পক্স হলে কি করনীয়
বসন্তের একেবারে শুরুর দিকের সময়ে অনেকের ত্বকে পক্স বা জল বসন্ত দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন অসুখ। এর মধ্যে পক্স বা জল বসন্ত উল্লেখযোগ্য। পক্স নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে।
বিভিন্ন জনের একেক রকম মত রয়েছে। কেউ বলে এটা খাওয়া যাবে না বা বাহিরে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।
আজকের আর্টিকেলে আমরা পক্স হলে কি করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরব। আশা করছি এই তথ্যগুলো থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ঠান্ডার ওষুধের নামসমুহের তালিকা ও ব্যবহারবিধি
পক্স হলে করণীয়গুলো

- রোগীর শরীর এ সময় ঠান্ডা রাখা উচিৎ। তাই গোসল করা প্রয়োজন। তবে অনেক বেশি ঠান্ডা পানিতে কখনো গোসল করবেন না।
- নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার পাবেন । নিমের এ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে।
- এই সময়ে বারবার জ্বর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্করা প্যারাসিট্যামল খেতে পারেন। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- ব্যথার হাত থেকে বাঁচতে রোগীর শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিন, এতে তার শরীরে খানিকটা হলেও আরাম পাবে।
- সেই সঙ্গে প্রতিদিন দু’বেলা করে জামা-কাপড় বদলানো উচিৎ। তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
- এসময়ে অন্য কাপড়ের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। এতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতি কাপড় পড়লে রোগীর জন্য ভাল।
- পক্স হলে কি করনীয় তার মধ্যে অন্যতম পক্সের জায়গায় কখনো নখ দিয়ে চুলকাবেননা। পক্স হলে কি করনীয় তা জেনে কাজ করা ভাল। নখ দিয়ে চুলকালে ত্বকে স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে। আবার তা থেকে সংক্রমণও ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শিশুদের শরীরে পক্স হলে তাদের নখ কেটে দিবেন।
- চুলকানি কমাতে olive oil বা calamain losson লাগান। পক্সের ওপর এ্যান্টিবায়োটিক মলম / ক্রিম লাগাতে পারেন।
যেসব লক্ষণে বুঝবেন পক্স হয়েছে
এ রোগের শুরুতে ভাইরাস সংক্রমণে শরীর ম্যাজম্যাজ করে, হালকা ব্যথা, হালকা জ্বর থাকবে, গায়ে ছোট ছোট র্যাশ উঠবে। সাধারণত র্যাশ বুকে-পিঠে দেখা যায়, তবে সারা শরীরে উঠতে পারে। এগুলো দেখতে অনেকটা ফোসকার মতো, এগুলোর মধ্যে পানি থাকে।
১। দূর্বলতা
২। মাথা ব্যথা
৩। সর্দি
৪। জ্বর জ্বর ভাব
৫। ঠাণ্ডা লাগা
৬। পুরো শরীরে ব্যথা
পক্স কিভাবে ছড়ায়
একই পরিবারের যে কোন সদস্য আক্রান্ত হলে, অন্যদেরও হতে পারে। স্কুলে কোন শিশু আক্রান্ত হলে, অন্য শিশুদের মধ্যে ছড়াতে পারে।যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে, যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
পক্স থেকে শিশুদের রক্ষায় যা করবেন
এই রোগটি হলে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে স্কুল কামাই দিতে হয়। একারণে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
এ ছাড়া সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে শিশুদেরকে ভ্যাকসিন/ টিকা দেওয়া। এ ভ্যাকসিন আমাদের দেশে আগেও পাওয়া যেত। কিছু সময় এটি পাওয়া যায়নি। এখন আবার সব জায়গায় এটি পাওয়া যাচ্ছে।
পক্স এর ঔষধ
পক্স হলে কি করনীয় কিছু বিষয় রয়েছে তবে পক্সের নির্দিষ্ট কোনো ঔষধ নেই । তাই চিকিৎসকরা কিছু সাধারণ ঔষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।যেন চুলকানি ও জ্বর কম থাকে।ঔষধ গুলো হলো-
- Moxacil tablet
- Napa tablet
- Paracetamol
- Histacin tablet
- Virux tablet
পক্সের দাগ দূর করার জন্য মলম
যেকোনো ধরনের পক্স রোগে ফুসকুড়ি থেকে সারা শরীরে দাগ ছড়িয়ে পড়ে। এই দাগগুলো সারানোর জন্য চিকিৎসকেরা কিছু ক্রিম বা মলম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেগুলো হলো-
- Batamason-N
- Soneta
- Skinova antiseptic
- Berberis
এই ক্রিমগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিৎ।অপরদিকে Ocuvar 5% cream পক্সের লোশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কী খাবেন না
চর্বিজাতীয় খাবার যেমন;মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকেল বা চকলেট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। শরীর সুস্থ রাখতে চিকিত্সকরা অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খেতে নিষেধ করেন।
পক্স হলে মুখের ভিতরে ছোট ছোট ঘা সৃষ্টি হয়, তাতে ঝাল লাগলে প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই তেল-ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন।
আখরোট, চীনাবাদাম, কিসমিশের মতো খাবারে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা পক্সের জীবাণুর বংশ বিস্তার করে। এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভাল হলেও পক্স হলে এই খাবার থেকে বিরত থাকুন।
যা খাওয়া যাবে
- পক্স হলে শরীর অনেক দুর্বল থাকে। তাই শরীরের জন্য খনিজ ও অন্যান্য ভিটামিন জাতীয় খাবারের প্রয়োজন হয়।
- সেদ্ধ সবজি বেশি বেশি খেতে হবে। …
- ত্বকের রোগ নিরাময়ে দই অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- এসব রোগের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে।
- নিম পাতার রস তিতা হলেও, নিম সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসলের পাশাপাশি নিম পাতার রস খেলেও উপকার পাবেন।
পক্স কতদিন থাকে
পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হয়। সেটা ধীরে ধীরে পানিভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। সাত থেকে দশ দিন পর থেকে তা শুকাতে থাকে।
পরিশেষে
আজকের আর্টিকেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পক্স হলে কি করনীয় সে সম্পর্কে জানা। বর্তমান সময়ে বড়দের তুলনায় বাচ্চারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।আজ আমরা বাচ্চাদের এ রোগে আক্রান্তের কারণ ,লক্ষণ ,ভ্যাকসিন প্রদান এ সকল যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।
আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন এবং এটি আপনার আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সাথেও শেয়ার করবেন।আজকের আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।ধন্যবাদ।
পক্স হলে কি করনীয় সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ
১। পক্স কি বারবার হয়?
উত্তর: না। কারণ, যার এক বার পক্স হয়েছে, তাঁর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। তাই পুনরায় ওই রোগে হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
২। পক্স এর লক্ষণ কি?
উত্তর: ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের দশ থেকে বারো দিনের মধ্যেই উপসর্গ প্রকাশ হয়ে থাকে। ত্বকে প্রথমে ঘামাচির মতো রাশ উঠতে থাকে, যা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার ২-৩ দিন আগে থেকেই শরীর ব্যথা হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেটব্যথা হতে পারে। লাল লাল ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়।
৩। পক্স হওয়ার কারণ কি?
উত্তর: ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস এর মাধ্যমে পক্স হয়। এটি একটি হারপিসভাইরাস পরিবারের সদস্য। একই ভাইরাস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দাদ সৃষ্টি করে। পক্সের ফোসকা দেখা দেওয়ার ১ থেকে ২ দিন আগে থেকে সমস্ত ফোসকা ফেটে না যাওয়া পর্যন্ত খুব সহজে অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে।
৪। পক্স কত দিনে ভালো হয়?
উত্তর: পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হয়। সেটা ধীরে ধীরে পানিভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরবর্তিতে ফোস্কার ভিতরের পানি ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। ৭-১০ দিন পর থেকে তা শুকাতে থাকে।
আরও পড়ুন-
ঘুমের ঔষধ নাম, দাম ও চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ
টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে, চিকিৎসা ও প্রতিকার