কাঁচা আমের উপকারিতা
আমরা সারাবছর প্রতীক্ষা করে থাকি আমের জন্য।আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম আছে। তীব্র গরমে কাঁচা আমের স্বাদ আমাদের স্বস্তি দিয়ে থাকে। কাঁচা আমের চাটনি, শরবত,আম দিয়ে ডাল, ভর্তা, পান্না ইত্যাদি তৈরি
করে খাওয়া যায়। কাঁচা আম গরমের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতেও সাহায্য করে। কাঁচা আমের শরবত খেলে শরীরে এনে দেয় প্রশান্তি। অনেকে আমকে বলে থাকে ফলের রাজা কারণ আমের মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আমের মধ্যে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন, ডায়েটারি, ফাইবার এবং ক্যারেটিনয়েড। কাঁচা আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কাঁচা আমের উপকারিতা
কাঁচা আম শরীরের জন্য উপকারী। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে কাঁচা আমের শরবত খেতে অনেকেই পছন্দ করে। কেউ কেউ সরাসরি কিংবা চাটনীতেও কাঁচা আম খেতে পছন্দ করে।আমের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম জাতীয় উপাাদান রয়েছে
যা আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখে। ১০০ গ্রাম আমের মধ্যে পটাশিয়ামের পরিমাণ থাকে ৪৪ ক্যালরি। এছাড়া ভিটামিন সি থাকে ৫৪ মি.গ্রাম. এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকে ২৭ মি,গ্রাম। । আম যে সকল উপকার করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১। পেটের সমস্যা কমাতে: বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অ্যাসিডিটি কমাতে বেশ উপকারী কাঁচা আম।কাঁচা আম চিবিয়ে খেলে পিত্তরস বৃদ্ধি পাই। এতে যকৃতির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:কাঁচা আমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি ও একাধিক অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট ।এই উপাদানগুলো শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৩। ঝিমুনি দূর করে:গরমে অনেক সময় ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। কাঁচা আম হলো শক্তিবর্ধক একটি ফল।কাঁচা আমের উপকারিতা হলো কাঁচা আম খেলে ঝিমুনি দূর হয়।
৪। অম্লতা দূর করে কাঁচা আম: কাঁচা আমের উপকারিতা হলো কাঁচা আম অম্লতার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৫। সকালের বমি বমি ভাব দূর করে: অনেকের সকালবেলায় বমি বমি ভাব লাগে। অন্ত:সত্ত্বা যারা তারা এ সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।কাঁচা আম খেলে সকালের বমি বমি ভাব দূর করে।
৬। হজমের উন্নতি ঘটায়:কাঁচা আমে থাকা অ্যামােইলেস নামে পরিচিত পাঁচক এনজাইম আছে যা খাদ্যের অণুগুলিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে যাতে সেগুলো দ্রুত শোষণ করা যায়। কাঁচা আমে জল এবং ফাইবার থাকার কারণে তা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো হজম সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৭। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:কাঁচা আম খাদ্য হজমে সাহায্য করে। কাঁচা আম কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার করে। কাঁচা আমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হলো কাঁচা আম কুঁচি করে কেটে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৮। শরীরের লবণের ঘাটতি দূর করে: গরমে ঘামের কারণে আমাদের শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লৌহ জাতীয় উপাদান বের হয়ে যায়। কাঁচা আমের জুঁস শরীরের এই ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

কাঁচা আমের উপকারিতা
৯। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ:কাঁচা আম খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। কাঁচা আম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকারী হয়ে থাকে।
১০। স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া রোধ করে: কাঁচা আম আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবারহ করে। কাঁচা আম স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া কমায়। আমচুর স্কার্ভি নিরাময়ে অত্যান্ত কার্যকারী। কাঁচা আম দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং মাড়ির দুর্গন্ধ রোধে সহায়তা করে।
১১। শরীর ঠান্ডা থাকে: তীব্র গরমের কারণে শরীর ঠান্ডা রাখা মুশকিল হয়। কাঁচা আম নিয়মিত খেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। কাঁচা আম আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। কাঁচা আমে থাকা পটাশিয়াম শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে ঘামের পরিমাণ কম হয় এবং গরমের ক্লান্তিও দূর হয়।
১২। চুল ও ত্বক উজ্জল রাখে: কাঁচা আমের উপকারিতা হলো কাঁচা আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুল এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১৩। হজম ভালো হয়: কাঁচা আমে গ্যালিক অ্যাসিড প্রক্রিয়ার কারণে হজম-প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে সাহায্য করে।
১৪। ঘামাচি দূর করে: গরমের সময় আমরা ঘামাচির সমস্যায় ভুগে থাকি। কাঁচা আম এ সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। কাঁচা আমের কিছু উপাদান ঘাঁমাচি প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। তবে কাঁচা আম অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। উপকার হবে বলে কোন খাবার অধিক পরিমাণ খাওয়া উচিত নয়।
১৫। ওজন কমাতে সাহায্য করে: কাঁচা আমের উপকারিতা অনেক এর মধ্যে একটি হলো কাঁচা আম শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। পাকা আমের চাইতে কাঁচা আম শরীরের কমাতে বেশি কার্যকারী হয়ে থোকে। কাঁচা আম
খাদ্য হজমে সাহায্য করে থাকে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার করে। অ্যাসিডিটি ও বদ হজমের সমস্যা কমাতে কাঁচা আম বেশ কার্যকারী হয়ে থাকে।
১৬। রক্তের সমস্যা দূর করে: কাঁচা আমের মধ্যে রয়েছে লৌহ বা আইরন যা আমাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।তাই সকলের উচিত নিয়মিত পরিমাণমত কাঁচা আম খাওয়া।
১৭। দাঁতের জন্য উপকারী: কাঁচা আম মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ এবং নি:শ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে। কাঁচা আম দাঁতের গহ্বরের ঝুঁকি কমায়। কাঁচা আম খেলে দাঁত শক্ত এবং পরিষ্কার থাকে।
১৮। লিভার ভালো রাখে: কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা আম পিত্ত অ্যাসিডের নি:স্বরণকে উদ্দীপিত করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে পরিষ্কার করে।
১৯। হার্ট সুস্থ রাখে: কাঁচা আমে থাকা প্রয়োজনীয় ফাইবার এবং ভিটামিন বি নিয়াসিন হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়।
২০। চোখের সমস্যা: কাঁচা আমের মধ্যে রয়েছে লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের রেটিনার জন্য খুব উপকারী। কাঁচা আমে থাকা ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শেষকথা
কাঁচা আমের উপকারিতা অনেক । তবে অতিরিক্ত কাঁচা আম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। কাঁচা আমের আঠা মুখে লাগলে মুখে সংক্রামণ হতে পারে। তাই পরিমাণমত কাঁচা আম খেতে হবে। কাঁচা আমে চিনির পরিমাণ কম
থাকে।কাঁচা আম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা আম খেতে পারে।এই আর্টিকেল থেকে আপনারা সহজেই জানতে পেরেছেন কাঁচা আমের পুষ্টি ও গুণাগুণ , কাঁচা আমের উপকারিতা এবং
কাঁচা আম খাওয়ার নিয়ম সর্ম্পকে। আজকের আর্টিকেল আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ধৈর্য্য সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কাঁচা আমের উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর/FAQ
১।খালি পেটে কাঁচা আম খেলে কি হয়?
উত্তর:ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ – কাঁচা আমের মধ্যে ভিটামিন এ,ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে। এগুলি ত্বকের পাশাপাশি চোখ ও চুলের জন্য় উপকারী। এছাড়াও, কাঁচা আমে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে।খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে কাঁচা আম।
২। কাঁচা আমে কি কি ভিটামিন আছে?
উত্তর: ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁচা আম নানাভাবে শরীরের উপকার করে। এসব উপাদান আমাদের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।ফলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন,তাদের জন্য উপকারী একটি ফল হতে পারে কাঁচা আম।
৩।অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে কি হয়?
উত্তর: দিনে একাধিক কাঁচা আম খেলে বদহজম, আমাশয়, গলাতে জ্বালা ও পেটে সমস্যা হতে পারে। আবার প্রতিদিন অত্যাধিক কাঁচা আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। মনে রাখবেন, সবুজ আম খাওয়ার পর জল পান করবেন না। এতে বুক জ্বালা হতে পারে।