চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়,এর মধ্যে চর্মরোগ অন্যতম।চর্মরোগ একটি সাধারণ রোগ। চর্মরোগ সাধারণত আমাদের ত্বকে হয়ে থাকে।বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে চর্মরোগ দেখা যায়। শরীরে ময়লা এবং ঘাম ইত্যাদি থেকে
চর্মরোগ হয়। সাধারণত গরমকালে চর্মরোগ বেশি দেখা যায়।এসময় শরীরে ঘাম হয়,এই ঘাম থেকে খোঁশ পঁচড়া রোগ হয়ে থাকে। চর্মরোগ হলো ছোঁয়াচে রোগ। আমাদের সকলের
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। নিয়মিত গোসল করা এবং ত্বকের সঠিক পরিচর্চা করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।এসব রোগ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ-
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
যেকোনো ধরনের চর্মরোগ হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই । ত্বকে চর্ম রোগের প্রাথমিক কোনো উসর্গ দেখা দিলে আপনি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।নিচে চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় উল্লেখ করা হলো:-
১। নিয়মিত গোসল: অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং ময়লার কারণে চর্ম রোগ হয়ে থাকে। চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসল করলে শরীরের ময়লা দূর হয়।শীতকালে কুসুম গরম পানি গোসলে ব্যবহার করলে ভালো হয়। তবে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।
২। সূর্যের রশ্নি থেকে দূরে থাকুন: সূর্যের রশ্নি ত্বকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সূর্যের রশ্নির কারণে বলিরেখা, কালোদাগ, রিংকেল ইত্যাদি প্রভাব ফেলে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নির কারণে অনেক সময় স্কিন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
৩। ব্রণ প্রতিরোধ: চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো ত্বকে যদি ব্রণ হয়ে থাকে তবে মুলতানি মাটি ব্যবহার করেও ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন । এছাড়াও বেনযোইল লোশন ব্যবহার করতে পারেন।আমাদের মধ্যে
অনেকেই আছেন যারা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে মেকআপ ব্যবহার করেন।পরবর্তীতে মেকআপ ভালো করে না তুলে ঘুমিয়ে পড়েন ।এটি করা মোটেও উচিৎ নয় ।ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেকআপ উঠাতে হবে।
৪। এনজাইম প্রতিরোধ: চর্ম রোগের প্রতিরোধে অবশ্যই ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সুগন্ধীযুক্ত লোশন এবং ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না।
৫। স্বাস্থ্যকর খাবার: একটি স্বাস্থকর ডায়েট চর্মরোগ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো নিয়মিত সবজি, প্রচুর পরিমাণ ফল এবং ভিটামিন সি এবং লো ফ্যাট যুক্ত খাবার বেশ কার্যকারী।
৬। তুলসী: তুলসীর হাজারো গুণ রয়েছে। শরীরে লাল ছোপ, পোড়া, নানা ধরণের ক্ষত ইত্যাদি সমস্যায় তুলসীপাতা বেটে রস লাগাতে হবে।
৭। নিম: নিমের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকার। চুলকানী বা ত্বকের লাল ছোপ ইত্যাদি কমাতে নিমের পাতা বিশেষ কাজ করে।
৮। অলিভ অয়েল: শুষ্ক ত্বকে অনেক রকম সমস্যা হয়ে থাকে।তাই ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখা অত্যন্ত জরুরি ।ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
৯। বেকিং সোডা: অনেকেই হয়তো জানেননা বেকিং সোডা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে।আক্রান্ত জায়গায় বেকিং সোডা লাগাতে পারবেন। এতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমে যাবে এবং খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সর্ম্পকে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
খোঁশ পঁচড়া: খোঁশ পঁচড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি গামছা, বিছানা, ব্যবহৃত পোশাক ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। এই রোগ হলে শরীর খুব চুলকায়। পঁচড়া হলে শরীরে ছোট ছোট লাল ফুঁসকুড়ি উঠতে থাকে। এ রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
পায়ের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে ঘাঁ : এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। পায়ের আঙ্গুলের ভেতরে পানি জমে থাকার জন্য এ রোগ হয়ে থাকে। এ ধরণের রোগ সাধারণত মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে। এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পা কোন অবস্থাতেই ভিজা বা স্যাতস্যাতে স্থানে রাখা যাবে না।
