টোফেন সিরাপ এর কাজ কি ও এর ব্যবহারবিধি

টোফেন সিরাপ এর কাজ কি

টোফেন সিরাপ এর প্রতি ৫ মি.লি. তে রয়েছে কিটোটিফেন ফিউমারেট বিপি ১.৩৮ মি.গ্রা. যা ১ মি.গ্রা. কিটোটিফেন এর সমতুল্য। টোফেন সিরাপ এর এক্সপেক্টোরেন্ট সক্রিয় উপাদান হলো গুয়াইফেনেসিন।

শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা থাকলে সহজে কাশি হতে পারে এবং ফুসফুস থেকে এক্সপেক্টোরেন্ট ব্যবহার করে বের করে দেওয়া যেতে পারে। আপনি যদি বুকে কনজেশনে ভুগেন তবে এটি আপনার উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

টোফেন সিরাপ এর কাজ কি, বৈশিষ্ট্য, টোফেন সিরাপ এর প্রভাব, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এর সেবনবিধি, এর বিকল্প কোন ঔষধ আছে কি না সবকিছু নিয়েই আজকের এই আলোচনা সাজানো।


আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ঔষধ, এর প্রতিকার ও চিকিৎসা


টোফেন সিরাপ এর ব্যবহার

টোফেন সিরাপ এর কাজ কি

বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানির টোফেন সিরাপ এই ওষুধটি বর্তমানে বাংলাদেশে বাচ্চাদের জন্য অধিক জনপ্রিয় একটি ওষুধ যে সকল বাচ্চাদের হাঁপানি সর্দি-কাশি এলার্জি এবং চোখ উটে বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা হয়। সেই সকল বাচ্চাদের সেবনের জন্য ডাক্তারদের প্রথম পরামর্শ হচ্ছে টোফেন সিরাপ।

যদি কখনো আপনার শিশু বাচ্চার ঠান্ডা জনিত কারণে সর্দি কাশি, হাঁপানি, এলার্জি জনিত সমস্যা, চোখ উঠা এবং যদি বুকে কফ জমে তাহলে  অবশ্যই আপনার শিশুর জন্য টোফেন সিরাপ এর কাজ উপোযগী।

টোফেন সিরাপ এর কাজ কি তার সাথে আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

  •  অ্যাজমা/হাঁপানির প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা
  •  এলার্জিক রাইনাইটিস
  • এলার্জি জনিত হে ফিভার ও ত্বকের প্রতিক্রিয়ায়
  • এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস্

টোফেন সিরাপ কিভাবে কাজ করে

টোফেন সিরাপ একটি বিশেষ ধরনের মেডিসিন যা শিশুদের ব্যথা, স্নায়ু ব্যথা ইত্যাদি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। এটি একটি কার্বনিক এসিডের উপস্থিতিতে কাজ করে এবং এর মাধ্যমে বাচ্চাদের ব্যথা প্রশমিত হয়। টোফেন সিরাপ এর কাজ কি তা আমরা বিস্তারিত জানবো।

এটি শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে চালিত হয় যা তাদের শ্বাসের উচ্চতা, দাবানু ইত্যাদির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কাজ করে। যা শিশুকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। টোফেন সিরাপ এর মূল উপাদান সেটাকে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজের সাথে মিশে যুক্ত করে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে।

এটি সাধারণত প্রস্তুত করা হয় স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে যা শিশুদের জন্য খুবই কার্যকর। টোফেন সিরাপ সাধারণত দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের দ্বারা উন্নয়ন করা হয় এবং এটি প্রযুক্তিগত অবস্থায় থাকে যার জন্য এটি সেবনের জন্য খুবই নিরাপদ।

এটি উপযুক্ত মাত্রা সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের কখনও অতিমাত্রায় প্রয়োগ করা উচিত নয়, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সুতরাং এটি ব্যবহারের আগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

এটি ব্যবহার করার পূর্বে শিশু ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে যদি কোনও সন্দেহ থাকে তবে টোফেন সিরাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়াও, এটি প্রতিদিন ব্যবহার করা উচিত নয়।

শিশুর বয়স এবং তার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য পরামর্শকের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। তবে যদি সঠিক উপদেশ মেনে টোফেন সিরাপ ব্যবহার করা হয় তবে এটি একটি নিরাপদ ঔষুধ।

টোফেন সিরাপ এর সেবনবিধি

পূর্ণবয়স্ক 

সাধারণভাবে ১ মি.গ্রা. করে দিনে ২ বার খাবারের সাথে সেবন করতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে এক সাথে ২ মি.গ্রা. দিনে ২ বার সেবন করা যাবে। 

৩ বছরের অধিক বয়স্ক 

 ১ মি.গ্রা. করে দিনে ২ বার আহারের সাথে সেব্য। খুব বেশি ঘুম পেলে চিকিৎসা শুরুর প্রথম ক’দিন রাতের বেলা খাবারের সাথে ০.৫ থেকেক ১ মি.গ্রা. এ্যালারিড অথবা চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে হবে।

৬মাস -৩ বছরের শিশু 

শিশুর ওজন মোতাবেক ০.০৫ মি.গ্রা থেকে ০.২৫ মি.গ্রা. করে সিরাপ দিনে ২ বার সকালে এবং বিকালে সেবন করতে হবে। টোফেন সিরাপ এর কাজ কি তা জেনে সেবন করতে হবে।

বার্ধক্য 

পূর্ণবয়স্কদের অনুরূপ মাত্রা অথবা চিকৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী। বিভিন্ন কারনে ওষুধের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। তবে চিকিৎসক যেভাবে পরামর্শ দিবেন ঠিক সেভাবে ওষুধ গ্রহন করুন। অব্যশই আপনার প্রেসক্রিপশনের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

