গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ
গরমে অতিরিক্ত শরীর ঘামার কারণে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয় এটিও গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ । অনেকে ঘন ঘন পানি পান করলেও কিছু সময়ের জন্য রেহাই মিলছে কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার
একই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই সমস্যায় ভুগতে থাকলে বুঝতে হবে নিশ্চিত এর পিছনে কোন কারণ আছে। আজকাল গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ অনেকের দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, গলা শুকিয়ে যাওয়াকে বলে জিরোস্টোমিয়া। এই ধরনের সমস্যা হলে মুখের ভেতরে লালা শুকিয়ে যায়। কোন কোন সময় এটি ভয়ংকর রুপ ধারণ করে ফলে আমাদের খাবার খেতেও
অনেক কষ্ট হয়। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে।
কেন গলা শুকিয়ে যায়
বিভিন্ন ধরনের কারণে আমাদের গলা শুকিয়ে যেতে পারে। ঠিক গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ গুলো কি সেগুলো আমাদের আগে খুঁজে বার করতে হবে। চলুন, তাহলে আলোচনা করা যাকে কেন আমাদের গলা শুকিয়ে যেতে পারে।
ওষুধের কারণে
কিছু ওষুধ সেবন করার ফলে গলা শুষ্ক হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ব্যথানাশক এবং পেশী শিথিল করার ওষুধ গ্রহণের ফলে গলা শুকিয়ে যেতে পারে।
অতএব, আপনি যদি এই ওষুধগুলি গ্রহণ করার পরে শুষ্ক গলা অনুভব করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া
আমাদের অনেকেরই ঘুমের সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস আছে। এটি গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা। ঘুমানোর আগে এই অভ্যাস থাকলে তা অবিলম্বে ত্যাগ করার চেষ্টা
করুন। তা না হলে পরবর্তীতে বড় সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি এই অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই একজন প্রফেশনাল চিকিৎসকের সাথে এই বিষয় নিয়ে পরামর্শ করবেন।
ধূমপানের অভ্যাস
ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে – যারা ধূমপান করেন তারা প্রত্যেকে এটা জানেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে ধূমপানের ফলে মুখের লালার পরিমাণ কমে যায়। ফলস্বরূপ, আমাদের গলা শুকানোর মতো সমস্যা তৈরি হয়।
ডেন্টাল জার্নালের-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় 39 শতাংশ ধূমপায়ী এই সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেও শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে যার ফলে আপনার গলা শুকিয়েও দিতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করা উচিত।
শরীরে পানির ঘাটতি
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ
একজন মানুষের রোজ যতটুকু পানি পান করার দরকার সেই পরিমাণ পানি আমরা পান করিনা। ফলে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে পানির অভাব দেখ দিলে গলা শুকিয়ে যায়। পানির ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত তাহলে আর গলা শুকিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবেনা।
ডায়াবেটিস থাকলে
যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তাদের গলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে সমস্ত ঔষধ খাওয়া হয় তার ফলেও গলা শুকিয়ে যেতে পারে।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে থাকলে অবশ্যই একজন প্রফেশনাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ গুলো কি সেটা জানতে হলে অবশ্যই গলা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো জানা জরুরী। নিম্নে গলা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো আলোচনা করা হলো।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে উপসর্গ গুলো দেখা যায়। সেগুলো হলো-
- মুখের মধ্যে আঠালো ও শুষ্ক অনুভূতি হওয়া।
- বারবার পানির পিপাসা পাওয়া।
- মুখের মধ্যে ফুসকরি ওঠা।
- ঠোঁটে ফাটল দেখা দেওয়া।
- শুষ্ক, লাল, আঁচড় কাটা জিহ্বা হওয়া।
- কথা বলার সময়, খাবার খেতে ও খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।
- নাকের ছিদ্রের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যাওয়া।
- নিঃশ্বাসে গন্ধ অনুভূত হওয়া।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন প্রতিকার
আপনার লালা গ্রন্থি থেকে লালা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শুষ্ক গলার সমাধান করার জন্য আপনি কিছু করতে পারেন। গলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিকার গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- আপনার মুখকে আর্দ্র রাখার জন্য প্রচুর পানি পরিমানে পান করা উচিত।
- চিনিমুক্ত লজেঞ্জ, ক্যান্ডি বা চুইংগাম খাওয়া যেতে পারে।
- ফাস্ট ফুড কম খাওয়া উচিত।
- যখনই সম্ভব আপনার মুখ দিয়ে শ্বাস না দিয়ে আপনি অবশ্যই নাক দিয়ে শ্বাস নিবেন।
- লালার বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম লালা বা ওরাল জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- বেডরুমের বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াতে ইনডোর ভ্যাপারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
- খাদ্যতালিকায় প্রচুর পানিতে দ্রবণীয় তাজা মৌসুমি ফল ও শাকসবজি থাকা উচিত।
- অপ্রয়োজনীয় বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও ছায়ায় হাঁটতে হবে এবং ছাতা আপনার সাথে বহন করতে হবে।
- উপবাসের সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা কোনো কঠোর ব্যায়ামে না জড়ানোই ভালো।
- রমজান মাসে, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা বা সীমিত খাওয়া উচিত।
- শুকনো খাবার যেমন কুকিজ, টোস্ট, আলুর চিপস ইত্যাদির পরিবর্তে আর্দ্র, চিবানো এবং নরম খাবার খাওয়া উচিত।
- গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ঘামের সাথে বার হয়ে যাওয়া পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য রাখতে ডাবের পানি, লেবুর শরবত এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।
- অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার এবং ভাজাপোড়া খাওয়া পরিহার করা উচিত।
- আপনার শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিবে এমন কাজ করা থেকে সবসময় দূরত্ব রেখে চলা উচিত।
পরিশেষে
সাধারণত মুখের ভিতরে স্বাভাবিক আদ্রতা না থাকার ফলে গলা শুকিয়ে যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করার ফলেও গলা শুকাতে পারে। গলা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে একজন মানুষকে বিড়ম্বনাকর সমস্যায় ভুগতে হয়।
তবে এই ধরনের সমস্যা অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আজ আমি আলোচনা করেছি গলা গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে। উপরিউক্ত আর্টিকেল থেকে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আর যদি কোন মতামত থাকে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর/FAQ
প্রশ্নঃ সর্দি হলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ কি?
উত্তরঃ অ্যালার্জি জনিত জ্বর (এটিকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসও বলা হয়) যখন হয় তখন আপনার শরীর শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে এমন কণাগুলির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা শ্লেষ্মা উৎপাদন বাড়ায় এবং আপনার অনুনাসিক অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রতিক্রিয়ার কারণে আপনি শুষ্ক গলা সহ বিভিন্ন উপসর্গ অনুভব করতে পারেন।
প্রশ্নঃ গলা শুকিয়ে গেলে কি খেতে হবে?
উত্তরঃ গলা শুকিয়ে গেলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে যাতে মুখ আর্দ্র থাকে। চিনিমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।
প্রশ্নঃ শ্বাস নিতে গেলে গলা শুকিয়ে যায় কেন?
উত্তরঃ শুষ্ক গলা প্রায়ই ঠান্ডা, ডিহাইড্রেশন বা মুখ খোলা রেখে ঘুমানোর লক্ষণ, বিশেষ করে শীতকালে। কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে উষ্ণ তরল পান করা, যেমন ঝোল বা গরম চা ইত্যাদি। যদি লক্ষণগুলি অব্যাহত থাকে বা এক সপ্তাহ পরে খারাপ হয়, তাহলে অবশ্যই একজন প্রফেশনাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।