শবে কদরের নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও তাৎপর্য

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

রমজান মাসের ২১ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে বিজোড় সংখ্যার রাতগুলোর মধ্যে যে কোন রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর হয়ে থাকে।

তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাত ২৭ রমজানকেই কদরের রাত হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। শবে কদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমাণগণ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করে।

তবে অনেকেই শবে কদরের রাতে নামায কিভাবে পড়তে হয়, শবে কদরের নামাজের নিয়ম এবং কোন দোয়া পড়তে হয় এবং এই রাতের ফজিলত সর্ম্পকে জানতে চায়।

আজকের আর্টিকেলে এ সকল বিষয় সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো।

আরও পড়ুনঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও যাকাতের সঠিক হিসাব

শবে কদরের অর্থ

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

’শবে কদর’ শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে কোরানে এই রাতকে বলা হয়েছে ’লাইলাতুল কদর’ ‘ লাইলাতুল কদর’ শব্দের অর্থ হলো অতিশয় সম্মানিত রাত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী।

আরবী ভাষায় “লাইলাতুল’ শব্দের অর্থ হলো রাত এবং ‘কদর শব্দের অর্থ হলো সম্মান বা মর্যদা। এ রাতকে অন্যভাবে বলা যায় যে ভাগ্য বা তগদীর নির্ধারণের রাত।

লাইলাতুল কদরে যেহেতু ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় তাই সকল মুসলমানের উচিৎ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে রাতটিকে অতিবাহিত করা। 

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের নামায যেহিতু নফল তাই প্রতিবারে দু’রাকাত করে যত বেশি পাড়া যায় তত বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়।   শবে কদরের নামাজের নিয়ম হলো  কমপক্ষে ১২ রাকাত আদায় করাই উত্তম। তবে আপনি চাইলে এর বেশিও নামায আদায় করতে পারবেন। শবে কদরের নামাযের নিয়ম হলো  প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হয়। এই রাতে আপনি সালাতুল তসবিহ, সালাতুল হাজত, এবং সালাতুল তওবার নামায পড়তে পারেন। রাতের শেষভাগে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে পারেন। 

শবে কদরের নামাযের নিয়ত

যদি আপনি আরবি ভাষা জেনে থাকেন তবে শবে কদরের নিয়ত আরবীতে করবেন আর যদি আরবি ভাষা না জানেন তবে শবে কদরের নিয়ত আপনি বাংলাতে করবেন। শবে কদরের আরবি ভাষা এবং বাংলা ভাষা দুই ভাষারির নিয়ত আলোচনা করা হয়েছে।

আরবিতে শবে কদরের নামাজের নিয়ত: “নাওয়াইতুআর্ন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা রাকা’আতাই ছালা-তি লাইলাতুল কদর নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতির্ল কা’বাতির্শ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 

শবে কদরের নামাজের বাংলা নিয়ত: “আমি কেবলামূখী হয়ে আল্লার্হ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাআত নফল নামাজের নিয়ত করলাম-আল্লাহু অকবার”। 

শবে কদরের নামাজের সূরাসমূহ

নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। তাই  শবে কদরের নামাজের নিয়ম হলো সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ক্বদর, আয়তাল কুরছী, সূরা ইখলাস বা সূরা তাকছুর ইত্যাদি মিলিযে পড়তে পারেন অথবা অন্য কোন সূরা মিলিযে পড়তে পারেন। 

শবে কদরের ফজিলত

শবে কদর যে মুসলমানদের জন্য একটি ফজিলত পূর্ণ্য রাত তা কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। শবে কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। 

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানমাশের রোযা রাখে, শবে কদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)। 

আরেশা (রা:) বলেন, নবীজি বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর। (সহিহ বুখিারি, হাদিস:২০১৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস:১১৬৯) 

শবে কদরের দোয়া 

শবে কদরের ইবাদত হলো নফল ইবাদত।  শবে কদরের নামাজের নিয়ম হ  এ রাতে নামাজ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত পুরোটা নফল ইবাদত হিসাবে গণ্য হয়। এই রাতের কোন  ইবাদতি ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদাও নয়। 

নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হয়। আপনার মনের সব ইচ্ছা বা চাওয়া পাওয়া তা সব আল্লাহর কাছে পেশ করতে পারেন। তবে শবে কদরের রাতে নামাজের পরে আলাদা কোন দোয়া নাই।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো? 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে:-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফাওয়া,ফাফু আন্নি।’

অর্থ: হে আল্লহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে বালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহামাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

 رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।

অর্থ: হে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন, আপনিইতো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমানকারী। (সুরা মুমিনুন: আয়াত ১১৮) 

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ: ’রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও অমাদের প্রতি রহম কর। তুমি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সুরা মুমিনন: আয়াত ১০৯) 

رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চরণ:” রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’

অর্থ: (হ আমার প্রভু ! নিশ্চয় আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতেএব আপনি আমাকে ক্ষমা করেন। (সুরা কাসাস: আয়াত ১৬)

শেষকথা

লাইলাতুল কদরের রাতে কোরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণে অন্যান্ন মাসের চেয়ে এই মাসের মর্যদা অনেক বেশি। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চাইতে উত্তম।

তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই রাতে ইবাদত বন্দীগি করা। নফল নামায, কুরআন তেলোয়াত এবং জিকির ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। 

শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। লাইলাতুল কদরে কত রাকাত নামাজ পড়তে হয়?

উত্তরঃ এ রাতের পবিত্রতার কারণে তোমাদের আমল বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ, মাত্র দুই রাকাত সালাত আদায় করলে ৮৩ বছরের সালাতের সমান হতে পারে! যত পারো নফল নামায পড়। মূল বিষয় হল মনোযোগ এবং আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনা করা, যেমন আপনি আপনার প্রভুর সামনে নিজেকে কল্পনা করেন।

২। শবে কদর কি?

উত্তরঃ ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসারে, শব-ই-কদর অত্যন্ত শুভ, কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে এটি সেই রাত ছিল যখন পবিত্র কুরআন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে প্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল । তা ছাড়া, সেই রাতেই ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ইসলামের নবী মুহাম্মদের কাছে কুরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয়েছিল।

৩। লাইলাতুল কদরের রাতে কি দোয়া করতে হয়?

উত্তরঃ লায়লাতুল কদরের জন্য আরেকটি উপকারী দুআ হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ইহকাল ও পরের জীবনে মঙ্গল কামনা করা: “ রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়াকিনা আযাবান-নার ”। অনুবাদঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

আরও পড়ুন –

ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া এবং ইসলামিক বিধান

ঋণ মুক্তির দোয়া, আমল ও ঋণ থেকে নাজাতের পথ

Leave a Comment