শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
যে শিশুরা খালি পায়ে পায়খানা ব্যবহার করে থাকেৃ। যারা মাঠে-ঘাটে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের পায়ের তলা দিয়ে বক্রকৃমি শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি।
এ কৃমি রক্ত চুষে খায়, ফলে শিশুরা রক্তাল্পতার শিকার হয়ে থাকে। শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে থাকে।
সুচকৃমি নামে এক প্রকার ছোট ছোট কৃমি প্রায়ই শিশুদের পায়খানার রাস্তায় দেখা দেয়। এটি দেখতে অনেকটা কেঁচোর মত হয়ে থাকে।
তবে সাধারণত শিশুদের পেটে যে কৃমিগুলো হয়ে থাকে সেগুলো অনেক ছোট আকৃতির।
কিন্তু ছোট হলেও আপনি জেনে অবাক হবেন যে একটি কৃমি প্রতিদিন মানুষের অন্তর থেকে শূন্য দশমিক দুই মিলিলিটার রক্ত শোষণ করে থাকে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে ছোট্ট এই পরজীবীর আক্রমণ শিশুদের শরীরের জন্য কতটা মারাত্বক।
আজকের আর্টিকেলে শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, কৃমি সংক্রমণের লক্ষণ, কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃমাথা ব্যাথার ঔষধ, সেবনবিধি ও চিকিৎসা পদ্ধতি
কৃমির ওষুধ
কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে আমাদের সকলের শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। কৃমির বিরুদ্ধে যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তার সবগুলো সঠিক ডোজে খেলে নিরাপদ ও কার্যকর।
কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর ২-৪ সপ্তাহ পরে আবার মল পরীক্ষা করে নিতে হবে। কৃমির সংক্রমণ রয়ে গেছে কি না নিশ্চিত করার জন্য।
অ্যালবেনডাজোল
দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ৪০০ মি. গ্রামের ১ ডোজ (২ চামচ সিরাপ)। ১-২ বছরের শিশুদের জন্য এর অর্ধেক ডোজ।
সংক্রমণ রয়ে গেছে মনে হলে ৩ সপ্তাহ পর আরও একবার খাওয়ানোে উচিত। ফার্মেসীতে এলবেন, সিনটেল ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।
পাইরেনটাল পামোয়েট
এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর জন্য এক ডোজ, শিশুর ওজন হিসেবে ১১ মি. গ্রাম/কেজি। সুচকৃমির জন্য প্রয়োজন মনে হলে ২ সপ্তাহ পর পর ১ মাত্রার ডোজ দিতে পারেন। বাজারে এই ওষুধ মেলফিন, ডিলেনটিন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।
মেবেনডাজোল
ট্যাবলেট বা সিরাপ দুইটির যে কোন একটি শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। ফার্মেসীতে মেবেন বা এরমক্স ইত্যাদি নামে পওয়া যায়। ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে ১ চামচ (১০০ মি. গ্রাম) করে দিনে ২ বার ৩ দিন দিতে হয়।
লিভোমিসোল
ফার্মেসীতে কেটেক্স নামে পাওয়া যায়। শিশুর প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী (৩ মি. গ্রাম/কেজি) ১ মাত্রার ডোজ।
কৃমি কেন হয়
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে কৃমি হওয়ার কারণ। কৃমি সংক্রমনের মূল কারণ হল অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা।
সাধারণত অপরিষ্কার বাসস্থান থেকেই কৃমির আক্রমণ ঘটে থাকে। তাছাড়া যে সকল কারণে শিশুদের শরীরে কৃমির সংক্রমণ করতে পারে-
- হাত না ধুয়ে খাবার খেলে।
- টয়লেট থেকে এসে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত মুখ ধুলে।
- ফলমূল কিংবা শাকসবজি ধুয়ে না খেলে।
- স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় কিংবা অপরিচ্ছন্ন স্থানে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করার জন্য।
- অনিরাপদ পানি পান করার ফলে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থাকলে।
- সব সময় ময়লা আবর্জনার ভেতরে খেলাধুলা করলেও শিশুদের কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
কৃমি সংক্রমনের লক্ষণ
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার পূর্বে লক্ষণ গুলো জানতে হবে। কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শিশুদের পেট ফুলে যায় এবং অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে।
সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের পুষ্টির অভাব, রক্তশূন্যতা, আমাশয়, পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো এবং পায়ুপথে চুলকানি সহ নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়।
কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার সাথে কৃমির সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যার মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি নিম্নর নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবেঃ-
- খাবার খাওয়ার আগে অব্যশই ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস দ্রুত পরিত্যাগ করতে হবে।
- ফলমূল কিংবা শাকসবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুতে হবে।
- টয়লেট থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করা যাবে না।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কোন প্রকার খাবার খাওয়া যাবে না।
- অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতে কোন ভাবেই থাকা যাবে না।
- সব সময় স্যাঁতসেতে জায়গা পরিহার করতে হবে।
- যথাসম্ভব নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
- শিশুদের কে যথাসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা হাত যেন মুখে না দেয় সে ব্যাপারে অব্যশই সতর্ক থাকতে হবে।
- সম্ভব হলে কাঁচা নিম পাতার রস খেতে হবে।
- প্রতি তিন মাস পর পর পরিবারের সবাইকে একটি করে অ্যালবেনডাজল ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তবে শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম গুলো অবশ্যই দেখে নিতে ভুলবেন না।
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম – গুঁড়া কৃমির চিকিৎসা
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার সাথে গুঁড়া কৃমির সম্পর্কে জানতে হবে। গুঁড়া কৃমির চিকিৎসা দুইভাবে করা যায়। একটি হচ্ছে মেডিসিনের মাধ্যমে, আরেকটি হচ্ছে ঘরোয়া মাধ্যমে।
- গুড়া কৃমির চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো Albendazole বা Solas ট্যাবলেট। এছাড়াও Alben DS, স্যান্টোনাইন ট্যাবলেট খেতে পারেন।
- এছাড়া গুঁড়া কৃমির চিকিৎসা ঘরোয়াভাবে করা যায়।
- রসুন, নারকেল, লবঙ্গ, মিষ্টি কুমড়োর বীজ এবং এর সাথে আনারস খাওয়া যায়। এগুলো যদি প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে পেটের কৃমির সমস্যা দূর হবে।
পরিশেষে
আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক যারা আছি তারা কৃমি সংক্রামণের লক্ষণগুলো খুব সহজেই বুজতে পারি। শিশুরা বুজতেও পারে না আবার বলতেও পারে না। তাই আমাদের উচিত তাদের প্রতি খেয়াল রাখা।
নিয়ম মেনে সকলেরই সঠিক ভাবে সঠিক মাত্রায় কৃমির ঔষধ সেবন করতে হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।ধন্যবাদ।
শিশুদের কৃমির ঔষধ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। কৃমির সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?
উত্তরঃ অ্যালবেনডাজল, অ্যালবেন্ডাজোলাম নামেও পরিচিত, একটি ওষুধ যা বিভিন্ন ধরনের পরজীবী কৃমির উপদ্রবের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
২। কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি মিষ্টি খাওয়া যাবে?
উত্তরঃ খেলে পেটে কৃমির ওষুধ খেলে পেটের ভেতরে ফুটো হয়ে যায় এমন ধারণা কুসংস্কার মাত্র। তবে অনেকের এটি খাওয়ার পর একটু বমি বমি ভাব হতে পারে। ২. খাওয়ার আগে চিনি খেতে হয় বা মিষ্টি খেতে হয় এমন ধারণার কোন ভিত্তি নেই।
৩। বাচ্চাদের কত মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হয়?
উত্তরঃ ২-৫ বছর বয়সী সব শিশুকে জাতীয় টিকা দিবসে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো ভালো। প্রতি ৪-৬ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশু কৃমির সংক্রমণ থেকে নিস্তার পাবে।
আরও পড়ুন-
চিকেন পক্স এর ঔষধ এর নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা
সোলাস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা