে।

_কার্লাইল

২৪) কারো ভুল হয়তো সংশোধন করা যায় কিন্তু কারো স্বভাব পরিবর্তন করা যায় না। তাই কারো স্বভাব পরিবর্তন করতে গিয়ে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে বরং সেখান থেকে সরে আসাটাই হলো প্রকৃত ব্যক্তিত্বের পরিচয়।

-রেদোয়ান মাসুদ

২৫) পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।

_হুমায়ূন আহমেদ

২৬) কখনো কোন বন্ধুকে আঘাত করো না, এমনকি ঠাট্টা করেও না।

_সিসেরো

২৭) কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয়

_শেখ সাদী।

২৮) কথা-বার্তায় ক্রোধের পরিমান খাবারের লবণের মত হওয়া উচিত। পরিমিত হলে রুচিকর, অপরিমিত হলে ক্ষতিকর।

_প্লেটো

২৯) কেউ সম্পূর্ণ আপনার মতো হবে না একইভাবে আপনিও কারো মতো হবেন না, দুজনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকবেই আর এই পার্থক্যটুকুই হলো ধৈর্য্য।

– রেদোয়ান মাসুদ

৩০) কারো অতীত জেনোনা, বর্তমানকে জানো এবং সে জানাই যথার্থ ।

_এডিসন

পরিশেষে

চিরন্তন সত্য বাণী মানুষকে বাস্তবতা শিক্ষা দেয়। মানুষের মনকে জাগ্রত করে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়। তাই প্রতিটি মানুষের উচিৎ চিরন্তন সত্য বাণী পড়া এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের মনকে গড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা। মানুষ অনেক কিছু বুঝে বা জানে কিন্তু মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবে সেই মানুষগুলো যদি বই পড়ে বা গুণীজনের বাণী বা উক্তি পড়ে তাহলে তার ভিতরকে জাগ্রত করে যা তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। শুধু  চিরন্তন সত্য বাণী  বা উক্তি পড়লেই যে সাফল্য পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়, বিখ্যাত লেখক, মণীষীদের বাণী পড়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।তাহলেই জীবনে সফলতা আসতে পারে।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে মণীষী বা দিক নির্দেষকদের রেখে যাওয়া বিভিন্ন বাণী সম্পর্কে জানালাম।আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে।ভালো লেগে থাকলে এবং এর মাধ্যমে উপকৃত হলে এটি অবশ্যই আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেননা আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুনঃ-

আর্টিকেল লেখার নিয়ম, আর্টিকেলের ধরন ও প্রয়োজন

রবিতে এমবি চেক করার কোড সমুহ ও ব্যবহারের নিয়ম

Leave a Comment