পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে
গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পিরিয়ড মিস হওয়া। কিন্তু কোনও নারীর পিরিয়ড মিস হয়েছে মানেই যে সে গর্ভধারণ করেছে,
এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না। আরও অনেক কারণেই পিরিয়ড মিস হতে পারে। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে।
তবে সঠিক নির্দেশে টেস্ট না করলে রিপোর্ট ভুল আসতে পারে। তাই প্রেগন্যান্সি কিটের মাধ্যমে সঠিকভাবে পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে জানা জরুরি।
আজকের আর্টিকেলে পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে, পেগনেন্ট টেস্ট কতদিন পর করতে হয়,
মিলনের কতদিন পর পেগনেন্ট টেস্ট করতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়মসমুহ
পেগনেন্ট টেস্ট করার নিয়ম
পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে বলতে গেলে বলবো, পেগনেন্ট টেস্ট দুইভাবে করে। যেমনঃ- ১) মূত্র পরীক্ষা বা ইউরিন টেস্ট ও ২) রক্তপরীক্ষা বা ব্লাড টেস্ট।
মূত্র পরীক্ষা বা ইউরিন টেস্ট
এটি প্রাথমিক টেস্ট, যা আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। বাজারে যেগুলো প্রেগন্যান্সি কিট পাওয়া যায়, তা দিয়েই টেস্টটি করে ফেলা সম্ভব।
তবে, সঠিক রেজাল্ট পেতে চাইলে ভালো নামী কোম্পানির প্রেগন্যান্সি কিট কিনুন এবং প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী ভালো করে মেনে চলুন।
টেস্ট কিটের কেমিক্যাল স্ট্রিপ এ মূত্রের নমুনা দিয়ে টেস্ট করতে পারেন।
- আপনি ইউরিন সংগ্রহ করে তাতে প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ ডোবাতে পারেন, ড্রপারে করে ইউরিনের নমুনা যথাস্থানে দিতে পারেন বা ফ্লো চলাকালীন নির্দিষ্ট জায়গা বুঝে সেটি ধরতে পারেন।
- বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিটের রেসাল্ট দেখানোর সময় ভিন্ন রকম। তবে, সাধারণত ১-২ মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট দেখা যায়।
- বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রেগন্যান্সি কিটের রেসাল্ট দেখানোর পদ্ধতি ভিন্ন। কোনও ক্ষেত্রে রঙের পরিবর্তন হয়, কোনও ক্ষেত্রে লাইন দিয়ে বোঝানো হয়, কোনও ক্ষেত্রে পজিটিভ না নেগেটিভ চিহ্ন ওঠে আবার কোথাও লেখার মাধ্যমে দেখানো হয় রেসাল্ট।
সতর্কতাস্বরূপ, প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের আগে কিটের পেছনে থাকা নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নিবেন।
পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে – রক্তপরীক্ষা
এই রক্ত পরীক্ষা মেডিক্যাল ক্লিনিকেই করা হয়, যা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়। প্রেগন্যান্সি টেস্টে দুটি ধরণের পরীক্ষা হয় – কোয়ালিটেটিভ টেস্ট এবং কোয়ানটিটেটিভ টেস্ট।
কোয়ালিটেটিভ টেস্টে শুধু প্রেগন্যান্সি অবস্থা ধরা যায় না, তবে কোয়ানটিটেটিভ টেস্টে রক্তে উপস্থিত এইচসিজি মাত্রার উপর ভিত্তি করে প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত করা যায়।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় এবং ফলাফল পাওয়া যায় প্রথম ৭-১২ দিনে। ইউরিন টেস্টের জন্য প্রথম ১০-১৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়।
যখন পেগনেন্ট টেস্ট করবেন
সফল সহবাসের পরে মোটামুটি ১৪ দিনের মধ্যেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যেতে পারে। এটা আপনি ইউরিন টেস্ট কিট ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে পারেন।
সকালের প্রথম ইউরিন নিয়ে পরীক্ষা করা উত্তম, কারণ এসময়ে ইউরিনে এইচসিজি হরমোনের ঘনত্ব বেশি থাকে, তাই সঠিক ফলাফলের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যদিও খুব ক্লান্তিভাব, মর্নিং সিকনেস বা অন্যান্য উপসর্গ বা পিরিয়ড মিস হলে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেগনেন্ট টেস্ট
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট এখন বাজারে প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়, তবে সব সময় এটা হাতের কাছে থাকে না। হয়তো আপনিও আগ্রহিত,
এবারের জন্য তা পরীক্ষা করবেন বলে মনে হচ্ছে। চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে ঘরে ঘরে পদ্ধতি দেখতে পারেন। এই পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে কিনা তা আপনার ডাক্তার নির্ধারণ করবেন। আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে দুবার চেষ্টা করতে পারেন।
- চিনির সাহায্যে: সকালের প্রথম মূত্র সংগ্রহ করে রাখুন। এবার ওতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে দিন। যদি চিনি দলা পাকিয়ে যায়, তা হলে সম্ভবত আপনি গর্ভবতী।
- টুথপেস্টের সাহায্যে: ইউরিনের নমুনার মধ্যে কিছুটা টুথপেস্ট মিশিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে যদি ওই মিশ্রণে বুদবুদ ওঠে এবং মিশ্রণের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হতে শুরু করে; তা হলে হয়তো আপনি মা হতে চলেছেন।
- বেকিং সোডা দিয়ে: একটি কাপে সকালের ইউরিন সংগ্রহ করুন। এতে দুই চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে দিন। যদি মিশ্রণটি ছানার মতো কেটে যায়, তা হলে ধরে নিতে পারেন সম্ভবত আপনি প্রেগন্যান্ট।
- ভিনিগারের সাহায্যে: সকালের সংগ্রহ করা ইউরিনে সাদা ভিনিগার মিশিয়ে দিন। মিশ্রণটির রং যদি পরিবর্তন হয়ে যায়, তা হলে আপনি হয়তো কন্সিভ করেছেন।
মিলনের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়
মিলনের পর, একজন মহিলা দুই সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতী হয় না। দুই সপ্তাহের যৌন ক্রিয়াকলাপের পরে, গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত কোনো লক্ষণ থাকলে আপনি পরীক্ষাটি নিতে পারেন।
যদি না হয়, সঠিকতা নিশ্চিত করতে ২১ দিন পর পরীক্ষাটি পুনরাবৃত্তি করা উচিত। পিরিয়ড মিস হওয়ার এক সপ্তাহ বা দশ দিন পর আপনি পরীক্ষা করতে পারেন যদি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকার পর পিরিয়ড মিস হয়ে যায় এবং সেই সময়ে লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে। দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা করালে এ অবস্থায় সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না
এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা সাধারণ, কারণ কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের পর গর্ভাবস্থার হরমোন শরীরে পরিমাণে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
এক সপ্তাহ অপেক্ষার পরে, আরেকটি গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করা উচিত। সকালের প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করে পরীক্ষা করা সবচেয়ে ভালো।
যদি দ্বিতীয় পরীক্ষার ফলাফলও নেতিবাচক হয় এবং আপনার মাসিক এখনও আসে না, একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার মাসিক অনুপস্থিতির কারণ নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন।
রেজাল্ট ফলস নেগেটিভ হয় কেন
উল্টোটাও ঘটতে পারে। পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক, কিন্তু আপনি গর্ভবতী। এর কারণ হল যদি পরীক্ষাটি নির্ধারিত সময়ের আগে করা হয়, অর্থাৎ মাসিকের নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহের মধ্যে, যদি বাচ্চা না আসে তবে পরীক্ষা নেতিবাচক হতে পারে।
যারা তাদের প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না, ঘন ঘন প্রস্রাব করেন বা পরীক্ষার আগে প্রচুর পানি পান করেন তাদের প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা কম থাকে, ফলে নেতিবাচক ফলাফল হয়।
বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা কতটা সঠিক
ইউএস অফিস অন উইমেন’স হেলথ অনুসারে অধিকাংশ হোম গর্ভাবস্থা পরীক্ষার কিট যথার্থভাবে ব্যবহার করলে ৯৯% যথার্থ ফলাফল দেয়।
সময়ের সাথে সাথে আপনার প্রস্রাবে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) এর মাত্রা বেড়ে যায়। তাই, আপনি আপনার মাসিক অনুপস্থিতির কয়েকদিন পর পরীক্ষা করলে আপনি যথার্থ এবং বিশ্বস্ত ফলাফল পাবেন।
পরিশেষে
পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে বলতে গেলেই বিভিন্ন কিটের সাহায্যে বাসাতে করতে পারেন। আবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইউরিন টেস্ট ও ব্লাড টেস্ট এর মাধ্যমেও করতে পারেন।
বাড়িতে কিটের সাহায্যে পরীক্ষার করার পূর্বে অব্যশই ভালোভাবে ব্যবহারবিধি পড়ে নিতে হবে, যাতে পরীক্ষা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। এবং সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। আশা করি আজকের আর্টিকেলে পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।ধন্যবাদ।
পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর /FAQ
১। কত দিন পর টেস্ট করলে গর্ভবতী বোঝা যায়?
উত্তরঃমিলনের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়? সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। প্রেগন্যান্সি টেস্টে সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে একটি হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ শুরুর দিকে অল্প পরিমাণে থাকে।
২। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করতে হবে?
উত্তরঃ আপনার ডাক্তার বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবের R/M পরীক্ষার সুপারিশ করতে পারেন। আপনি যদি কিছু লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি, প্রস্রাবে রক্ত, বা ব্যাখ্যাতীত পেটে ব্যথা, আপনার ডাক্তার অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করার জন্য একটি প্রস্রাব পরীক্ষার আদেশ দিতে পারে।
৩। প্রেগনেন্সির লক্ষণ কতদিন থেকে শুরু হয়?
উত্তরঃকিছু মহিলা গর্ভধারণের এক বা দুই সপ্তাহ পরে গর্ভাবস্থার প্রথম প্রাথমিক লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা শুরু করতে পারে, অন্যরা গর্ভধারণের চার বা পাঁচ সপ্তাহের কাছাকাছি লক্ষণগুলি অনুভব করতে শুরু করে। কিছু মহিলা তাদের মাসিক লক্ষণীয়ভাবে দেরী না হওয়া পর্যন্ত বা এমনকি গর্ভাবস্থার আরও দূরে হওয়া পর্যন্ত লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারে না।
আরও পড়ুন-
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ও ব্যবহারের নিয়ম
কোলেস্টেরল কমানোর উপায় ও খাবার তালিকা