দাউদ কিভাবে ভালো হয় এর ঘরোয়া উপায় কি কি

দাউদ কিভাবে ভালো হয়

দাউদ এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ রোগ। দাউদের ইংরেজি নাম রিং ওয়ার্ম। এই রোগ সাধারণ ছোঁয়াচে। আর্দ্র পরিবেশে এই রোগের বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হয়। এটি শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে।

 শরীরের যে অংশে দাউদ হয় সেই অংশ লালচে গোলাকার হয়ে ফুলে উঠে এবং আক্রান্ত স্থান প্রচন্ড পরিমাণে চুলকায়।

এই সংক্রমক ব্যাধি খুব সহজে একজনের শরীর থেকে আর একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দাউদ হলে ত্বকের উপরে লালচে গোলাকার দাগের সৃষ্টি হয়। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেই সম্পর্কে।

শরীরের কোন কোন স্থানে দাউদ রোগ হয়

দাউদ কিভাবে ভালো হয় daud kivabe valo hoi

দাউদ একজন মানুষের শরীরে যে কোন জায়গায় হতে পারে। যে স্থান দাউদ হয় সেখানে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। দাউদ একজন ব্যক্তির শরীরে কোথায় হয় সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

  • মাথার ত্বকে বা চুলের নিচে দাউদ দেখা যায়।
  • দাড়িতে দাউদ দেখ যায়।
  • কুঁচকি এবং শরীরের যে স্থানে ভাজ থাকে সেখানে দাউদ দেখা যায়।
  • পিঠে, পেটে দাউদ হয়।
  • পায়ের তলায় এবং এবং পায়ের পাতায় দাউদ হয়।
  • নখেও দাউদ হতে পারে।

দাউদ রোগের লক্ষণ

সাধারণ দাউদ হলে আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার ফলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের শরীরে দাউদ হয়েছে। লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এই রোগ দূরীকরণের চেষ্টা করতে হবে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের জানতে হবে দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেই সম্পর্কে। 

  • দাউদ হলে সাধারণত ত্বকের উপরে গোলাকার ক্ষত সৃষ্টি করে। 
  • ক্ষত কখনও কখনও খুশকির মতো হয়।
  • যদি আপনার মাথায় দাউদ হয় তাহলে আক্রান্ত স্থান থেকে চুল পড়ে যেতে পারে।
  • কোমর অথবা ভাঁজের চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়।
  • নখের উপরে দাউদ হলে  নখ অস্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়।
  • দাউদ হলে আক্রান্ত স্থানে অতিরিক্ত চুলকায় এবং সেই স্থান থেকে কষ পড়তে পারে।

সংক্রমণের কারণ

দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেটা জানার পাশাপাশি আমাদের জানতে হবে এই রোগের সংক্রমণের কারণগুলো সম্পর্কে। দাউদ  সাধারণত বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। দাউদ যে সকল কারণে হতে পারে সে বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

  • স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এবং শরীর অতিরিক্ত ঘামের কারণে দাউদ হয়। 
  • অপরিষ্কার এবং অপরিচ্ছন্ন থাকলে দাউদ হয়।
  • নিয়মিত জামাকাপড় পরিষ্কার না করে সেই জামাকাপড় পরলে দাউদ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
  • অন্যের ব্যবহার করা উপকরণ যেমন চিরুনী, গামছা, তোয়ালে এবং বিছানার চাদর ব্যবহার করার ফলে দাউদ হয়।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম তাদেরও দাউদ হতে পারে।

দাউদ রোগ কিভাবে ছড়ায়

যদি একজন ব্যক্তির দাউদ হয় তাহলে এই রোগ সহজেই অন্যদের হতে পারে। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগের কারণে হতে পারে। তাছাড়া, এই রোগ কোন ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিস থেকেও আসতে পারে।

এই রোগ সাধারণ ছড়াতে পারে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির গামছা ব্যবহার করলে এবং একই বিছানা ভাগ করে নেওয়ার কারণে। এছাড়া অন্য ব্যবহৃত জামাকাপড় পরিধান করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে। তবে ঘনবসতি এলাকায় দাউদ রোগ বেশি ছড়ায়। 

দাউদ ভালো করার ওষুধ

দাদের ঔষধ গ্রহণ করার পরেও খুব ধীরে ধীরে কাজ করে।তাই এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে চার – পাঁচ মাস দাউদের ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। দাদ চিকিত্সার জন্য উপযুক্ত ঔষধ অক্সিফান লোশন, ফাঙ্গিট্যাক ক্রিম, লিউলিজল  ক্রিম,ক্লোট্রিমাজোল ক্রিম,ফাঙ্গিডাল ক্রিম। নতুন করে অ্যাবারকোনাজোল ক্রিম এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

এই ক্রিমটি চার মাস ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও, আপনি যাদের সাথে থাকেন, শিশু হোক বা দম্পতি, সবার সাবান ব্যবহার করা উচিত। বাজারে কিটোকোনাজল এবং লুলিকোনাজল সাবান পাওয়া যায় এই সাবান আপনার শরীরে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

যে ব্যক্তির শরীরে দাদ আক্রান্ত হয়  তার উচিৎ হবে গোসলের করার ১৫ মিনিট আগে অবশ্যই সম্পূর্ণ শরীরে কেটোকোনাজল শ্যাম্পু লাগানো।শ্যাম্পু লাগানোর ৩০ মিনিট পরে গোসল করতে হবে।

শীতকালে সপ্তাহে তিনবার এটি করতে পারেন। তবে দাউদ সারতে অনেক সময় লাগে, অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে।আপনি যদি এই নিয়ম মেনে না চলেন তাহলে  আপনাকে ঘন ঘন আপনার ওষুধ পরিবর্তন করতে হতে পারে।

 আপনার ডাক্তার আপনাকে আরও শক্তিশালী ওষুধ দেবেন, তারপর ও আপনার দাউদ ভাল হবে না এবং আপনার আরও সমস্যা হবে। তাই ধৈর্য্য ধরে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে দাউদ থেকে মুক্তি পাবেন।

দাউদ ভালো করার ঘরোয়া উপায়

দাউদ আক্রান্ত হলে আধুনিক ওষুধের সাহায্যে দাদ নিরাময় করা থেকে প্রথমে বিরতি থাকতে হবে। দাউদ কিভাবে ভালো হয় তার গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেওয়া। চলুন তাহলে আলোচনা করা যাক ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাউদ হতে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো কি।

পেঁপে

দাদ এর প্রাদুর্ভাব রোধ করতে আপনি যদি নিয়মিত পেঁপে ব্যবহার করেন তবে আপনি প্রচুর উপকার পাবেন। আসলে এই ফলের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এক্ষেত্রে পেঁপের একটি ছোট টুকরো নিয়ে দাউদের উপর লাগান। তারপরে 15 মিনিট অপেক্ষা করুন এবং গরম জল দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে দাউদ কমে যাবে।

নিম পাতার তেল

এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে নিমের তেল নিয়ে

দাউদের উপর বারবার নিয়মিত লাগাতে হবে। তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে দাউদের সমস্যা কমতে থাকবে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে নিম তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলেও দারুণ উপকার পাওয়া যায়।

হলুদ

এতে প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এই ধরনের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে প্রথমে সামান্যপানি দিয়ে হলুদ পেস্ট করে নিবেন। তারপর এই পেস্ট নিয়ে যেখানে দাউদ আছে সেখানে লাগান এবং

হালকাভাবে লাগাতে থাকুন। যাইহোক, আপনি যদি এটি দিনে কমপক্ষে 3 বার করেন তবে আপনি লক্ষ্য করবেন যে রোগটি সেরে উঠতে শুরু করে।

রসুন

এতে রয়েছে অ্যাজুইনা নামক একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান, যা যেকোনো ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ কমাতে দারুণ কার্যকর। তাই দাউদ  রোগের জন্যও এই উপাদানটি খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন।

 তারপর সেগুলোকে দাউদের উপরে রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখুন। সারা রাত এই ভাবে রাখলে দারুণ ফলাফল দেখতে পাবেন। প্রসঙ্গত, রসুনের কোয়ার পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। দাউদ কিভাবে ভালো হয় ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে রসুন অন্যতম।

অ্যালোভেরা

এই প্রাকৃতিক উপাদানটি শুধু ত্বকের সৌন্দর্যই বাড়ায় না ছত্রাকের সংক্রমণের মতো রোগের প্রকোপও কমায়। এক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরা পাতা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জেল সংগ্রহ করে সরাসরি ত্বকে লাগান।

 সারারাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এই ঘরোয়া উপায়টি প্রতিদিন করলে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

নারকেল তেল

এই প্রাকৃতিক তেল ব্রণ কমাতেও বেশ উপকারী। আসলে এই তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এই ধরনের চর্মরোগের চিকিৎসায় বিশেষ প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে সামান্য নারকেল তেল মাখিয়ে শুয়ে পড়ুন।

 সকালে উঠে আক্রন্ত স্থান ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন করলেই ফল দেখতে পাবেন। দাউদ কিভাবে ভালো হয় এই চিকিৎসার মধ্যে নারিকেল তেল অন্যতম।

ভিনগার আর লবণ

সামান্য ভিনেগার ও লবণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর পেস্টটি দাদটিতে লাগান এবং কমপক্ষে পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন। প্রতিদিন এটি করুন, সাত দিনের মধ্যে রোগ সেরে যাবে।

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার

প্রথমে একটি ছোট পাত্রে কিছু আপেল সিডার ভিনেগার নিন। তারপর তাতে তুলা ভিজিয়ে সেই তুলা দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করুন। এভাবে দিনে কয়েকবার করলে দেখবেন সমস্যাগুলো কমতে শুরু করেছে।

সরষে বীজ

দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেটা বলতে গেলে সরষে বীজের বিকল্প কিছু হতেই পারে না। কিছু সরিষা নিয়ে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পরে সরিষা দানাগুলো পেস্ট করুন এবং এই পেস্ট কিছুদিন ক্ষত স্থানে লাগাতে থাকলে অবশ্যই দাউদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পরামর্শ

প্রথমত, রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের উপর ভিত্তি করে, নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। তবে দাউদ এমন একটা রোগ যা রেজিস্ট্যান্স চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

 রোগীদের জন্য আমাদের পরামর্শ হল অন্যের ব্যবহার করা উপকরণ অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত। পরিষ্কার থাকতে হবে এবং নিয়মিত করতে হবে। অন্য লোকের জামাকাপড় এবং তোয়ালে ব্যবহার করবেন না।

প্রতিরোধের উপায়

সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা উচিত। শরীরে যাতে অতিরিক্ত ঘাম না হয় এই জন্য খোলামেলা পরিবেশ এবং যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করবেন।

 এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত ঘাম জমলে সাথে সাথে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলবেন। অন্যের ব্যবহার জিনিস পত্র ব্যবহার করবেন না এবং চেষ্টা করবেন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার।

পরিশেষে

দাউদ এক ধরনের চর্মরোগ। ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারণে এই রোগ সাধারণ হয়। দাউদ এমন একটা ভয়ানক রোগ একবার হলে সহজে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়না। আজ আমি আলোচনা করেছি দাউদ কিভাবে ভালো হয় এই সম্পর্কে।

 উপরিউক্ত আর্টিকেল থেকে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ 

দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেই সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর/FAQ

প্রশ্নঃ দাউদ রোগের জন্য দায়ী কোনটি?

উত্তরঃ দাদ (ইংরেজি: Dermatophytosis) একটি সংক্রামক চর্মরোগ। তবে “Ringworm” ও “Tinea” নামেও এই রোগ পরিচিত। এর রোগের  কারণ কোন “worm” বা ক্রিমি নয়। এর কারণ ত্বকের উপরিভাগের দিকে (superficially) এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ।

প্রশ্নঃ দাউদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যায?

উত্তরঃ 1. আক্রান্ত স্থানে সাবান ব্যবহার করবেন না। 2. আন্ডারওয়্যারটি প্রতিদিন ধুতে হবে, আন্ডারওয়্যার খোলার পরে, জায়গাটি সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

প্রশ্নঃ দাউদের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?

উত্তরঃ আক্রান্ত স্থান সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখা উচিত। একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টিফাঙ্গাল লোশন, ক্রিম বা মলম যেমন ক্লোট্রিমাজল (লোট্রিমিন এএফ) বা টেরবিনাফাইন (ল্যামিসিল এটি) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

Leave a Comment