প্রেসার লো হলে করণীয়
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে আমরা সবাই সচেতন হলেও নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে আমরা অতটাও সচেতনতা অবলম্বন করিনা। গরমে অনেকেরই রক্তচাপ কমে যায়। গরমে শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ পানিশূণ্যতা তৈরি হচ্ছে সেখান থেকেই মানবদেহে রক্তচাপের একটা স্বাভাবিক মাত্রা আছে।
সাধারণত একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ হওয়া উচিৎ ১২০/৮০। মূলত এর ওপর ভিত্তি করেই উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং কমে যাওয়া দুটোই স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
যদি প্রেসার ৯০/৬০ হয় তবে এই ব্লাড প্রেসারকে নিম্ন রক্তচাপ বা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ধরা হয়।
রক্তের এই সমস্যার কারণে প্রায় বেশিরভাগ মানুষই চিন্তিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লো ব্লাড প্রেসার খুব বেশি ক্ষতি করেনা। তাহলে জেনে নেওয়া যাক প্রেসার লো হলে করণীয়, লক্ষণ, কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় ও চিকিৎসা
প্রেসার লো হলে করণীয়

যদি শরীরে ইলেকট্রোলাইট বা পানিশূন্যতার কারণে লো ব্লাড প্রেসার হয় তাহলে শুধু খাবার স্যালাইন মুখে খেলেই প্রেসার বেড়ে যাবে।এছাড়ও এক চিমটি লবণও খেতে পারেন।
এগুলো মূলত তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা।যাদের দীর্ঘমেয়াদী লো ব্লাড প্রেসার আছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে দীর্ঘমেয়াদী লো ব্লাড প্রেসার থাকা ভালো লক্ষণ নয়।নিচে আরও কিছু প্রেসার লো হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১) তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসার বাড়ানোর জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী।প্রায় অধিকাংশ জায়গায় ডাব পাওয়া যায়।ডাব রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২) শুধু স্বাস্থ্যহীন হলেই লো প্রেসার হবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।স্বাস্থ্যবান মানুষেরও লো প্রেসার হতে পারে। তাই সবসময় সতর্ক থাকা জরুরি।
৩) রক্তচাপ কমে গেলে সাথে সাথে এক চিমটি লবণ খাবেন। লেবু থাকলে লেবুর সাথে একচিমটি লবণ দিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন।
৪) প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
৫) একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনে ৬ বারও খেতে পারেন। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে।
৬) নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর অনেকটা সুস্থ থাকে।আপনি যোগব্যায়াম অথবা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।
৭) বিটরুটের জুস অথবা রস খেতে পারেন। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৮) লো ব্লাড প্রেসারের রোগীরা সবসময় একজায়গায় শুয়ে বা বসে থাকবেন না।আলাদা আলাদা জায়গায় পর্যায়ক্রমে আরাম করবেন।
৯) বেশিক্ষণ একই স্থান থেকে শুয়ে বা বসে থেকে উঠার সময় ধরে এবং সাবধানে উঠবেন।
প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
নির্দিষ্ট কোনো কারণ নয়, বিভিন্ন কারণে রক্তের চাপ কমে যেতে পারে। প্রায় অনেকেরই হালকা রক্তচাপ রয়েছে।অনেকেই এটা টের পায়না বা বুঝতে পারেননা। প্রেসার লো হলে করণীয় গুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে।সেগুলো হলো:-
- হালকা মাথা ব্যথা: এটি একটি সাধারণ উপসর্গ,দ্রুত উঠে দাঁড়ালেই মাথা ব্যথা হয়।
- চোখে ঝাপসা দেখা: শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ভালোভাবে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌছাঁয়না। এটি চোখের ওপর প্রভাব ফেলে।ফলে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: গুরুতর ক্ষেত্রে ব্রেনে অপর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ চেতনা হারাতে পারে।
- বমি বমি ভাব:কিছু ব্যক্তি বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারে।প্রায়ই ঠান্ডা লাগে এবং আঁটসাঁট ত্বকের সাথে থাকে।
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: প্রেসার লো হয়ে গেলে হৃদপিন্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।এতে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা বুক ধরফর করে।
- একাগ্রতার অভাব: কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়না।সবসময় অন্যমনষ্ক ভাব চলে আসা।
- অল্পতেই ক্লান্তি: যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব করা।
- দ্রুত বা অগভীর শ্বাস: শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে শ্বাস প্রশ্বাসে অনিয়মিত বা দ্রুত শ্বাস নিতে হতে পারে।
- ঘাম হওয়া: রক্ত চাপ কমে গেলে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।শরীরের পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে থাকে।এমন হলে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া প্রয়োজন।
প্রেসার লো হওয়ার কারণ
নিম্ন রক্তচাপের কারণগুলো লো প্রেসারের প্রতিকার করার জন্য খুবই জরুরি ।তবে এর মধ্যে কিছু বিষয় হাইপোটেনশনের অবদান রাখতে পারে।যেমন;
১। ডিহাইড্রেশন
পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল বা পানি পান না করার কারণে,রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে ফলে রক্তচাপ কমে যায়।
২। হার্টের সমস্যা
ধীর হৃদস্পন্দন,হার্টের ভালভ সমস্যা,হার্ট এ্র্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউরের মত অবস্থার ফলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে।
৩। এন্ডোক্রাইন সমস্যা
অ্যাডিসন ডিজিজ,থাইরয়েড,রক্তে শর্করা কম এবং ডায়াবেটিসের নির্দিষ্ট রুপগুলিকে প্রভাবিত করে ফলে এ্যান্ডোক্রাইন সমস্যা দেখা যায়।
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া :তীব্র এলার্জির প্রতিক্রিয়া রক্তের হঠাৎ এবং গুরুতর হ্রাস হতে পারে।
৪। পুষ্টির অভাব
ভিটামিন বি-১২ এবং ফোলেটের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে যা নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার কারণ।
লো প্রেসারে ঘরোয়া প্রতিকার
রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে গেলে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পূর্বে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি।লো প্রেসারের জন্য ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো;
১। কফি
কড়া কফি, হট চকলেট,কোলাসহ যেকোনো ধরনের ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।ক্যাফেইন যুক্ত খাবার দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
২। কিসমিস
হাইপোটেনশনের ঔষধ হিসেবে অতি প্রাচীণ কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এক থেকে দুই কাপ কিসমিস সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।সেগুলো সকালে খালিপেটে খান। এতে করে প্রেসার বাড়বে।
৩। পুদিনা পাতা
ভিটামিন সি,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্রাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে।
৪। যষ্ঠিমধু
যষ্ঠি মধু আদিকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে১ কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।এটিও রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে।
পরিশেষে
নিম্ন রক্ত চাপের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে সবসময় এই লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। এজন্য সবসময় খাবার সময়মত খাওয়া খুবই জরুরি।স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা অতি জরুরি।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রেসার লো হলে করণীয় ,লো প্রেসারের লক্ষণ ও এর কারণসহ আরও বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছি। আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা সঠিক তথ্য পেয়েছেন।
প্রেসার লো সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ
১। প্রেসার লো হলে করণীয় কি কি?
উত্তর: একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনে ৬ বার খাওয়ার অভ্যাস করুন। রক্তচাপ কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে লবণ খাবেন। লেবু ও লবণের শরবত পান করতে পারলে ভালো।
২। প্রেসার কমে গেলে কি সমস্যা হয়?
উত্তর: লো ব্লাড প্রেসারের আরেক নাম হাইপোটেনশন। অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা,শারীরিক ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে।
৩। কি খাবার খেলে ব্লাড প্রেসার বাড়ে?
উত্তর: স্যুপ, কফি, ফলের রস, দুধ, শরবত ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। টক জাতীয় ফলে থাকে ভিটামিন সি। এ ছাড়াও পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা সোডিয়ামের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। লেবু, মাল্টা কমলা জাতীয় ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-
প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ, সতর্কতা ও প্রতিরোধ
পক্স হলে কি করনীয়, সতর্কতা ও জরুরী চিকিৎসা