ব্রণ: ত্বকের মধ্যে লালচে যে গোটা হয় তাকে ব্রণ বলা হয়। লোমকূপ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন আমাদের শরীরে ব্রণ সৃষ্টি হয়। ব্রণ হলে অনেকে তা হাত দিয়ে চাপাচাপি করে এর কারনে ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাই ব্রণ হলে সে স্থানে হাত দেওয়া যাবে না। ব্রণে কখনোও সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
দাদ: বর্ষাকালে বগলের নিচে, পায়ের পাতা এবং ঘাড়ে গোল চাকার মতো লালচে ক্ষতস্থান সৃষ্টি হতে পারে এটাকে দাদ বলা হয়। দাদ হলে ক্ষতস্থানে চুলকায়।চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো দাদ হলে ক্ষতস্থানে কাটাছেঁড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
একজীমা ও টিনিয়া :ত্বকে চুলকানি হওয়া, ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বকে জ্বালা এগুলো সবই একজীমার লক্ষণ। টিনিয়া ক্যাপিটিস রোগের কারণে শরীরে চর্মরোগ হয়ে থাকে।
রোসেসিয়া:রোসেসিয়া হচ্ছে একটি চর্মরোগ যা আমাদের ত্বকের চামড়াকে পাতলা করে দেয়। এর ফলে মুখে লালচে দাগ দেখা যায়। এ রোগের কারণে চোখে সমস্যা হয়ে থাকে।
বলি রেখা: বয়সের সাথে সাথে আমাদের মুখের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়।বয়সজনিত কারণে মুখের মধ্যে এক রকম ছাপ দেখা যায় একে বলা হয় বলি রেখা।
আমবাত:আমবাত রোগটি সাধারণত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। যাদের শরীরে এলার্জি হয়ে থাকে তারা এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। আমবাত হলে শরীর চুলকায় এবং লাল লাল গোটা উঠে।
চর্মরোগ কেন হয়?
চর্মরোগ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। চর্মরোগের কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১। ত্বক অপরিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে।
২। শরীরে পুড়ে ক্ষত হলে
৩। ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হলে।
৪। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে
৫। যেসকল খাদ্য এলার্জি আছে তা খেলে
৬। পোকামাকড়ের কামড়েও চর্মরোগ হয়ে থাকে।
৭। গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন রকম চর্মরোগ হয়ে থাকে।
৮। বিভিন্ন বয়সজনিত কারণে চমর্রোগ হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত চর্মরোগ:
কিছু কিছু চর্মরোগ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। শরীরে যদি পোকায় কাটে অথবা শরীরে যদি কাটা ছেঁড়া থাকে তাহলে তারমধ্যে দিয়ে ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। দুই থেকে ছয় বছর বয়সী ছোট বাচ্চারা এ রোগে
বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যাকটেরিয়াই আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করতে হবে।
শেষকথা:
এই পোষ্টে চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং চর্মরোগ সর্ম্পকে নানা বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই পোষ্টটি পড়ে চর্ম রোগ হওয়ার কারণ এবং চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জানতে পেরেছেন। চর্মরোগ হলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
চর্মরোগ প্রতিকারের জন্য অনেকে অনেক রকম প্রচেষ্টা করেও সফল হয় নি। অনেকে বিভিন্ন রকম ঔষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করেও ভালো ফল পায়না ,তারা তুলসী, নিম, অলিভ অয়েল, বেকিং সোডা ইত্যাদি ঘরোয়া উপায়ে চেষ্টা করে ভালো ফল পেতে পারেন।
আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেননা।ধৈর্য্য সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ
১। চর্মরোগের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?
উত্তর: কর্টিকোস্টেরয়েড হল প্রধান সাময়িক ওষুধ যা ত্বকের প্রদাহ (ফোলা, চুলকানি এবং লালভাব) উপশম করতে ব্যবহৃত হয়।
২। চর্মরোগ হলে কি কি খাওয়া নিষেধ?
উত্তর:চিনি,অতিরিক্ত ঝাল টমেটো,মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া নিষেধ।
৩। ত্বক চুলকানির জন্য কোন ঔষধ ভালো?উত্তর: নন-প্রেসক্রিপশন কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিমের স্বল্পমেয়াদী ব্যবহার চুলকানি, স্ফীত ত্বকের স্বল্পমেয়াদী উপশম দিতে পারে।