ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুষ্টির চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যায় না শুধুমাত্র খাবার খেয়েই। মা ও শিশুর উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান হলো ফলিক এসিড।
ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা হলো নারীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ফলিক এসিড গ্রহণ করা জরুরি সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করার সময় থেকেই। হবু বাবা-মায়েদের কিছু পরিকল্পনা নেওয়া দরকার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর আগে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্রোপধ্যায় জানান যে সন্তান গর্ভে আসার মাস তিনেক আগে ফলিক এসিড খাওয়ানো শুরু করলে সন্তানের শারিরিক ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
হবু বাবা মায়ের কোন শারিরিক সমস্যা আছে কিনা না প্রি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং করিয়ে দেখে নিতে হবে। যদি শাররিক সমস্যা থাকে তাহলে তার আগে চিকিৎসা করে নিতে হবে। তারপর সন্তানের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরও পড়ুনঃ- টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পদ্ধতি
ফলিক এসিড এর উপকারিতা

ভিটামিন বি৯ বা ফলিক এসিড আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফলিক এসিড দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে থাকে।
যেমন-
১। প্রোটিন ও রক্তকণিকা তৈরিতে অংশ নেয়।
২। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
৩। গর্ভের শিশুর স্নুয়তন্ত্রের অন্যান্ন অংশ, শিশুর ব্রেইন, মাথার খুলি সঠিকভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
৪। ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা হলো শিশুর জন্মগত ক্রটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ফলিক এসিড বিশেষ ভূমিকা রাখে গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউব গঠনে। এই নিউরাল টিউব গড়ে ওঠে গর্ভধারণের প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে। শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ পরবর্তীতে নিউরাল টিউব থেকেই তৈরি হয়।
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম
কতটুকু খাবেন
প্রতিদিন ৬০০মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় খাওয়া প্রয়োজন। ফলিক এসিডের পুরোটা খাবার থেকে সংগ্রহ করা খুব কঠিন। তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়ে থাকে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন ফলিক এসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে।
কখন থেকে খাবেন
ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই। ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে সন্তান জন্মদানের পর তিন মাস পর্যন্ত। গর্ভধারণের ১২ম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ফলিক এসিড খাওয়া জরুরি কারণ গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ গুলোতে গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ দ্রুত গড়ে উঠে।
কীবাবে খাবেন
খালি পেটে খেলে সবথেকে ভালো কাজ করে থাকে আয়রন-ফলিক এসিড। তাই এই ট্যাবলেট খেতে হবে খাবার শুরুর ১ ঘন্টা আগে অথবা ২ ঘন্টা পরে ১ গ্লাস পানি দিয়ে। তবে এই বিষয়টি মেনে চলতে হবে চা কিংবা দুধের মতো তরল খাবার খেলেও। এই ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে ১ গ্লাস কমলার রস দিয়েও। ধারণা করা হয় শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে থাকে কমলার রসে খাকা ভিটামিন সি। তবে খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই এই ট্যাবলেট খেতে পারেন যদি আপনার শরীরে বা পেটে অস্বস্তি হয়।
ফলিক এসিড ট্যাবলেট কোথায় পাবো
গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে ফলিক এসিড ট্যাবলেট বিতারণ করা হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল ও উপজেলা কমপ্লেক্সে। এই ট্যাবলেট প্রয়োজনীয় আয়রন ও ফলিক এসিডের সাথে যোগ করা থাকে। আপনি সহজেই এই আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট নিকটস্থ সরকারী স্বাস্থকেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। আয়রন ফলিক এসিড ফার্মেসি থেকে কিনে নিতে পারেন কোন কারণে সরকাকারী হাসপপাতাল খেকে সংগ্রহ করতে না পারলে।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু খাবারের নাম নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১। বিভিন্ন রকম শাক যেমন: পাট শাক, মেথি শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, কচু শাক, নটে শাক, সজনে পাতা, মুলা শাক, লাল শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, লাউশাক ও মুলা শাক ইত্যাদি।
২। বিভিন্ন সবজি। যেমন: মটরশুঁটি, ফুলকপি, বরবটি, শিম, ঢেঁড়স, বাধাঁকপি, ফুলকপি ও ব্রকলি
৩। ছোলার ডাল, মুগ ডাল ও মাসকলাই ডাল ইত্যাদি
৪। বিভিন্ন রকম ফল যেমন: কমলা
৫। চিনাবাদাম
উল্লেখ, ফোলেট সহজেই নষ্ট হয়ে যায় খাবার রান্না করে খেলে। আবার অনেক সময় শরীর থেকে প্রসাবের সাথে বেরিয়ে যায় আমরা যে ফোলেট গ্রহণ করি।ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতার শরীর দীর্ঘদীনের জন্য এগুলো জমা রাখতে পারে না। অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় ১০ গুণ পর্যন্ত ফলিক এসিড প্রয়োজন হতে পারে গর্ভের শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য। তাই ফলিক এসিডের চাহিদা শুধুমাত্র খাবার খেয়ে পূরণ করা সম্ভাব হয় না সাথে সাথে ট্যাবলেটও খেতে হতে পারে।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
১। আলাদা করে আয়রন অথবা ফলিক এসিড এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন হয় না যদি সঠিক পরিমাণে আয়রন অথবা ফলিক এসিডযুক্ত মাল্টিভিটামিন ঔষধ গ্রহন করা যায়। ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা এ ছাড়া আলাদাভাবে আর আয়রন খাওয়ার প্রয়োজন হয় না আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেলে। তবে ওষুধ খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে।
২। ফলিক এসিড ৫ মিলিগ্রাম বা ৫০০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজের ট্যাবলেট কিনতে হয়। উচ্চ ডোজে ফলিক এসিড খাওয়ার চিকিৎসকরা পরমর্শ দিয়ে থাকে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে। ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার ব্যাপারে সকলকে সর্তক থাকতে হবে।
৩। অনেকে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করে থাকে গর্ভধারণের আগে থেকেই। গর্ভধারণের সময় থেকে মাল্টিভিটামিনের পরিবর্তে বিশেষভাবে তৈরি সাপ্লিমেন্ট বেছে নিতে হবে।
শেষকথা
শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশের গঠনে ফলিক এসিডে অভাব হলে শিশু নানান ধরণের জন্মগত ক্রটি নিয়ে জন্মায়। নিয়মিত ফলিক এসিড গ্রহণ করা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ্য। ফলিক এসিড খাওয়া দরকার সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করার সময় থেকেই। ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা সেটা সম্ভাব না হলে ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই।
ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা FAQ (প্রশ্ন- উত্তর)
১। ফলিক এসিডের অভাবে কি কি রোগ হতে পারে?
উত্তরঃ ফলিক অ্যাসিডের অভাবের কারণে অনেক সময় শরীরের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিডের অভাবের কারণে অ্যানিমিয়া রোগ হয়ে থাকে। তাই রক্ত স্বল্পতার বিভিন্ন লক্ষণও দেখা দিতে পারে শরীরে ফলিক অ্যাসিড কমে গেলে। যেমন অনেক বেশি দুর্বলতা, অলসতা, নিঃশ্বাসে দুর্বলতা চামড়া ফ্যাকাসে ইত্যাদি।
২। ফলিক এসিড ট্যাবলেট বেশি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধটি গ্রহণ করার ফলে যে উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলির মধ্যে জড়তা এবং টিংলিং সংবেদন, মুখ বা জিহ্বায় ব্যথা, দুর্বলতা এবং মনসংযোগ করতে অসুবিধা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
৩। ফলিক এসিড ক্ষতিকর কেন?
উত্তরঃ ফলিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা কিছু লোকে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং সম্ভবত অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উচ্চ মাত্রার ফলিক অ্যাসিড ব্যবহার করার চেয়ে শরীরে আরও বেশি ফলিক অ্যাসিড হতে পারে, তবে এই বর্ধিত ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা ক্ষতিকারক কিনা তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
আরও পড়ুনঃ-
সর্দির ট্যাবলেট এর নাম, সেবনবিধি ও সঠিক চিকিৎসা
বাচ্চাদের কাশির সিরাপ, ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা