কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
বর্তমান সময়ে ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা এর জন্য কম বেশি সবাই ভুলে থাকেন। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী এবং যারা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করে থাকেন। তাদের এ সমস্যাটি বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। কোমরের ব্যথার সমস্যা খুবই বিরক্তিকর একটি সমস্যা।
যাদের কোমর ব্যথা রয়েছে তারাই শুধুমাত্র জানে এই রোগের কতটা যন্ত্রনা। বর্তমান সময়ে অনেকেই কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। অনেকেই ব্যথা প্রশমিত করার জন্য কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন।
অনেক ধরনের ঔষধ এবং বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কেউ কেউ কোমর ব্যথার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পান না। আজকের আর্টিকেলে আমরা কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট, কোমর ব্যাথা কি, কেন হয়, কোমর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন বি ১২ ট্যাবলেট এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম
কোমরের ব্যথা কি
কোমরের পেশী, লিগামেন্ট, হাড়, দুই কোষেরুকার মধ্যে অবস্থিত অংশ, জোড়া, জোড়ার আবরণ, স্নায়ুর ব্যথা ইত্যাদি জনিত রোগ হচ্ছে কোমর ব্যথা। সাধারণত মেরুদন্ডের পেছনের দিকের অংশ ব্যথায় জর্জরিত হলে তাকে কোমর ব্যথা বলে। মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে কোমর ব্যথা সমস্যায় ভুগেন।
এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেই না, যারা কোমরের ব্যথায় ভুগছেন না। তবে কোমর ব্যথাকে আমরা মাজার ব্যথা বললেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে, স্পাইন বলা হয়ে থাকে।
মূলত হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে মেরুদন্ডের দুটি কোষেরুকার মাঝখানে যে ডিস্ক আছে সেটা ক্ষয় হয়ে যায়। যার ফলে শুরু হয় ব্যাথা, আর তখন এটাকে বলা হয় স্পন্ডাইলোসিস।
কোমরের ব্যথার কারণ কি
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম, কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার পূর্বে এটা জানা দরকার যে, মূলত কেন কোমর ব্যথা হয়? কোমর ব্যথা মানেই কি কিডনি জনিত সমস্যা? কিডনির সাথে কোমরের ব্যথার কোন সম্পর্ক নেই।
কোমর ব্যথার মূলত বেশ কিছু কারণ রয়েছে। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শতকরা ৯০% ভাগ মানুষ দুই মাসের মধ্যে কোমর ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আসুন আমরা কোমরের ব্যাথার কারণ গুলো সম্পর্কে অবগত হই।
- লাম্বার স্পনডোলাইসিস: প্রত্যেক মানব শরীরের কোমরে পাঁচটি হার রয়েছে। যদি সেগুলো বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়- তাহলে সৃষ্টি হয় কোমর ব্যথার, এটি লাম্বার স্পনডোলাইসিস।
- কোমর ব্যথার সবচেয়ে শক্তিশালী একটি কারণ হচ্ছে পিএলআইডি। ২৫ বছর থেকে ৪০ বছর মানুষের মধ্যে কোমর ব্যথা দেখা দেয়। এই কারণটির জন্য মানব শরীরে হাড়ের মধ্যে ফাঁকা স্থান তৈরি হয়। সেই ফাঁকা জায়গায় থাকে তালের শাঁস এর মত চাকতি। আর সেটা যদি কোন কারনে সরে যায়, তখন স্নায়ু মূলের ওপরে অধিক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে অনুভূত হয় কোমরের ব্যথার।
- কখনো কখনো যক্ষার কারণে বুকে ব্যথার পাশাপাশি কোমরের ব্যথার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই কোমরের ব্যথার আরেকটি কারণ হচ্ছে যক্ষা।
- ক্যান্সার, এইডস, অস্টিওপোরোসিস সেই সাথে দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলেও কোমরে ব্যথার অন্যতম কারণ।
এক কথায়, কোমরে ব্যথার সমস্যা মূলত স্ট্রেইন, ফ্র্যাকচার, ডিস্ক সমস্যা, কাঠামোগত সমস্যা, বাত রোগের সমস্যা সে সাথে অন্যান্য রোগের কারণেও হয়ে থাকে।
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম
কোমরের ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা অনেকেই কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেটের নাম সম্পর্কে জানতে চান। বর্তমান সময়ে ফার্মেসিতে অনেক ধরনের কোমর ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
তবে এ সকল ব্যাথা কমানোর ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সে অনুযায়ী ট্যাবলেট সেবন করা উচিত। কিছু কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম সম্পর্কে জানি।
- Naprox (500 mg). এস কে এফ – ১১ টাকা
- Ecless(500 mg). ইনসেপ্টা – ৯ টাকা
- Napro A (500 mg). একমি – ৮ টাকা
- Napryn (500 mg). হেলথ কেয়ার – ১১ টাকা
- Diproxen (500 mg). ড্রাগ – ৭ টাকা
- Napro (500 mg). এরিস্টো ফার্মা – ৭ টাকা
