অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম ও পুষ্টিগুণ

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

অলিভ অয়েল তেল সত্যিই একটি সুপারফুড যা খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এটি স্বাস্থ্যকর জলপাই ফল থেকে তৈরি

এবং এটি একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিটাকারোটিন, পলিফেনল এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম কি ও এর গুনাগুণ সম্পর্কে অনেকেই সচেতন না।

অলিভ অয়েলে থাকা মনো-অনস্যাচুরেটেড ফ্যাট HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার রোধে সাহায্য করতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। 

আজকের আর্টিকেলে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম, অলিভ অয়েল তেল এর উপকারিতা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম ও ব্যবহার

Table of Contents

অলিভ অয়েলের উপকারিতা

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

অলিভ অয়েল হল এক প্রকার তেল যা জলপাই ফল থেকে তৈরি করা হয়। এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হয়ে আসছে এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং বহুমুখিতার জন্য এটি প্রশংসিত হয়েছে।

স্বাস্থ্যের জন্য

১। হৃৎপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর

অলিভ অয়েল মনো-অনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এলডিএল (“খারাপ”) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং এইচডিএল (“ভাল”) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

২। প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে

অলিভ অয়েল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রদাহ হৃৎপিণ্ডের রোগ, ক্যান্সার এবং আলঝেইমার রোগ সহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সাথে যুক্ত।

৩। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে

অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার রোধে সাহায্য করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অলিভ অয়েল খাওয়া স্তন, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৪। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল

অলিভ অয়েল মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন ফ্যাটে সমৃদ্ধ। এটি স্মৃতি এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং আলঝেইমার রোগের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৫। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল

অলিভ অয়েল হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: অলিভ অয়েল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ত্বকের জন্য

১। ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে

অলিভ অয়েল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।

২। ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে

অলিভ অয়েল ত্বকের তেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

৩। ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে

অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম – চুলের জন্য

১। চুলকে শক্তিশালী করে

অলিভ অয়েল চুলকে শক্তিশালী এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে।

২। খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে

অলিভ অয়েল খুশকি দূর করতে এবং চুলের স্ক্যাল্প স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

অলিভ অয়েল এর ব্যবহার

অলিভ অয়েল বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

রান্নার জন্য

সালাদ ড্রেসিং: অলিভ অয়েল সালাদ ড্রেসিং তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভাজা: অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম হল অলিভ অয়েল ভাজার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

বেকিং: অলিভ অয়েল বেকিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মেরিনেট: অলিভ অয়েল মাংস, মাছ এবং শাকসবজি মেরিনেট করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সৌন্দর্যের জন্য

ত্বকের ময়েশ্চারাইজার: অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম এর মধ্যে একটি হল অলিভ অয়েল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মেকআপ রিমুভার: অলিভ অয়েল মেকআপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুলের ময়েশ্চারাইজার: অলিভ অয়েল চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

হেয়ার মাস্ক: অলিভ অয়েল হেয়ার মাস্ক তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্যের জন্য

  • খাদ্যতালিকায় অলিভ অয়েল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
  • ঔষধি ক্যাপসুল হিসেবে অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে।

অন্যান্য ব্যবহার

  • কাঠের আসবাবপত্র পালিশ করতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ত্বকের জ্বালা কমাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কানের ব্যথা কমাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

অলিভ অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু দরকারী টিপস

  • শীতল ও অন্ধকার স্থানে অলিভ অয়েল সংরক্ষণ করুন।
  • বোতলের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন।
  • খোলা অলিভ অয়েল দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা উচিত।

অলিভ অয়েল খাওয়ার নিয়ম

পরিমাণ

  • প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত নয় কারণ এটি ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।

সময়

  • সকালে খালি পেটে অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে।
  • রান্নার সময় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সালাদে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোন ধরণের অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত

খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো অলিভ অয়েল হলো:

অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল

এটি সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত অলিভ অয়েল এবং এতে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান থাকে। EVOO তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন E এবং K, এবং মনো-অনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কোল্ড-প্রেসড অলিভ অয়েল

এটি তাপ বা রাসায়নিক ব্যবহার না করে প্রেস করা হয়। এতেও EVOO এর মতো পুষ্টি উপাদান থাকে।

ভার্জিন অলিভ অয়েল

এটি EVOO এর চেয়ে একটু বেশি প্রক্রিয়াজাত, তবে এতেও পুষ্টি উপাদান থাকে।

খাওয়ার জন্য এড়িয়ে চলা উচিত

পিউর অলিভ অয়েল

এটি EVOO, কোল্ড-প্রেসড অলিভ অয়েল, এবং ভার্জিন অলিভ অয়েলের চেয়ে বেশি প্রক্রিয়াজাত। এতে পুষ্টি উপাদান কম থাকে এবং এতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকতে পারে।

লাইট অলিভ অয়েল

এটিও বেশি প্রক্রিয়াজাত এবং এতে পুষ্টি উপাদান কম থাকে।

পমেস অলিভ অয়েল

এটি অলিভের বীজ এবং শেফ থেকে তৈরি করা হয়। এতে পুষ্টি উপাদান কম থাকে এবং এটি স্বাস্থ্যকর নয়।

অলিভ অয়েল কেনার সময়

  • বোতলে “অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল”, “কোল্ড-প্রেসড অলিভ অয়েল”, বা “ভার্জিন অলিভ অয়েল” লেবেল আছে কিনা তা দেখুন।
  • বোতলের গাঢ় রঙের কিনা তা দেখুন।
  • বোতলটি ঠান্ডা ও অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করুন।

পরিশেষে

অলিভ অয়েল তেল আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে আমাদের সবসময় এর ব্যবহার নিয়ম মাফিক করতে হবে। তবে ই আমরা এর উপকারিতা পাবো। নিয়মিত অলিভ অয়েল খাওয়ার ফলে স্বাস্থের অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। 

আশা আজকের আর্টিকেলে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

অলিভ অয়েল সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। অলিভ অয়েল তেল কী মুখে ব্যবহার করা যায়?

উত্তরঃ অলিভ অয়েলের রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ব্রণ প্রবন ত্বকে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণ উপশম করে বা ব্রণ হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে ত্বকে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে যাতে যাতে ত্বকের ছিদ্র আটকে না যায় এবং ত্বক সুরক্ষিত থাকে।

২। অলিভ অয়েল তেল দিয়ে কি উপকার কি উপকার? 

উত্তরঃ অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা চুলের রক্ষাকবচ হিসেবে এই তেলের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। চুলের যথেষ্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। এছাড়া চুলের আগা ভেঙে যাওয়ার মত সমস্যাকেও দূর করে নিমেষে।

৩। অলিভ অয়েলে কোন ভিটামিন থাকে? 

উত্তরঃ অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে ছাড়া খুব বেশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট নেই। এক টেবিল চামচ অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল আপনার দৈনিক প্রস্তাবিত ভিটামিন ই এর প্রায় 13% এবং ভিটামিন কে এর দৈনিক প্রস্তাবিত মূল্যের প্রায় 9% প্রদান করে।

আরও পড়ুন-

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ও এর ব্যবহার

কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে

Leave a Comment