পায়ের চামড়া উঠে কেন
শীতকালে প্রায় সবারই হাত-পায়ের চামড়া উঠে থাকে। শীতকালে চামড়া ওঠা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সারা বছর হাত-পায়ের চামড়া উঠা অবশ্যই স্বাভাবিক বিষয় নয়। হাত ও পায়ের চামড়া ওঠার বিষয়টাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কেরাটোলাইসিস এক্সফোলিয়াটিচা।
কোনো একক কারনে আমাদের হাত-পায়ের চামড়া উঠে না । এর পিছনে অনেক কারন থাকে এবং এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক মত হয়। আজকে আমরা এই নিবন্ধনের মাধ্যমে জানবো ঠিক কোন কোন কারনে হাত-পায়ের চামড়া উঠে এবং এর থেকে বাচার উপাই গুলো কি কি। তো চলুন শুরু করা যাক।
পায়ের চামড়া উঠার কারণ সমূহ
যে সকল কারনে আমাদের হাত-পায়ের চামড়া উঠতে পারে সেগুলো মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ হলো:
বংশগত কারণ: হাত-পায়ের চামড়া উঠা বংশগত কারনে হতে পারে। যদি কারো পরিবারের কোনো সদস্যের হাত-পায়ের চামড়া উঠান সমস্যা থাকে যেমন: বাবা-মা, তাহলে এই সমস্যা জেনেটিকভাবে তাদের ছেলে-মেয়েদের হয়ে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে।
ত্বকের শুষ্কতা, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশে বা ব্যস্ততার কারনে আমরা অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে পারিনা বা অবহেলায় পান করি না বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ব্যবহার করি না। যার ফলে হাত-পা ও ঠোটের চামড়া ফেটে যায় এবং তা পরে মরে উঠতে শুরু করে।
ভিটামিনের অভাব: শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, ই, সি ইত্যাদির অভাব হলে হাত পায়ের চামড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের ত্বককে মর্শারাইজার ধরে রাখতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এ, ই, সি ইত্যাদি ভিটামিন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এগুলোর অভাবেও অনেক সময় হাত পায়ের চামড়া উঠে থাকে।
ত্বকের রোগ: অনেকের ত্বকের রোগ বা স্কিন ডিজিস থাকে, যার কারনেও হাত পায়ের চামড়া উঠতে পারে। ত্বকের রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু রোগ হচ্ছে সোরিয়াসিস, একজিমা ইত্যাদি।
ছত্রাক সংক্রমণ : ছত্রাকের আক্রমনের কারণেও হাত-পায়ের চামড়া ওঠা, চুলকানি, পচড়ার মতো সমস্যা হতে পারে। যার ফলে পরবর্তিতে আক্রান্ত স্থানের চামড়া উঠে যায়।
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম : হাতে বা পায়ে হটাৎ কোনো কারনে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগলেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সূর্যের আলো: সূর্যের আলোতে থাকা অতিবেগুনী রশ্মি সরাসরি হাতে-পায়ে দীর্ঘক্ষন পড়ার কারনে চামড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যা পরে ত্বক ফাটার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। দিন মজুর রিক্সা চালক, লেবার শ্রেনীর মানুষের মধ্যে এই বিষয়টি বেশি দেখা যায়।
ঔষধের প্রতিক্রিয়া: ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার ফলেও অনেক সময় এমনটা হয়।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা: অনেকের থাইরয়েডের সমস্যা বা হরমোনাল সমস্যা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারনেও এমনটা হতে পারে। ।
নিম্নমানের প্রসাধনী: নিম্নমানের প্রসাধনীতে নানান ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদনের থাকে যা অনেক সময় আমাদের ত্বক গ্রহন করতে পারে না যার ফলেও এমনটা হতে পারে।
পায়ের চামড়া উঠা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
চিকিৎসকরা পায়ের চামড়া উঠা থেকে রক্ষা পওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো হলো:
প্রচুর পানি পান করা : নিজেকে সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি পান করার বিকল্প নাই। আমাদের শরীরকে কোনো সময় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্য হতে দেয়া যাবে না। এটি যেমন আমাদের যেমন সুস্থ্য রাখবে তেমন পায়ের চামড়া উঠা থেকে রক্ষা করবে।
পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহন করা : শরীরকে সুস্থ্য রাখতে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহন করার কোনো বিকল্প নেই। তাই সবার আগে প্রতিদিন পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। যা আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করবে এবং হাত-পায়ের চামড়া উঠা থেকে রক্ষা করবে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, ই, সি ইত্যাদি রয়েছে এমন খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখার চেস্টা করতে হবে।
তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল : হাত ও পায়ের চামড়া উঠে যাওয়ার জন্য তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমান ভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিলের তেল না থাকরে এর পরিবর্তে জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
অথবা মধু, গ্লিসারিন, লেবুর রস ও ঘৃতকুমারীর রস একসঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট। তবে ভালো হয় যদি মিশ্রনটি ঘুমানোর আগে লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমাতে পারেন। সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও হালকা গরম পানির সঙ্গে লবণ ও শ্যাম্পু একত্রে মিশিয়ে হাত-পায়ের তালুর পরিচর্যা করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ধন্যবাদ!