- Naspro (500 mg). পপুলার – ৯ টাকা
- Xenapro (500 mg). রেনেটা – ৮ টাকা
- Nuprafen (500 mg). বেক্সিমকো – ৮ টাকা
বাজারে অনেক ধরনের ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট হলো-
- ন্যপ্রক্সেন সোডিয়াম
- আইবুপ্রোফেন
উপর উক্তি এই দুটি ঔষধ মূলত ব্যথার জন্য সবচেয়ে ভালো র্কাযকর ঔষধ।
কোমর ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
কোমরের ব্যাথা কমানোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে খুব সহজে কোমরের ব্যথা সারানো সম্ভব। আবার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলেও কোমর ব্যথা খুব সহজেই সরানো যায়। আমরা নিম্নে কোমরের ব্যাথা সারানোর সহজ কিছু উপায় ও কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
অভ্যাস পরিবর্তন
আমাদের বেশিরভাগ লোকেরাই ডেক্স জব করে থাকে। এরা একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। তাই অভ্যাস পরিবর্তন করে লং টাইম বসে না থেকে বিরতি দিয়ে দিয়ে কাজ করতে হবে। এতে কোমর ব্যথা সারানো সহজ হব।
ম্যাসাজ বা হিট থেরাপি
অনেক রোগী রয়েছে যাদের হিট থেরাপি বা ম্যাসাজ করলে আরাম পায় ।তাই এমন অবস্থায় রোগীদের ঠান্ডা বা গরম থেরাপি বা ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
বিশ্রাম
যাদের কোমর ব্যথা রয়েছে তারা নির্দিষ্ট মাত্রায় রেস্ট বা বিশ্রাম নিলে আরাম পায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় রেস্ট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হলুদ
কোমরের ব্যাথা কমাতে হলুদ অনেক উপকারী। তাই কোমরের ব্যথা দূর করতে প্রতিদিন দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
কোমরের ব্যথা কমতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খেতে পারেন।
এলোভেরা
আপনার যদি অতিরিক্ত কোমর ব্যাথা হয়ে থাকে। তাহলে এ থেকে রেহাই পেতে এলোভেরা শরবত খেতে পারেন। এটি কোমর ব্যাথা কমাতে অনেক বেশি উপকারী।
লেবুর শরবত
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। যা শরীরের ব্যথা ও যন্ত্রণা কমাতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। সে জন্য লেবুর শরবত খেতে পারেন কোমরের ব্যথা কমাতে।
আদা
কোমরের ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা নিয়মিত আদা খেতে পারেন। নিয়মিত আধা খেলে নার্ভের সমস্যা ও কোমর ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
ছেক দেওয়া
কোমর ব্যথা দূর করতে বা কোমরের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা আক্রান্তই স্থানে গরম সেক দিতে পারেন। চেক দেওয়ার সময় আবার বিভিন্ন ধরনের মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ব্যথা উপশম হবে।
পরিশেষে
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট বাজারে অনেক ধরনের পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের কোমরের ব্যথার ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি। তাই ব্যাথা নাশক যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
আর কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় রয়েছে কিছু। যা ব্যবহারের ফলে সহজেই কোমর ব্যথা সারানো যায়। আপনারা চাইলে এগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। এতে করে আপনারা অনেক আরাম বোধ করবেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।
কোমরের ব্যথা সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ
১। কোমর ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাতে হবে?
উত্তরঃ মেরুদন্ডের মাঝে ব্যথা বা অসুবিধার জন্য আপনি একজন বৈদ্য (ফিজিশিয়ান, আর্থোপেডিক ডাক্তার, নিউরোলজিস্ট, বা নিউরোসার্জন) দেখতে পারেন।
২। কোন ব্যথানাশক রক্ত পাতলা করে না?
উত্তরঃ অ্যাসিটামিনোফেনের রক্ত-পাতলা প্রভাব নেই। বেশিরভাগ এনএসএআইডি (ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ), যেমন অ্যাসপিরিন, রক্ত জমাট বাঁধতে (জমাট বাঁধতে) প্রভাবিত করবে, যাকে সাধারণত “রক্ত পাতলা করা” বলা হয়, কিন্তু অ্যাসিটামিনোফেন এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
৩। কোমরের নিচের ব্যথার জন্য কোন ঔষধ ভালো?
উত্তরঃ যদি আপনার ব্যথা অব্যাহত থাকে, তাহলে আপনার প্রদানকারী ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) পরামর্শ দিতে পারেন। আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিছু NSAID যেমন ibuprofen এবং naproxen কিনতে পারেন। NSAIDs ফোলা ডিস্কের চারপাশে ফোলাভাব বা পিছনের আর্থ্রাইটিস কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন-
বাচ্চাদের টোফেন সিরাপ এর কাজ কি ও খাওয়ার নিয়ম
মুখে ব্রণ কমানোর উপায়, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা