মেথি খাওয়ার নিয়ম
সুস্থ থাকতে কে না চায়! আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই। সুস্থ থাকার জন্য প্রাকৃতিক থেকে পাওয়া উপাদান যদি থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই।
আপনার শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত মেথি বা মেথির গুঁড়ো খেতে পারেন। মেথির বৈজ্ঞানিক নাম “Trigonella foenum-graecum”।
মেথি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। স্বাদে তিক্ত হলেও এর বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির মধ্যে রয়েছে B1, B2, C, niacin।
নিয়াসিন এছাড়াও এটি আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়ামের উৎস। মেথি নিয়মিত সেবনে শরীরে চর্বির মাত্রা কমে যায় এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করা যায়।
আজ আমরা আলোচনা করব মেথি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে।
আরও পড়ুনঃ-কোলেস্টেরল কমানোর উপায় ও খাবার তালিকা
মেথি গুঁড়ো খাওয়ার নিয়ম

গুঁড়ো মেথি খাওয়ার নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- প্রত্যেকদিন সকালে এক ক্লাস বিশুদ্ধ পানিনে কিছু সময় গুঁড়ো মেথি ভিজিয়ে রাখবেন তারপর সেই পানি খালি পেটে পান করবেন। এছাড়া আপনি চাইলে রোজ সকালে শুধু গুড়োমেথি চিবিয়েও খেতে পারেন।
- আপনি চাইলে লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- মেথিগুড়ো করে তরকারি, স্যুপ, সালাদ এবং মাছ রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মেথির গুঁড়োর সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি গরম জলের সাথে হলুদ মিশিয়েও উপকার পেতে পারেন।
- নিয়মিত চায়ের পরিবর্তে মেথির গুঁড়া চা ব্যবহার করতে পারেন।
- যারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন তাদের জন্য মেথি খাওয়ার কিছুটা নিয়ম মেনে চলতে হয়। ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যই ঔষধ খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে বা পরে মেথি খাওয়া উচিত।
- মেথি খাওয়ার নিয়ম হলো এক চামচ মেথি এক কাপ গরম পানিতে 10 মিনিট আগে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য আপনি লেবুর রস এবং মধু যোগ করতে পারেন।
- একটি বড় পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি নিন এবং সেই পানিতে দুই চামচ মেথি গুঁড়ো অথবা মেথি দানা দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন তারপর এই পানি সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজ খালি পেটে পান করুন।
মেথির পুষ্টিগুণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেথিতে রয়েছে ভিটামিন কে, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ এবং বি৬। খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে তামা, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম।
মেথি খাওয়ার উপকারিতা
১. মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকরভাবে শরীরের হজমের সমস্যা দূর করে। মেথি দানা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে রাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে মেথি। এটি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি উন্নত করে।
৩. মেথিতে প্রোটিন এবং নিকোটিনের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি খুশকি, টাক পড়া, চুল পড়া এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৪. আপনার চুল সুস্থ রাখতে মেথি ব্যবহার করা খুবই জনপ্রিয়। এটি চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। জলে মেথি বীজ সিদ্ধ করুন এবং ঠান্ডা হওয়ার পরে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করতেও এই পানি কার্যকর।
৫. মেথিতে রয়েছে এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার, যা কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সাহায্য করে। রোজ সকালে খালি পেটে মেথি দানা ভিজিয়ে পানি পান করলে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে।
৬. বুকের দুধ বাড়াতে একটি বিকল্প ওষুধ হল মেথি। যারা নতুন মা হয়েছেন তাদের জন্য মেথির পানি খুবই উপকারী।
৭. মেথিতে থাকা পুষ্টিগুলি ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, বুকে কফ জমে ইত্যাদির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৮. মেথির জলে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি করে মেথি ভেজানো পানি পান করা প্রয়োজন।
৯. এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি মিশ্রিত জল খেলে শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা কমে যায়। এটি ওজন হ্রাস সহজ করে তোলে।মেথি খাওয়া শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১১.মেথিতে রয়েছে বিভিন্ন উপাদান যা হজমের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে।
১২. মেথিতে থাকা ফাইবার আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, এইভাবে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে।
১৩.প্রতিদিন সকালে মেথি চা পান করলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়।
১৪.অনেকেই বিশেষ করে শিশুরা কৃমির সমস্যায় ভোগে। নিয়মিত মেথি খেলে এই সমস্যা দূর হয়।
১৫.মেথি খাওয়া পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা এবং যৌন কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
১৬.অনেক চিকিৎসকই শরীরের ব্যথা উপশমে মেথি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি মেথি খাওয়ার নিয়ম জানলে এটা থেকে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মেথির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে এটির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যাও হতে পারে। তাইমেথি খাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে ভুলবেন না।
বেশি পরিমাণে সেবন করলে গ্যাস, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। মেথির উচ্চ মাত্রার টেরাটোজেনিক সম্ভাবনার কারণে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। অতএব, মহিলারা এটি শুধুমাত্র একজন প্রফেশনাল ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করতে পারেন।
পরিশেষে
উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে আমরা জানতে পারলাম মেথি খাওয়ার নিয়ম
এবং কিভাবে মেথি খেতে হয়। মেথি বীজ অনেক অসুস্থতার জন্য একটি ভাল প্রতিকার। মেথির বীজে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল।
মেথি বীজ ব্যবহার করে বেশ কিছু রোগ নিরাময় করা যায়। তরকারি এবং আচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে মেথি ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু অনেকেই জানেন না যে সকালে খালি পেটে মেথি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
প্রশ্নঃ মেথি কতটুকু খেতে হবে?
উত্তরঃ মেথি অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া নিষেধ। আপনি মেথি দৈনিক 5 থেকে 1০ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন মেথি ভেজানো পানি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ এটি খুশকি, টাক পড়া, চুল পড়া এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মেথি বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য, ঠান্ডা, গলা ব্যথার মতো বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে। মেথিতে রয়েছে এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার, যা অনেকটা কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সাহায্য করে। রোজ সকালে খালি পেটে মেথির বীজ খেলে কোলেস্টেরলের পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
প্রশ্নঃ সকালে খালি পেটে মেথি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি মিশ্রিত পানি পান করার অভ্যাস শরীরে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা কমে যায়। এমনকি ওজন কমতে শুরু করেছে। রান্না করার সময় মেথি জলে ভিজিয়ে খেলে ত্বকের বিভিন্ন দাগ সহজেই দূর হয়।
আরও পড়ুন-
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম ও পুষ্টিগুণ
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও সেবনবিধি