শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়

এখন শীত এবং গরমের আবহাওয়ায় সবাই কমবেশি জ্বরে ভুগছেন, সাথে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ তো আছেই। আজ আমরা আপনাদের জন্য শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানাবো। বড়দের তুলনায় শিশুরা জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। কাজেই শিশুদের জ্বর সর্দি হলে তা কখনও অবহেলা করা উচিত না।

অভিভাবকেরা শিশুর বেশি জ্বরে বেশী দুশ্চিন্তা করেন। ভাইরাল ফিভারে শিশুদের জ্বর একবারেই বেশি চলে আসে, কখনও তা ১০২° ফারেনহাইট এর উপরে উঠতে পারে, একেবারে ১০৪/১০৫° ফারেনহাইট পর্যন্তও যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় সম্পর্কে জানাবো।


আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যাথার ঔষধ, সেবনবিধি ও চিকিৎসা পদ্ধতি


ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ 

  • হাঁচি ,কাশি,নাক দিয়ে পানি পড়া।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • সারা শরীরে,হাতে ও পায়ে ব্যাথা অনুভব হওয়া।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করা।
  • খাবারে অরুচি,মুখে বিস্বাদ লাগা।
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া ।
  • শরীরের চামড়া বা ত্বকে র‌্যাশ দেখা দেওয়া।
  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • শীত শীত অনুভুত হওয়া এবং ঘাম দিয়ে জ্বর আসা।

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় – প্রাথমিক চিকিৎসা

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়

শিশুদের জ্বর কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য তাকে স্বস্তি দেওয়া। মূল অসুখ নিরাময় হলে জ্বর স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তাই জ্বরের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে, জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করা।

শিশুর জ্বর ১০২ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে হলে এবং বেশি অসুস্থ না হলে জ্বর কমাতে অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় হল প্যারাসিটামল দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তা রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী হতে হবে।

  • হালকা গরম পানিতে গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে মাথাসহ পুরো শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে পারেন। জ্বর দ্রুত কমানোর জন্য ঠান্ডা পানি, বরফ দেওয়া পানি, মাথায় ক্রমাগত ঢালার দরকার নেই। জ্বর অবস্খায় শিশুকে খাবার নিয়ে কোন চাপ দেয়া যাবে না, তাতে বমিও হতে পারে। 
  • শিশুকে প্রোটিন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার একটু বেশি পরিমাণে দিতে হবে।
  • জ্বরের শিশুকে সাধারণ  খাবারের চেয়ে তরল খাবার যেমন পানি, শরবত, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। আর ডেঙ্গু হলে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো জরুরি।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা যাবে না।
  • এই সময়ে যেহেতু ডেঙ্গু ও কোভিড এর প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে, তাই জ্বরের দু–এক দিনের মাথায় ডেঙ্গু ও কোভিডের নমুনা পরীক্ষা করে নেয়া ভাল, সঙ্গে সিবিসি করেও দেখতে পারেন। 

জ্বর কমানোর সাধারণ ব্যবস্থা 

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় হচ্ছে শিশুর শরীর মুছে দিবেন, একটু একটু করে প্রচুর পানি, তরল,কোমল পাণীয়, স্যুপ, শরবত বেশি করে খাওয়াবেন। বিশ্রামে রাখার চেষ্টা করবেন, এই সময় কোনো অবস্থাতেই বাইরে যেন খেলাধুলা না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাভাবিক গোসল বন্ধ করা যাবে না, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।

সিরাপ নাকি সাপোজিটরি

শরীরের ভেতরের রোগ নিরাময় হলে জ্বর কমে যায়। শিশুর জ্বর ১০২.২ ডিগ্রী ফারেনহাইটের নিচে হয় এবং তীব্র না হয়, তাহলে প্যারাসিট্যামল দেওয়া উচিত।

প্যারাসিট্যামল সিরাপ ও সাপোজিটরি শিশুদের জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সিরাপ প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা ঘণ্টায় ১০-১৫ মিলিগ্রাম। দৈনিক ডোজ ৬০ মিলিগ্রামের বেশি নয়। 

প্যারাসিট্যামল এবং আইবুপ্রোফেনের পর্যাপ্ত ডোজ শিশুদের জ্বর কমাতে নিরাপদ, কিন্তু ভুল ডোজ শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নির্ণয়ের পরবর্তীতে কোনটি ব্যবহার করা উচিৎ।

প্যারাসিট্যামল সিরাপের প্রয়োগবিধি

প্যারাসিট্যামল ১২৫ এম জি সিরাপ (Paracetamol 125 MG Syrup), হালকা অ্যালেনেজিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে।জ্বরের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাথা, মাথাব্যাথা, আর্থথ্রিটিস এবং একটি দাঁত ব্যাথার ক্ষেত্রে ব্যাথা নিরাময় করতে ব্যবহার হয়। এটি প্রয়োগের আগে অবশ্যই রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।

প্যারাসিট্যামল সাপোজিটরি ব্যবহার

যেসব বাচ্চাদের  ট্যাবলেট অথবা সিরাপ গিলতে অসুবিধা হয় তাদের ব্যাথা ও জ্বর কমাতে সাপোজিটরি দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাচ্চার  ঘনঘন বমি হলেও প্যারাসিট্যামল সাপোজিটরি বেছে নেওয়া হয়। জ্বর অথবা ব্যাথা না কমলে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পরের ডোজ দেওয়া যাবে। ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ডোজের সংখ্যা ৪ টি

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় বিষয় হলো সঠিক ডোজে প্যারাসিট্যামল খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা খুবই কম । বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা হলে অথবা অস্বাভাবিক কিছু খেয়াল করলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

খালি পেটে জ্বরের ঔষধ 

সাধারণত শিশুদের গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা কম হয়, তাই একদমই কোনো কিছু খাওয়াতে  না পারলে খালিপেটে জ্বরের ঔষধ দিতে পারবেন। জ্বর হলে শিশুর একটু বমি হতে পারে, কিছু জ্বরের ঔষধেও শিশুদের বমি হয়। এসব ক্ষেত্রে বমির ঔষধ লাগে না, প্রয়োজনে জ্বরের ঔষধ বদলানো যেতে পারে।

জ্বরে প্রয়োজনীয় সতর্কতা

  • বাচ্চার  সময়মত প্রস্রাব হচ্ছে কি না এবং তার পরিমাণ ও রঙ কেমন। 
  • সারাদিনে  আট  ঘণ্টা প্রস্রাব না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হব্
  • শরীরে কোনো ধরণের ফুসকুড়ি বের হয়েছে কি না তা দেখতে হবে।
  • শিশুর কোনরকম ঝিমুনি ভাব বা নির্জীব হয়ে আছে কি না।
  • কোনো কিছু খেতে বা মুখ দিয়ে লালা ঝরছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিশু শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নীচের অংশ দেবে যাওয়ার মতো কিছু দেখা যায় কি না সেটা দেখতে হবে।
  • শিশু ক্রমেই কেঁদেই যাচ্ছে  কি না
  • কান থেকে কোনো প্রকার প্রদাহ হচ্ছে কি না
  • শরীরে খিঁচুনি হচ্ছে কি না
  • পায়খানার রাস্তা অথবা মলের সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছে কি না 
  • কতবার বমি হয়েছে এবং কি পরিমাণ

উপরের লক্ষণ গুলোর মধ্যে যে কোনো একটা লক্ষণ দেখলে দেরি না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

যখন হাসপাতালে নিতে হবে

শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি  হয়ে, বুকের নিচের অংশ যদি বেশি ওঠা-নামা করে, খাওয়া দাওয়া যদি একেবারেই না করতে চাই, তিন থেকে চার দিনের বেশি সময় ধরে যদি বেশি জ্বর থাকে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে ।

পরিশেষে

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় গুলোর মধ্যে আমরা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, কোন ঔষধটি খেতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে এবং পরবর্তিতে আরও আর্টিকেল পেতে প্রয়োজন ব্লগ ফলো করে আমাদের সাথেই থাকুন।

শিশুর জ্বর সম্পর্কিত প্রশ্ন – উত্তর / FAQ

১। বাচ্চাদের কত ঘন্টা পর পর সাপোজিটরি দেয়া যায়?

উত্তর: জ্বর অথবা ব্যথা না কমলে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পরবর্তী ডোজ দেওয়া যাবে। ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ডোজের সংখ্যা চারটি। ২–৩ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়ার পর জ্বর আসলে ৬০ মিলিগ্রাম ডোজ এর সাপোজিটরি দেওয়া যাবে।

২। একজন মানুষের সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি জ্বর হতে পারে?

উত্তর: একজন মানুষের সর্বোচ্চ  ১০৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এতে করে ভয়ের কোনো কারণ নেই ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত  পৌঁছে গেলে হালকা গরম পনি দিয়ে গা মোছাতে থাকুন যতক্ষণ না 100°F এ নামে। ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর ওপরে উঠলে জ্বর হয়েছে বলে ধারণা  করা হয়।

৩। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত?

উত্তর: তিন মাসের কম বয়সী শিশুর জন্য 100.4 ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রা এবং 6 মাসের কম বয়সী শিশুর তাপমাত্রা 102.2 ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হওয়া ভাবনার বিষয়।

৪। শিশুর জ্বর ১০২ হলে কি করব?

উত্তর: জ্বর  ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রী  হলে, তোয়ালে বা সুতি কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। মুখে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে এবং গরম ও নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন-

কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নামের তালিকা

টাইফয়েড এর লক্ষণ সমূহ, প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি

Leave a Comment