চুল গজানোর তেলের নাম ও গুরুত্বপূর্ণ টিপস

চুল গজানোর তেলের নাম

চুল পড়ার সমস্যায় কম বেশি অনেকেই ভুগেছেন। কখনও চুল পড়ার সমস্যা এতটাই বেীশ হয়ে যায় যে, দুশ্চিন্তা হতে থাকে। আর এই শীতকাল আসতেই বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম হতে থাকে। এই সময়ে তার প্রভাব আমাদের স্ক্যাল্পে পড়ে।

স্ক্যাল্প রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত চুল উঠতে থাকে বা চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে যায়। পরিবেশগত কারণেও যেমন চুল পড়ে আবার চুলের অযত্নের ফলে চুলের ক্ষতির অনিবার্য। 

ঠিকঠাক যত্ন না নিলে দূষণে চুলের মরাত্মক ক্ষতি হয়। চুল দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে চুল পড়ে যায় তাড়াতাড়ি। তাই পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনা করেই আমাদের চুলের যত্ন করতে হবে। 

চুল উঠে যদি মাথা ফাঁকা হয়ে যায়, তবে জেনে রাখা দরকার চুল গজানোর তেলের নাম? সত্যিই এমন কয়েকটি তেল আছে, যা স্ক্যাল্পে পুষ্টির জোগান দেয় ও চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। 

আজকের আর্টিকেলে চুল গজানোর তেলের নাম, চুল পড়ার সমস্য, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ- কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না, খাদ্যাভ্যাস ও রুটিন

চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে কখন সতর্ক হবেন

চুল গজানোর তেলের নাম chul gojanor teler nam
চুল গজানোর তেলের নাম

চুল গজানোর তেলের নাম জানতে গেলে বিষেজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন ৫০-১০০টা পর্যন্ত চুল পড়া একদম স্বাভাবিক। কোন দিন সামান্য বেশি পরিমাণে চুল পড়তে পারে। 

ধুলো বালি লাগলে বা দূষণের ফলে চুল পড়া বেশি হতে পারে। তবে তা স্থায়ীত্ব সাময়িক হবে। আবার সমস্যা পুরোপুরিভাবে সমাধান হয়ে যেতে পারে। 

কারও ৫০টা চুলও ওঠে না সারাদিনে। তবে আপনি যদি নিম্নলিখিত কয়েকটি উপসর্গ লক্ষ্য করেন, তবে আপনাকে অব্যশই সতর্ক হতে হবে।

  • মাথার সামনের দিকের সাথে স্ক্যাল্পেরও চুলের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
  • ভুরুর চুল কিংবা চোখের পাতা, সবখানেই কম বেশি চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
  • স্ক্যাল্প ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে।

কয়েকটি তেলের নাম

নিচে কয়েকটি অর্গানিক চুল গজানোর তেলের নাম উল্লেখ করা হলো-

ক্যাস্টর অয়েল

চুল গজানোর তেলের নাম এর মধ্যে প্রথমেই ক্যাস্টর অয়েল। চুল ভালো রাখতে এই ক্যাস্টর অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী। চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির জোগান দিয়ে থাকে ক্যাস্টর অয়েল। 

ক্যাস্টর অয়েল প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই চুল নরম রাখতে সাহায্য়তা করে থাকে এই তেল। আপনিও চাইলে এই ক্যাস্টর অয়েল অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন।

নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। সেটি স্ক্যাল্পে ও চুলের গোড়ায় লাগিয়ে সঠিক ভাবে ধীরে ধীরে মালিশ করে নিতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে সমস্ত চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সাথে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।

নারকেল তেল

চুল গজানোর তেলের নাম এর মধ্যে পরেরে স্থান নারকেল তেল। যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুল ভালো রাখতে এই নারকেল তেলে  অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে থাকে। 

তাই নিয়মিত নারকেল তেল মাথায় মালিশ করলে দ্রুত খুব ভালো ফল পাবেন। এর মধ্য়ে থাকা ফ্যাটি চেন চুলে আর্দ্রতার জোগান দিতে দ্রুত কার্যকারী। 

রুক্ষ ও শুষ্ক চুলকে পুনরায় আর্দ্র করে সজাগ করে তোলে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন প্রকাশিত করা প্রবন্ধে এই কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে নিতে হবে। অতিরিক্ত তেল কখনও মাখা যাবে না। চুলের গোড়ায় ও স্ক্যাল্পে ভালো ভাবে মালিশ করে নিতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করে নিতে মোটেও ভুলবেন না।

আমন্ড অয়েল

চুল গজানোর তেলের নাম বলতে গেলেই এই তেলের নাম বলতেই হবে। চুল তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়েছে? ডগাগুলো যেন ঝারুর শলার মতো দেখাচ্ছে? মাথায় হাত দিলেই চুল উঠে আসছে? অতিরিক্ত অযত্ন ও আর্দ্রতার অভাবে চুলের ক্ষতি হচ্ছে। ডগা চেরা চুল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই।

এই সময়ে আপনাকে কার্যকারীভাবে সাহায্য করবে আমন্ড অয়েল। আমন্ড অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ থাকে। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে থাকে এবং ক্ষতিগ্রস্থ চুল সারিয়ে চুলের সাস্থ্য সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।

অলিভ অয়েল

একাধিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, অলিভ তেল স্ক্যাল্পে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন বাইন্ড করে না। এই কারণেও চুল পড়া বাড়তে পারে। এটি আপনার চুলের পড়া কমায়। এছাড়াও এটি নতুন চুলের উন্নতি করে। 

চুলের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। চুল প্রচুরভাবে জেল্লাদার থাকে। যদি আপনার চুলে অত্যন্ত শুকনো সমস্যা থাকে তবে অলিভ তেল আপনার সাহায্য করতে পারে। 

কারণ, এটিতে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। এটা আপনার স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার রাখে। খুব সহজেই শুকনো হতে দেয় না। এছাড়াও, এর ময়শ্চারাইজিং উপাদান নতুন চুল উন্নতি করতেও সাহায্য করে।

রোজমেরি অয়েল

ক্ষতিগ্রস্ত চুলের যত্ন নেয় রোজমেরি তেল। একসঙ্গেই খুশকির সমস্যা যাঁদের রয়েছে, এই তেলে সমাধান আছে তারও। এই তেলের রোজমেরিক এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন সচল রাখে। ফলে চুল ঝরার পরিমাণ অনেকে কমে। সেই সঙ্গে চুল লম্বাও। নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে চুলে মাখতে পারেন। উপকার পাবেন।

পেঁয়াজের তেল

চুলের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান লুকিয়ে রয়েছে এই তেলে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বি, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল উপাদান, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপকারী সব উপাদান। এগুলি চুলে পুষ্টি জোগায়। চুল লম্বা হতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ তেলের নিয়মিত ব্যবহারে চুল কম পড়ে। চুল মসৃণ হয়। ধৈর্য ধরে ব্যবহার করতে পারলে লম্বা চুলের স্বপ্নও সত্যি হবে।

ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু হেয়ার মাস্ক

১. এক চা চামচ মধু, দুই চা চামচ কাস্টর তেল এবং একটি ডিম ভালো মতো মিশিয়ে চুলে ভালো মতো লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি আপনার নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের উজ্জলতা বাড়িয়ে একে নরম করবে।

২. সমান পরিমাণ কাস্টর তেল, তিলের তেল এবং অলিভ অয়েল ভালো মতো মিশিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালো মতো লাগিয়ে গরম তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি একটি খুবই কার্যকর হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে যা চুল এবং স্ক্যাল্পকে খুব ভালো ভাবে কন্ডিশন্ড করে থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

টিপস

১. চুল গজানোর তেলের নাম এর সাথে কিছু চুল গজানোর তেল ব্যবহারের টিপস।

২.যদি কাস্টর তেল অন্য কোনো তেলের সাথে না মিশিয়ে মাথায় লাগাতে চান, তবে খুব সামন্য পরিমাণ তেল নিতে হবে এবং শুধু স্ক্যাল্পে লাগাতে হবে। কারণ কাস্টর তেল খুব ঘন হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ চুলে লাগালে পরে ওঠানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

৩. রাতে কাস্টর তেল মাথায় দিয়ে ঘুমালে হেয়ার ক্যাপ অথবা তোয়ালে মাথায় পেঁচিয়ে নিন যাতে বালিশে দাগ না লাগে অথবা বালিশে একটি কাপড় পেঁচিয়ে নিন।

৪. চোখের পাপড়ি ঘন করতে চাইলেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন কাস্টর তেল। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে কটন বাড্স বা তুলার সাহায্যে ব্রু বা পাপড়িতে লাগাবেন তেলটি। সকালে ধুয়ে ফেলবেন। এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

পরিশেষে

বিভিন্ন কারণে আমাদের ঝরতে পারে। আমাদের আবহাওয়া জনিত কারণে, পানি সমস্যার কারণে। যে কোন কারণে আমাদের চুল ঝরতে পারে। তবে স্বাবাভিকভাবে দূষিত হওয়ার কারণে আমাদের চূল ৫০-১০০ টি ঝরতে পারে।

বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অব্যশই বিষেজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে চুলের চিকিৎসা করতে হবে। আশা করি চুল গজানোর তেলের নাম সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। 

চুল গজানোর তেলের নাম সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। চুল গজানোর ভালো তেল কোনটি?

উত্তরঃ ভিটামিন এ এবং ই সমৃদ্ধ জলপাই তেল নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই, ডি-র মতো উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ কাঠবাদাম তেল নতুন চুল গজাতে দারুণ সাহায্য করে। হঠাৎ যদি খুব বেশি পরিমাণে চুল উঠতে থাকে, তাহলে দেরি না করে কাঠবাদাম তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। উপকার পেতে পারেন।

২। নতুন চুল গজানোর ঔষধ কি?

উত্তরঃ মিনোক্সিডিল (Minoxidil) প্রাথমিকভাবে চুলের বৃদ্ধি এবং পুরুষদের মধ্যে টাকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি মাথার ত্বকের সামনের অংশে চুল পড়া এবং টাক পড়ার ক্ষতি করে না। এই ওষুধের প্রায় ২ শতাংশ মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেসব মহিলাদের চুল পাতলা হওয়ার সমস্যা আছে।

৩। চুল ঘন ও গজানোর জন্য নারকেল তেল কিভাবে ব্যবহার করবেন?

উত্তরঃ নারকেল তেল সমানভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিতরণ করতে একটি চওড়া দাঁতযুক্ত চিরুনি ব্যবহার করুন। এটি প্রায় 30 মিনিটের জন্য বা এমনকি রাতারাতি রেখে দিন, অবশেষে এটি একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । আপনার যদি শুষ্ক চুল থাকে, তাহলে নারকেল তেলের সাথে গরম করা অলিভ অয়েলের মিশ্রণ চুলের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনঃ-

প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা

নাভি কেমন হলে ছেলে হয়, সঠিক ধারনা ও তথ্যসমুহ

Leave a Comment