ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
ডায়াবেটিস শরীরের একটি গুরুতর অবস্থা যার ফলে শরীরে ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে যায়। আমাদের শরীর যখন ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হয় না বা ইনসুলিন ব্যাবহারে অকার্যকর হয়ে যায় তখন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
যে খাবার আমরা খায় তাতে গ্লুকোজ আকারে শক্তি থাকে। এই গ্লুকোজ রক্ত দ্বারা শোষিত হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে নিয়ে যায়। রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে পেপটাইড হরমোন তৈরি হয় যা ‘ইনসুলিন’ নামে পরিচিত। ইনসুলিন হল সেই চাবিকাঠি যা রক্তের চিনিকে শরীরের কোষে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়।
যখন কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, দুটি সম্ভাব্য কারণের একটি কারণ হতে পারে – শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম না বা যে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে তা গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা সম্ভব না। প্রথম প্রকারটি টাইপ 1 ডায়াবেটিস নামে পরিচিত, যেখানে দ্বিতীয়টি টাইপ 2 ডায়াবেটিস হিসাবে পরিচিত।
আজকের আর্টিকেলে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃ- মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম ও ব্যবহার
{ez-toc]
ডায়াবেটিস এর উপসর্গ

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- অতিরিক্ত জ্বালানি বা প্রতিদিনের অস্বাভাবিক জ্বালানির অনুভব।
- অতিরিক্ত ক্ষার দ্রবণ বা প্রতিদিনের অস্বাভাবিক ব্যথা।
- অতিরিক্ত ক্ষুধা অথবা বারবার পেটে খাওয়ার ক্ষুধা অনুভব।
- প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
- অস্বাভাবিক অবস্থানে অন্যের তুলনায় আরাম পানির প্রচুর প্রচুর মূত্র বা অন্যান্য মূত্র সংশ্লিষ্ট সমস্যা।
- চোখে অতিরিক্ত জ্বালানি, দুর্বল দৃষ্টি, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন এবং অনুভূত চোখের অনুভব।
- কাঁচা ত্বক, অতিরিক্ত প্রস্রাব, চার্মিক সমস্যা এবং রোগান্বিত বা নিম্ন মোড়ায় গায়ের সমস্যা।
- অন্যদিকে, অন্যান্য অসুস্থ লক্ষণ সম্পন্ন ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি উচ্চ।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলি
ডায়াবেটিস হলো একটি জনপ্রিয় স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে উদ্ভব হতে পারে। ডায়াবেটিস এর লক্ষণ জানার সাথে ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে।
- উচ্চ রক্তচাপ এবং চর্বির পরিমাণ: উচ্চ রক্তচাপ এবং অতিরিক্ত শরীরের মধ্যে চর্বির পরিমাণ ডায়াবেটিসের মূল কারণ হতে পারে।
- পরিবারের ইতিহাস: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হলো পরিবারের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অংশের উপস্থিতি।
- মহাশয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান: মহাশয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান যেসব খাবার সাধারণত খাওয়া উচিত না সেগুলি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শারীরিক অভ্যন্তরের ওজন: অতিরিক্ত শারীরিক অভ্যন্তরের ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- অল্পাঙ্ক শক্তি: অল্পাঙ্ক শক্তি বা অনিয়মিত শক্তির নিয়ের মাত্রায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- মহাশয়ের অল্পাঙ্ক প্রয়োগ: মহাশয়ের অল্পাঙ্ক প্রয়োগ করা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ধূমপান এবং মদ্যপান: ধূমপান এবং মদ্যপানের অতিরিক্ত ব্যবহার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এই কারণগুলির মধ্যে অন্যান্য মানদণ্ড সম্মিলিত থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুসরণ করে এই ঝুঁকি কমানো যায়।
ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ জানার সাথে সাথে জটিলতা গুলি জানতে হবে। ডায়াবেটিস একটি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যা ব্যক্তির জীবনে বিভিন্ন জটিলতা উত্পন্ন করতে পারে। কিছু প্রধান জটিলতার মধ্যে নিম্নলিখিত রয়েছে:
- কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলির ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন হার্ট অ্যাটাক, দিলের সমস্যা, ওজন প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
- নিতান্তিক হানিমুন প্রতিক্রিয়া: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিতান্তিক হানিমুন প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা ত্বকের সমস্যাগুলি, ক্যাটারাক্ট, জঠিলতা ইত্যাদির জন্য কারণ হতে পারে।
- নিতান্তিক কিডনি সমস্যা: ডায়াবেটিস কিডনি সমস্যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির হতে পারে, যা ডায়ালিসিস বা কিডনি ফেইলারের প্রয়োজন প্রদান করতে পারে।
- চোখের জটিলতা: ডায়াবেটিস চোখে জটিলতা উত্পন্ন করতে পারে, যা পালপের সমস্যা, নেত্রদলের সমস্যা, দৃষ্টিশক্তির কমতি ইত্যাদির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
- স্ত্রীর গর্ভাবস্থা ও জনন জটিলতা: মেয়েদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া সমস্যার মধ্যে গর্ভাবস্থার সমস্যা, জনন অসুখ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার উপায়
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বোঝা গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য কিছু করণীয় নিম্নরূপ:
- স্বাস্থ্যকর খাবার সিদ্ধান্ত: প্রায় খাবারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যালান্সড ডায়েট, যাতে উচ্চ ফাইবার, কম চর্বি এবং শক্তি সাপ্লাই করা হয়, খাওয়া উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, যেমন হাঁটা, রানিং, যোগাসন ইত্যাদি।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন নিয়ন্ত্রণে ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যকর ও সঠিক ওজন বজায় রাখা জরুরি।
- নিয়মিত যোগাযোগ: নিয়মিত সাধারণ যোগাযোগ সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত, যেমন পরিবার, বন্ধু ইত্যাদির সঙ্গে সময় কাটানো।
- নিয়মিত চেকআপ: নিয়মিত চেকআপ এবং চিকিত্সার পরামর্শ পাওয়া উচিত ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য।
- পরিমিত মিষ্টি খাবার: মিষ্টি ও ব্যঙ্গারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি।
- প্রতিরোধশীল আহার: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রাণীজাত চর্বির এবং কোলেস্ট্রল মত প্রতিরোধশীল আহার গ্রাহ্য করা উচিত।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কি
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বুঝতে পারলে চিকিসৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বিভিন্ন উপায়ে সম্পন্ন করা হতে পারে।
চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রক্ত শর্করা স্তর নিয়ন্ত্রণ করা এবং মূল্যবান জীবনযাপনের প্রতিবেদন করা।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সাধারণ উপায় নিম্নলিখিত:
- খাদ্য পরিবর্তন: খাদ্যের নিয়মিত পরিবর্তন করা হলে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং ফাইবারের সঠিক অনুপাতের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
- ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
- ঔষধ ব্যবহার: ডায়াবেটিসের মাধ্যমে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রকারের ঔষধ ব্যবহার করা হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের খাওয়ার পরিবর্তন করা হতে পারে।
- নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ ও অনুপাত: ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজ নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে
ডায়াবেটিস সহজে বোঝা যায় না কিছু কিছু ডায়াবেটিস এর লক্ষণ দ্বারা প্রকাশ পায়। ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ। অনেক জটিলতা দেখা দেয় যার ফলে শরীরের যে কোন অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস এর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হবে। আশা করি ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। বেশি বেশি চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়?
উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিক্যাল নিউজ টুডে’তে বলা হয়েছে, প্রচুর চিনি খাওয়ার কারণে সরাসরি ডায়াবেটিস হয় না। কিন্তু এটি স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ফলে ওই ব্যক্তি সহজেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
২। কত পয়েন্ট ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন নিতে হয়?
উত্তরঃ মোল/লি এর বেশি পাওয়া যায়, তাহলে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়। কিন্তু এই মাত্রার গ্লুকোজ থাকলেই রোগীকে ইনসুলিন গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে না। ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি ১৬ দশমিক ৭ মিলি. মোল/লি এর উপরে চলে যায়, তখন রোগীকে সাধারণত কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
৩। ডায়াবেটিসে কতটুকু সুগার খাওয়া যাবে?
উত্তরঃ এটি 2000-ক্যালোরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে প্রতিদিন প্রায় 50 গ্রাম (12 চা চামচ) বিনামূল্যে শর্করার ব্যবহার । চিনি মিষ্টি পানীয় (SSB) খাওয়া সীমিত করুন এবং তাদের জায়গায় জল পান করুন। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ খাদ্য গ্রহণের প্রচার করুন এবং সারা জীবন বিনামূল্যে শর্করার গ্রহণ কমিয়ে দিন।
৪। ডায়াবেটিস কী?
উত্তরঃ ডায়াবেটিস-এর অপর নাম হচ্ছে মধুমেহ। এই মধুমেহ রোগটি সর্বত্রই দেখা যায়। খুব কম মানুষ আছেন যারা এই রোগে আক্রান্ত হন না। তবে এই রোগটি মানুষের জীবনে একেক রকমভাবে প্রভাব ফেলে থাকে এবং নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৫। তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর খাবার?
উত্তরঃ কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার লোকেদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে বা পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে গোটা শস্য, বাদাম, শিম, কিছু ফল, অ-স্টার্চি শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন।
আরও পড়ুনঃ-
৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ, ও প্রচলিত ধারনা