টোফেন সিরাপ যে ক্ষেত্রে ব্যববহার যোগ্য নয়

যে সব রোগীদের এই ওষুষের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে তাদের জন্য এটা ব্যবহার করা যাবে না। একইসাথে এই সিরাপ এবং মুখে সেব্য এন্টিডায়াবেটিক উপাদান গ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে রক্তে থ্রন্থোসাইট স্বল্পতা দেখা যায়। অতএব ওষুধ দুটো একসাথে সেবন পরিহার করা উচিত।

টোফেন সিরাপ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ঔষধ সেবনের শুরুর প্রথম কয়েক দিন তন্দ্রাচ্ছন্নতা এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ক্ষেত্রে মুখ গহ্বরের শুষ্কতা, সামান্য মাথা ঘোরা ভাব হতে পারে। ওষুধ ব্যবহারের কিছুদিন পরে এইসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিলীন হয়ে যায়।

গর্ভাবস্থায়

গর্ভাবস্থায় টোফেন সিরাপ এর নিরাপত্তাজনিত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। সুতরাং গর্ভকালীন সময়ে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সিরাপ সেবন করা যাবে।

স্তন্যদানকালে

যেহেতু টোফেন সিরাপ সেবনের কারণে মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়ে থাকে। সেহেতু টোফেন সিরাপ সেবনকারী মায়েদের স্তন্যদান হতে বিরত থাকা উচিত।

টোফেন সিরাপ সেবনে সর্তকতা

হাঁপানীর জটিলতা নিরসনে টোফেন এর চিকিৎসা শুরুর কমপক্ষে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্ববর্তী চিকিৎসা অনুসরণ জরুরী। সম্ভাব্য এড্রেনোকটিক্যাল স্বল্পতার কারণে ষ্টেরয়েড নির্ভরশীল রোগীদের বেলায় পূর্ববর্তী চিকিৎসার অনুসরণ আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।

ঔষধ সেবনের প্রথম কয়েকদিন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। ব্যক্তি বিশেষের উপর টোটফেন সিরাপের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যানবাহন ও যন্ত্রপাতি চালনা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত।

এলকোহল জাতীয় পানীয় পরিহারে রোগীদের পরামর্শ দেয়া উচিত। টোফেন সিরাপ ঘুমের ওষুধ, এন্টি-এলার্জিক ওষুধ এবং এলকোহল এসবের সাথে সেবনে  প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

সংরক্ষণ

বিশেষ কোন নিয়ম মেনে আপনাকে টোফেন সিরাপ সংরক্ষন করতে হবে না। এটিকে ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নিচে আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে, শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে রাখুন। অর্থাৎ আপনি এই ঔষুধকে আপনার নরমাল কক্ষ তাপমাত্রায় রাখতে পারবেন। তবে অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। 

টোফেন সিরাপ এর মাত্রা

টোফেন সিরাপ অতিমাত্রায় সেবনের ফরে দ্বিধাগ্রস্থতা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মাথাব্যথা, নাড়ির নিম্নগতি, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি দেখা যায়।

টোফেন সিরাপ এর মিথষ্ক্রিয়া

ঘুমের ওষুধ, এলার্জিবিরোধী ওষুধ এবং এলকোহল এর প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিক বিরোধী ওষুধগুলোর সাথে টোফেন সিরাপ এর ব্যবহারে রক্তে প্ল্যাটিলেট স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। অতএব ওষুধ দুটো একসাথে সেবন করা পরিহার করা উচিত।

পরিশেষে

কেউ যদি জানতে চাই টোফেন সিরাপ এর কাজ কি? তাহলে এক কথায় এটি ঠান্ডা জনিত সমস্যা অ্যালার্জি জনিত সমস্যার এ্যান্টি হিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। টোফেন সিরাপ মূলত বাচ্চাদের জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

বয়স্কদেরও সেবনের জন্য কার্যকারী ঔষধ। টোফেন সিরাপ গর্ভাবস্থায় সেবন করা নিরাপদ যেহেতু এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্তন্যদানকালে খেয়াল রাখতে হবে, মাতৃদুগ্ধর মাধ্যমে নিঃসরণ হয় এই জন্য শিশুকে কিছু সময়ের জন্য স্তন্যদান থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুদের প্রয়োগ করতে হবে। 

কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলেও ওষুধটি সেবন করা নিরাপদ। আপনার নিকটস্থ ফার্মেসীতে এই ঔষুধটি পেয়ে যাবেন। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি টোফেন সিরাপ এর কাজ কি, ব্যবহার, সেবনবিধি, সতর্কতা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

টোফেন সিরাপ এর কাজ কি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। টোফেন কিসের ঔষধ?

উত্তরঃ টোফেন 1 মিলিগ্রাম শ্বাসনালী হাঁপানির প্রফিল্যাকটিক চিকিত্সা, রাইনাইটিস এবং কনজেক্টিভাইটিস সহ অ্যালার্জিজনিত অবস্থার লক্ষণীয় চিকিত্সার জন্য নির্দেশিত হয়।

২। টোফেন সিরাপ কেন ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ টোফেন 100 মিলি মাস্ট কোষগুলিকে স্থিতিশীল করে, কেমোট্যাক্সিস হ্রাস করে, ইওসিনোফিলগুলির অবক্ষয় সক্রিয় করে।

আরও পড়ুন-

চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম ও ব্যবহার বিধি

জুতার গন্ধ দূর করার উপায় ও কার্যকরী পদ্ধতি সমুহ

Leave a Comment