কোলেস্টেরল কমানোর উপায়
কোলেস্টেরল একটি সাধারণ সমস্যা, যা স্বাভাবিক গ্রেজিং প্রস্তুতির একটি অংশ। তবে, যদি এটি অতিরিক্ত হয়, তবে এটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি চর্বিজাত পদার্থ।
এটি কোষের ঝিল্লী তৈরি, হরমোন এবং ভিটামিন ডি উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। আজকের আর্টিকেলে কোলেস্টেরল কমানোর উপায়, কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয়, প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুুনঃ- tofen syrup এর কাজ কি, এর ব্যাবহার ও নির্দেশনা
কোলেস্টেরল কম করার উপায়

কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এক ধরণের চর্বি। তবে এর মাত্রা শরীরে বেড়ে গেলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এর মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। কোলেস্টেরল কমানোর উপায় গুলো হল-
জীবনধারা পরিবর্তন
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি ব্যায়াম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার:
- অসম্পৃক্ত চর্বি (যেমন: জলপাই তেল, সয়াবিন তেল, মাছের তেল)
- এবং ফাইবার (যেমন: শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম)
- বেশি খান।
- কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার (যেমন: মাখন, ঘি, ডিমের কুসুম,
- লাল মাংস) কম খান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন।
- ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
- মদ্যপান পরিহার: অতিরিক্ত মদ্যপান কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
- মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
ওষুধ
জীবনধারা পরিবর্তনের পরও যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে ডাক্তার ওষুধ লিখে দিতে পারেন।
স্ট্যাটিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কোলেস্টেরল কমাতে ব্যবহৃত ওষুধ। এটিও কোলেস্টেরল কমানোর উপায় এর মধ্যে নিহিত।
অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে:
- নিয়াসিন,
- ফাইব্রেট,
- বাইল অ্যাসিড sequestrants ইত্যাদি।
কোলেস্টেরল কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়
কোলেস্টেরল কমানোর উপায় এর মধ্যে সবথেকে ভালো পন্থা বা উপায় ঘরোয়া উপায়
খাদ্য
- ওটমিল: ওটমিলে বিটা-গ্লুকান থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- বাদাম: বাদামে যেফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তা LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- সয়া: সয়াতে আইসোফ্লাভোন থাকে যা LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- মাছ: মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা HDL (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ফল ও শাকসবজি: ফল ও শাকসবজিতে ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল এর ফলে যেসব সমস্যা হয়
কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে যেসব সমস্যা হতে পারে।
করোনারি ধমনী রোগ
- হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলিতে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলিতে
- কোলেস্টেরল জমা হওয়ার ফলে হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ
- ধরন হৃদরোগ।
অ্যাঞ্জিনা
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে বুকে ব্যথা হয়।
হার্ট অ্যাটাক
- হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে
- হৃৎপিণ্ডের পেশী মারা যায়।
স্ট্রোক
- মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার ফলে
- মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ইস্কেমিক স্ট্রোক
- মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত থেকে
- অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যায়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক
- মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গেলে
- মস্তিষ্কে রক্তপাত হয়।
অন্যান্য সমস্যা
উচ্চ রক্তচাপ
- রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার ফলে
- রক্তচাপ বেড়ে যায়।
পেরিফেরাল ধমনী রোগ
পা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
বাইল নুলি
- পিত্তথলির
- পিত্তে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার ফলে শক্ত পাথর তৈরি হয়।
কোলেস্টেরল এর কারণ সমূহ
কোলেস্টেরল এর উৎপাদনের এবং বৃদ্ধি এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই কারণগুলি সাধারণভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে:
আহারের কারণে: খাবারে অতিরিক্ত প্রস্থ, চর্বি এবং আচারবদ্ধ খাবার রয়েছে তাহলে কোলেস্টেরল স্তর বৃদ্ধি হতে পারে।
আবস্থা ও পরিবেশের প্রভাব: অবৈধ জীবনযাপন, অতিরিক্ত চাপ, তন্দ্রাচ্ছন্নতা এবং অধিক ওজনের জন্য কোলেস্টেরল স্তর বৃদ্ধি হতে পারে।
উপসর্গ বা অন্যান্য অসুস্থতা: কিছু মেডিকেশন, মধুমেহ, হৃদরোগ, ওয়ারিশ, অক্সিডেন্টিল নিরাময় অবস্থা, রক্তচাপ ও হতাশা এবং অধিক ওজনের কারণে কোলেস্টেরল স্তর বৃদ্ধি হতে পারে।
উত্তরাধিকারিতা: কিছু মানুষের কোলেস্টেরল স্তর আনুমানিকভাবে অধিক হয় যত পারে পারিবারিক ইতিহাস ও উত্তরাধিকারিতা দ্বারা।
আণবিক নিউরোবলান্স: কিছু মানুষের কোলেস্টেরল স্তর আনুমানিকভাবে অধিক হয় কারণ তাদের আণবিক নিউরোবলান্স পরিবর্তন হতে পারে।
কোলেস্টেরল কেন হয়
কোলেস্টেরল হলো এক ধরণের চর্বি যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি কোষের ঝিল্লিতে ব্যবহৃত হয়, হরমোন এবং ভিটামিন D তৈরিতে সাহায্য করে।
কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ:
জীবনধারা
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন: লাল মাংস, মাখন, ঘি),
ট্রান্স ফ্যাট (যেমন: প্রক্রিয়াজাত খাবার),
এবং কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার (যেমন: ডিমের কুসুম)
খাওয়া।
নিষ্ক্রিয় জীবনধারা
নিয়মিত ব্যায়াম না করা।
অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
ধূমপান
ধূমপান HDL (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে
LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
মদ্যপান
অতিরিক্ত মদ্যপান HDL (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে
LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
পরিশেষে
কোলেস্টেরল হওয়ার নানা ধরনের গুরুত্বর সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের সকলের উচিত নিয়ম মাফিক চলাফেরা খাওয়া দাওয়া করা।
যে সকল খাবারের ফলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য কর, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানোর উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।
কোলেস্টেরল কমানোর উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। কি খেলে রক্তে কোলেস্টেরল কমে?
উত্তরঃ খারাপ কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাধারণ উপায়গুলো হলো: হাঁটা বা জগিং, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। যদি ব্যায়ামাগারে যাওয়ার অভ্যাস থাকে কিংবা ঘরে ব্যায়ামের উপকরণ থাকে তবে ১৫ মিনিটের ধীর গতির শরীরচর্চায় কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। কোলেস্টেরলে থাকা ট্রাইগ্লিসারাইড দেহে শক্তি হিসেবে খরচ হয়।
২। কোলেস্টেরল কমানোর খাবার কি কি?
উত্তরঃ হাই কোলেস্টেরল থেকে বাঁচতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। যদি কারো কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে যায় তার স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, বড় চিংড়ি, অতিরিক্ত তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
৩। কলা খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে?
উত্তরঃ আপনি কি জানেন, কলা কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। এতে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার, যা ব্যাড কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মজবুত হয়। এছাড়াও কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত?
উত্তরঃ “যদি এলডিএল কোলেস্টেরল, যা খারাপ কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত, তা যদি 190 মিলিগ্রাম/ডিএল-এর বেশি হয়, তাহলে হৃদরোগ হওয়ার খুব বেশি ঝুঁকি রয়েছে,” তিনি যোগ করেছেন। 150 mg/dl-এর নিচে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা থাকলে, তা স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত হয়। 150 থেকে 250 mg/dl বর্ডারলাইন হিসাবে ধরা হয়।
আরও পড়ুনঃ-
চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কিত সকল তথ্য ও সমাধান
নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য