ঋণ মুক্তির দোয়া
ইসলাম আমাদের জীবনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে, এর উপযুক্ত সমাধানও দিয়েছে। আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করে চলা। পৃথিবীতে যত ধরনের বোঝা হতে পারে, তার মধ্যে ঋণের বোঝা সবচেয়ে ভারী যার জন্য ঋণ মুক্তির দোয়া আব্যশক।
অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্ত হওয়ায় মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো এই অস্থিরতা হতাশায় রূপ নেয়। আর ঋণ পরিশোধে অপারগতায় সৃষ্ট এই তীব্র হতাশা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করে তোলে।
সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে, ঋণের বোঝা আরও ভারী হতে থাকে। আমাদের ইসলামে সাধ্যের বাইরে ঋণ দেওয়া-নেওয়া দুটিই নিষেধ করা হয়েছে। তবে ঋণগ্রস্তের ঋণ মাফ করে দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে বলে অনেক হাদিসে এসেছে। তবুও ঋণগ্রস্তের উচিত ঋণ মুক্তির দোয়া নিয়মিত পাঠ করা।
ঋণমুক্তির জন্য হাদিসে বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এ দোয়াগুলো অত্যন্ত কার্যকর। সময়মতো ঋণ পরিশোধের সর্বাত্মক চেষ্টা করার পাশাপাশি দোয়াগুলো ভালো করে মুখস্থ করে নিয়ে নিয়মিত আমল করতে পারলে যদি আল্লাহ চান তো ঋণমুক্ত হওয়া সম্ভব।
আজকের আর্টিকেলে ঋণ মুক্তির দোয়া, আমল, ঋণ পরিশোধের দোয়া, হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে ঋণ মুক্তির দোয়া পাঠ করতেন এসব বিস্তারিত তুলে ধরার চেস্টা করেছি।
আরও পড়ুনঃ ফরজ গোসল না করার শাস্তি, শরীয়তের বিধান ও নিয়ম
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপদেশ

দ্রুত ঋণ আদায় করতে, ঋণমুক্ত হতে সক্ষম হওয়ার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিছু ঋণ মুক্তির দোয়া, আমল শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঋণ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে অত্যধিক আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
একবার ঋণ থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনারত অবস্থায় এক ব্যক্তি তাকে দেখে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঋণ থেকে বেশি বেশি আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন!’ হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন ‘মানুষ ঋণী হলে, কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে, রক্ষা করে না। ’ (বোখারি, হাদিস নং : ২৩৯৭)
এজন্যই হযরত মহাম্মদ (সা.) উম্মতকে এ ঋণ থেকে মুক্তি পেতে ঋণমুক্তির দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। এক হাদিসে এসেছে, একবার হজরত আলী রা. কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চান।
এ সময় আলী রা. তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বত সমানও হয়ে থাকে।
ঋণমুক্ত থাকতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে দোয়া করতেন
হাদিসে একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এভাবে ঋণ মুক্তির দোয়া করতেন ও বলতেন
আরবি : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَال
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসলি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া গালাবাতিদ দাইনি, ওয়া কাহরির রিজাল।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুশ্চিন্তা, অপারগতা-অলসতা, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অধিক ঋণ থেকে ও খারাপ লোকের জবরদস্তি থেকেও আশ্রয় চাচ্ছি। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৪৭৮)
সুযোগ পেলেই বেশি বেশি এ ঋণ মুক্তির দোয়া পড়তে হবে। ফরজ নামাজের পর পড়ব। আজানের পর পড়ব। দুই খুতবার মাঝে পড়ব। জুমার দিন আসরের পর পড়ব। নফল সুন্নতের সিজদা ও শেষ বৈঠকে পড়ব।
ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার দোয়া
একবার চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) এর কাছে এক ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় হযরত আলী (রা.) তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন?
এরপর হযরত আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত ঋণ মুক্তির দোয়া পড়তে বলেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৩২১)
আরবি : اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা কফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী কোরো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।
এই দোয়াটিও আমরা সকাল সন্ধ্যার আমলের সাথে পড়া অভ্যাসে পরিণত করতে পারি।
ঋণমুক্ত হওয়ার দোয়া ও আমল
অন্য এক হাদিসে এসেছে প্রায় সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর কাছে ঋণ মুক্তির দোয়া করে বলতেন
আরবি : اللهم إني أعوذ بك من الكسل والهرم والمأثم والمغرم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’ছামি ওয়াল মাগরামি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৭)
পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস আর একিনের সঙ্গে পড়ব। ইনশাআল্লাহ ঋণ যত বেশিই হোক, আল্লাহ্ তা’য়ালা একটা ব্যবস্থা করেই দেবেন। আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে ঋণমুক্ত জীবন দান করুন। আমীন।
ঋণমুক্ত থাকতে যে দোয়া পড়বেন
সাহাবি আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুশ্চিন্তার সময় নিম্ন বর্ণিত দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)
আরবি : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইনি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল-কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া দ্বালা‘য়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা ল।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা, দুঃখ থেকে অপারগতা অলসতা থেকে, কৃপণতা ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন পীড়ন থেকে।
এই ঋণ মুক্তির দোয়াগুলো নিয়মিত করলে আল্লাহ ত’য়ালা শিগগির ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন।
পরিশেষে
ঋণ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের অব্যশই বেশি বেশি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে র্প্রাথনা করতে হবে। আমরা অনেকেই আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকি, সময় মত ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আমাদের শাস্তি নির্ধারিত।
এই জন্য, আমাদের প্রত্যেকের বেশি বেশি ঋণ মুক্তির দোয়া পাঠ এবং আমলগুলো আভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এতে করে অব্যশই আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদের সহায় হবেন ঋণ মুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। আশা করি আপনাদের ঋণ মুক্তির দোয়া আমল সম্পর্কিত বিষয়গুলো বোঝাতে পেরেছি।
ঋণ মুক্তির দোয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। ঋণ কি ইসলামে বৈধ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ইসলামে ঋণ বৈধ। “ঋণ প্রথা বৈধ যা সুন্নত এবং ইজমা (ঐক্যমত) দ্বারা প্রমাণিত। (মুগনী, ইবনু কুদামাহ, ৬/৪২৯)
২।ঋণ থেকে মুক্তির জন্য কী আমল করব?
উত্তরঃ ঋণ মুক্তির দোয়া ফরজ নামাজের পর পড়ব। আজানের পর পড়ব। দুই খুতবার মাঝে পড়ব। জুমার দিন আসরের পর পড়ব। নফল সুন্নতের সিজদা ও শেষ বৈঠকে পড়ব।
৩। পবিত্র কোরআনে কোন সূরায় ঋণ সম্পর্কে বলা হয়েছে?
উত্তর : ঋণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফের “সূরা আল বাকারা” তে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া, ইবাদত ও জীবনধারণ
সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত