মাথা ব্যাথার ঔষধ, সেবনবিধি ও চিকিৎসা পদ্ধতি

মাথা ব্যাথার ঔষধ

মাথা বা ঘাড়ের কোনো অংশ ব্যথার উপসর্গকে মাথাব্যথা বলা হয়। এটি মাথার এক দিকে বা দুই দিকেই হতে পারে। একটি অংশে হতে পারে কিংবা একটি অংশ থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

অধিকাংশ মাথাব্যথা তীক্ষ্ণ কিংবা নিস্তেজ হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দেয়। 

মাথাব্যথা যখন অন্য অসুখের কারণে হয় যা থেকে মাথার ভিতরে কোন ট্র্যাকশান বা প্রদাহ হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকারের মাথাব্যথা হয়ে থাকে, সেগুলি বিভিন্ন কারণে ঘটে। সুতরাং এর জন্য সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। 

আজকের আর্টিকেলে মাথা ব্যাথার ঔষধ, সেবনবিধি, মাথা ব্যথার কারণ, মাথা ব্যথা কেন হয়, মাথা ব্যাথা হলে করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কিত বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।


আরও পড়ুনঃ টোফেন সিরাপ এর কাজ কি ও এর ব্যবহারবিধি


মাথা ব্যথার ওষুধের নামসমুহ

মাথা ব্যাথার ঔষধ

মাথা ব্যথা হওয়ার জন্য অনেক কারণ আছে। কারণ অনুযায়ী মাথা ব্যথা সারানোর উপায়ও কিন্তু ভিন্ন । ২০০ এরও বেশী মাথা ব্যথার ধরণ রয়েছে। 

মাথা ব্যথার রোগীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় ওষুধ খেলে তাদের মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যায়। তাই মাথা ব্যাথার ওষুধের নাম জানা জরুরী। কিছু মাথা ব্যথার ওষুধের নাম হলো-

  1. Anilic ( এনিলিক) 200 mg – Drug International Ltd. – ৮ টাকা
  2. Arain  (আরিন)   200 mg – Opsonin Pharma Ltd. – ১০ টাকা
  3. Lograin (লজরিন) Tablet 200 mg – Opsonin Pharma Ltd. – ১০ টাকা
  4. Migratol (মিগ্রাটল) Tablet 200 mg – Beacon Pharmaceuticals Ltd. – ১০ টাকা
  5. Migrex (মিগরেক্স) Tablet 200 mg – Incepta Pharmaceuticals Ltd. – ১০ টাকা
  6. Minopa (মিনোপা) Tablet 200 mg – Medicon Pharmaceuticals Ltd. – ৭.৩৯ টাকা
  7. Tufnil (টাফনিল) Tablet 200 mg – Eskayef Bangladesh Ltd. – ১০ টাকা
  8. Tolmic (টলমিক) 200 mg – Beximco Pharmaceuticals Ltd. – ৮.০৩ টাকা
  9. Tolfi (টলিফ) Tablet 200 mg – Benham Pharmaceuticals Ltd. – ৯.৫০ টাকা
  10. Namitol (নামিটোল) Tablet 200 mg – ACI Limited. – ১০ টাকা

Anilic 

মাথা ব্যথা দূর করার জন্য এই ঔষধটি খাওয়া যেতে পারে। আপনার আশেপাশের যেকোন ফার্মেসিতে এটি নিতে পারবেন। তবে ঔষধ কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কোন ঔষধ কেনার সময় অবশ্যই ঔষধ আপনার মাথা ব্যাথার জন্য উপযুক্ত কিনা সেটি অবশ্যই বুঝে নিতে হবে।

Arain  

মাথা ব্যথা দূর করার জন্য এটিও খুবই কার্যকরী। তবে কেনার সময় অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে যেন আপনার মাথা ব্যাথার জন্য উপযোগী হয়।

Lograin 

আপনার আশেপাশের যে কোন ঔষধের দোকান থেকে আপনি ক্রয় করতে পারবেন। তবে ক্রয়ের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এই ওষুধটি আপনার মাথা ব্যথার জন্য উপযুক্ত  কিনা। মনে রাখবেন এই ঔষধটি মাথা ব্যথা সারানোর পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে থাকে।

Migratol

মাথা ব্যথা সারাতে এই ঔষধটি অনেক ভালো কাজ করে। এই ঔষধটি আপনার মাথা ব্যথা দূর করার জন্য কিনে খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে এটি খাওয়ার পূর্বে আপনাকে সঠিক মাথাব্যথা নির্ণয় করে তারপরে খাওয়া উচিত।

Migrex 

এই ওষুধটি আশে পাশের যে কোন ঔষধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এমন নয় যে খেলেই আপনার মাথা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই রোগ নির্ণয় করে সেবন করা উচিত তা না হলে এটির বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

এই সকল মাথা ব্যাথার ঔষধ আমরা মাথা ব্যাথার নিরাময় হিসেবে খেতে পারি। তবে খাওয়ার পূর্বে সঠিক কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাওয়া উচিত।

মাথা ব্যাথার ঔষধ – সেবনবিধি

প্রাপ্তবয়স্ক

তীব্র মাইগ্রেনের ব্যথায়: ২০০ মি.গ্রা. প্রথম উপসর্গ প্রদর্শিত হলে এবং ১-২ ঘন্টা পর পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

হালকা থেকে মধ্যম ব্যথায়: ১০০-২০০ মি.গ্রা. দিনে তিনবার।

বৃক্ক অসমকার্যকারিতা: ডোজ সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে।

প্রকট বৃক্ক অসমকার্যকারিতা: এড়িয়ে চলুন।

শিশু: শিশুদের সঠিক ডোজ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

টলফেনামিক এসিড খাদ্যের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত। খাওয়ার সময় বা খাওয়ার পর পানি পান করুন।

মাথা ব্যথার মলম

মাথা ব্যথা বিরক্তিকর ও অস্বস্থিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বড় রোগ না হলেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। মাথ্যা হলে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ডাইক্লোফেন ১ % মলম (Diclofen 1 % Ointment)।

এই মলমটিও ব্যবহার করা যেতে পারে ব্যথা উপশমের জন্য। তবে সেটা নির্ভর করবে মাথা ব্যাথার ধরনের উপর।

মাথা ব্যথার কারণ

বর্তমান সময়ে মাথা ব্যথার একাধিক কারণ রয়েছে। এরই মধ্যে অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ হলো স্বাভাবিকের তুলনায় কম ঘুমানো, সব সময় দুশ্চিন্তে থাকা, মানসিকভাবে চাপে থাকা, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন কিংবা সময় মত খাদ্য গ্রহণে না করা ইত্যাদি।

 এছাড়াও প্রচন্ড এক্সারসনে ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের ব্যাথার সৃষ্টি হয়। মাথা ব্যথা সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হল স্বাভাবিক মাথাব্যথা বা প্রাইমারি হেডেক ওপর আরেকটি হলো সেকেন্ডারি হেডেক। 

সাধারণত প্রাইমারি হেডেকের মধ্যে সাধারণত যেসব কারণে মাথাব্যথা গুলো হয় সেসব কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে সেকেন্ডারি হেডেক রয়েছে স্ট্রোক, বিভিন্ন ধরনের মাথায় আঘাত জনিত ব্যথা, মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য ব্যথা, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি হয়ে থাকে।

মাথা ব্যাথা হলে করণীয়

মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য মাথা ব্যাথার ঔষধ সেবনের পাশাপাশি যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তার মধ্যে-

  • অত্যধিক ধূমপান এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পরিহার করা।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
  • একটি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ।
  • চিকিত্সকের পরামর্শে প্রতিরোধমূলক ওষুধ ব্যবহার করা।
  • নিয়মিত ব্যায়ামে জড়িত।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

মাথা ব্যাথার ঔষধ এ মেটাক্লপ্রমাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রক্সাইড এনিলিকের শোষণ বাড়ায় কিন্তু এলুমিনিয়াম হাইড্রেক্সাইড শোষণ কমায়। 

এন্টিকোয়াগুলেন্ট এবং অন্যান্য NSAID’s এর সঙ্গে এনিলিক ব্যবহারে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে এটা লুপ ডাইইউরেটিকস, বিটা-ব্লকার এবং এসিই ইনহিবিটর্স এর উচ্চ রক্তচাপ রোধী ক্রিয়া কমায়। 

যখন একসাথে নেয়া হয় এটি লিথিয়াম, মিথট্রিক্সেট ও কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাডের রক্তরস ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি এসিই ইনহিবিটর্স, সাইক্রোস্পোরিন, টেক্রোলিমাস অথবা ডাইইউরেটিকস সহযোগে খেলে নেফ্রটক্সিসিটি ঘটাতে পারে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

বিশেষ করে পুরুষদের ডিসইউরিয়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, এপিগ্যাস্ট্রিক ব্যাথা, বমি, ক্ষুধামন্দা, ইরিদমিয়া, মাথা ব্যাথা, কাঁপুনি, শিহরণ, ক্লান্তি, শ্বাসপ্রণালীতে অনুপ্রবেশ ও মূত্রে রজের উপস্থিতি পাওয়া যায়। 

সম্ভাব্য মারাত্মক পরিণতিতে রক্তের উপাদান গুলোর পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি এবং হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

মাথা ব্যাথার ঔষধ গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয় না। যদি না ডাক্তার অপরিহার্য বলে মনে করেন। তবে গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমস্টারে এই ঔষধ দেয়া যাবে না। 

খুব কম মাত্রায় মাতৃদুগ্ধে প্রদর্শিত হতে পারে। স্তন্যদানকালে যদি সম্ভব হয়, এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

সতর্কতা

মাথা ব্যাথার ঔষধ সেবনের পূর্বে অ্যাজমা, ব্রাঙ্কোম্পাজম, রক্তপাত সমস্যা, হৃদসংবহনতন্ত্রের রোগ, পাকস্থলীর আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, যকৃত সংক্রামণ, হৃদযন্ত্র বা বুকের ক্রিয়াকলাপে অসমকার্যকারিতা এবং বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

ডিসউইরিয়া কমাতে পানি পান করা বা ডোজ কমানো যেতে পারে।

মাত্রাধিক্যতা

মাথা ব্যাথার ঔষধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, এপিগ্যাস্ট্রিক ব্যথা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত, ডায়রিয়া, উত্তেজনা, কোমা, ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঘোরা, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, মুর্ছা যাওয়া ও খিচুনি হতে পারে। 

তীব্র বিষক্রিয়ার ফলে বৃক্ক বৈকল্য এবং যকৃতের ক্ষতি হতে পারে। রোগীদের উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা দিতে হবে।

পরিশেষে

মাথা ব্যাথার ঔষধ সেবনের পূর্বে মাথা ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হবে। এই  বিষয় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আমাদের মাথাব্যথার অনেক কারণে হতে পারে। মাথাব্যাথা এড়ানোর জন্য নিয়ম মেনে চলাফেরা করা উচিত। অতিরিক্তম মাথা ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে।

 আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে মাথা ব্যাথার ঔষধ সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

মাথা ব্যাথার ঔষধ সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ

১। মাইগ্রেনের ব্যথার জন্য কোন ঔষধ ভালো?

উত্তরঃ প্রেসক্রিপশনের ওষুধ যেমন সুমাট্রিপ্টান (ইমিট্রেক্স, টোসিমরা) এবং রিজাট্রিপটান (ম্যাক্সাল্ট, ম্যাক্সাল্ট-এমএলটি) মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। কারণ তারা মস্তিষ্কে ব্যথার পথ অবরুদ্ধ করে। বড়ি, শট বা অনুনাসিক স্প্রে হিসাবে নেওয়া, তারা মাইগ্রেনের অনেক উপসর্গ উপশম করতে পারে।

২। মাথা ব্যথার জন্য কোন ধরনের ডাক্তার দেখাতে হবে?

উত্তরঃ নিউরোলজিস্টরা স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সমস্যাগুলির চিকিত্সা এবং নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারা প্রায়শই স্নায়বিক অবস্থা, নিউরোমাসকুলার ডিসঅর্ডার, স্পাইনাল কর্ড ডিসঅর্ডার এবং মাথা ব্যাথার রোগীদের দেখতে পায়।

৩। জ্বর ও মাথা ব্যথার জন্য কোন ঔষধ ভালো?

উত্তরঃ বিশ্রাম করুন এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন। ওষুধের প্রয়োজন নেই। জ্বরের সাথে যদি তীব্র মাথাব্যথা, শক্ত ঘাড়, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে তবে ডাক্তারকে কল করুন। আপনি অস্বস্তিকর হলে, অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল, অন্যান্য), আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মোটরিন আইবি, অন্যান্য) বা অ্যাসপিরিন নিন।

আরও পড়ুন-

doxicap এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম ও প্রতিক্রিয়া

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

Leave a Comment