চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েল চুলের যত্নে খুব কার্যকারী ভূমিকা রাখে। অলিভ অয়েল চুলের প্রাকৃতিক জেল্লা ধরে রাখার জন্য খুব উপকারী। এটি চুলের পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে।
এর মধ্যে থাকে পলিফেনল এবং ভিটামিন ই। তাই সহজেই অলিভ অয়েলের হেয়ার মাস্ক বানিয়ে আমরা চুলে লাগাতে পারি। অলিভ অয়েল চুল পড়া রোধে খুব কার্যকর। এই তেল ডগাছেড়া চুল গজাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এই তেল চুলে ব্যাবহার করলে চুলের বৃদ্ধি হয়ে থাকে। অলিভ অয়েল তেল চুলকে কোমল নরম এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে থাকে।
বাজারে চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে অসংখ্য পন্য বিক্রি করা হয়। সেই স্বাস্থ্যকর তেলের মধ্যে অলিভ অয়েল অন্যতম। অলিভ অয়েল মাথার ত্বক এবং চুলের জন্য অসংখ্য স্বাস্থ্য-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
আরও পড়ুনঃ অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ও এর ব্যবহার
অলিভ অয়েল চুলের যে সমস্যার সমাধান করে

১। গ্রোথ বুস্টার
অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে খুশকি জমাট বাঁধতে পারে না। অলিভ অয়েল চুলের স্বাস্থ্য এবং চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে থাকে। অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ যা চুলের সেরা উপকরণ।
২। কন্ডিশনিং
অলিভ অয়েল তেলের মধ্যে রয়েছে অত্যান্ত কার্যকারী উপাদান যা মাথার ত্বকের ময়েশ্চারইজড ও শুষ্কতা প্রতিরোধ করে থাকে। এই তেল কন্ডিশনিং চুলের সঠিক পুষ্টি যোগান দিতে সাহায্য করে থাকে। চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুলকে নরম এবং মসৃণ করতে এবং হাইড্রেট করতে অলিভ অয়েল কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩। যে কোনও ক্ষতি থেকে প্রতিরোধ করে
অলিভ অয়েলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট, প্রোটিন যা চুলের রক্ষাকবচ হিসাবে সাহায্য করে থাকে। অলিভ অয়েল তেল চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জলতা বাড়ায় এবং চুলকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়া এ তেল চুলের আগা ভেঙে যাওয়ার মত সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে।
৪। খুশকির সমস্যা তাড়ায়
অলিভ অয়েলের মধ্যে যে অ্যান্টি- ফাঙ্গাল রয়েছে যা চুলের জন্য কন্ডিশনার হিসবে কাজ করে থাকে। অলিভ অয়েলের তেল ব্যাবহারে মাথার খুশকি ও শুষ্কতার সমস্যা দূর হয়। অলিভ অয়েল ব্যাবহারের ফলে খুশকির কারণে যে চুলকানি, জ্বালাভাব ও প্রদাহ তৈরি হয় তা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
৫। ঝলমলে চুলের জন্য
অলিভ অয়েল চুলের পুষ্টি ও আর্দ্রতা বজায় রাখেতে সাহায্য করে থাকে। অলিভ অয়েল ব্যাবহারের ফলে চুল হয় ঝলমলে ও মমৃণ হয়। অলিভ অয়েল চুল ঝড়ে যাওয়ার সমস্যা রোধ করে থাকে। এতে রয়েছে স্কোয়ালিন ও অলিক এসিডের মতো উপাদান, যা চুল স্বাস্থ্যকর ও ঝলমলে করে তুলে এবং চুলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় ও বিভক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে।
চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম – ব্যাবহার করবেন কীভাবে
চুলের জন্য একটি পাত্রে সামান্য অলিভ অয়েল নিয়ে হালকা গরম করতে হবে। এরপর চুলে তেলটা ভালোভাবে মাখাতে হবে। এরপর হাতের আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চুলে ভালোভাবে ম্যাসেজ করতে হবে ১০ তেকে ১৫ মিনিট।
এই অবস্থায় চুল রেখে দিতে হবে অরও ১৫ তেকে ২০ মিনিট। এরপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে শ্যাম্পু অথবা কন্ডিশনার দিয়ে। অলিভ অয়েলের তেল হেয়ার মাস্ক হিসাবেও চুলে ব্যাবহার করা যায়।
অলিভ অয়েলের সাথে ডিমের সাদা অংশ বা অ্যাভোকোডা ভালভাবে মিশাতে হবে। এরপর হেয়ার মাস্কটি সর্ম্পূণ চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। চুলে রাখতে হবে ১০ তেকে ১৫ মিনিট তারপর ভালভাবে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অলিভ অয়েল কন্ডিশনার হিসাবেও ব্যাবহার করা যায়। অলিভ অয়েল চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একটি তোয়ালা নিয়ে তা ভালোভাবে গরম জলে ভিজিয়ে নিতে হবে।
এরপর সেই তোয়ালাটা মাথায় মুড়িয়ে অধাাঘন্টা রেখে দিতে হবে। এসকল ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে চুলকে চকচকে ও মসৃণ করা যায়।
অলিভ অয়েল এবং ডিমের হেয়ার মাস্ক
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বায়োটিন। তাই আমাদের চুলের জন্য এই উপাদান অলিভ অয়েলের মতোই উপকারী। একটি পাত্রে ২ চামচ অলিভ অয়েলের সাথে একটি ডিম ফাটিয়ে দিতে হবে।
এরপর এই দুইটি উপকরন ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি ১ ঘন্টা চুলে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন এই হেয়ার মাস্কটি লাগাতে হবে।
কলা এবং অলিভ অয়েলের মাস্ক
এই হেয়ার মাস্ক ম্যাজিকের মতো কাজ করে রুক্ষ এবং শুষ্ক চুলের সমস্যা মেটাতে। একটি কলা ভালোভাবে চঠকে নিতে হবে এবং এরসাথে ১ চামচ অলিভ অয়েল মিশাতে হবে। এরপর এই ২ উপদাদান ব্লোন্ডারে মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
এইভাবে হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে হবে। এরপর চুল ভালোভাবে আাঁচড়ে এই হেয়ার মাস্ক চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এরপর দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। শ্যাম্পু ব্যাবহার করে চুলটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হব। এই মাস্কটি চুলকে নরম রাখে।
অলভ অয়েল ও নারিকেল তেলের মাস্ক
আপনার চুলের জন্য যে এই দুটি উপাদান বেশ উপকারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই হেয়ার মাস্ক হেয়ার ফল রুকে দেয় এবং ফ্রিজিভাব কমাতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে ৩ চামচ নারিকেলের সাতে ২ চামচ হেয়ার ফল ভালোভাবে মিশাতে হবে।
আপনার হেয়ার অয়েল প্রস্তুত করতে হবে এই দুইটি উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে। এরপর চুলের ভেতর ভালোভাবে এই তেলটি মালিশ করতে হবে। চুলটি স্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
শেষকথা
অলিভ অয়েল চুলের পরিচর্চার জন্য একটি শক্তিশালি মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। মানুষ চুলের যত্নের জন্য বহু বছর ধরে এই তেল ব্যাবহার করে আসছে। অলিভ অয়েল তেল চুলকে উজ্জল, সতেজ, চাঙ্গা এবং পুনরুজ্জীবিত করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহার সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ
১। অলিভ অয়েল চুলে দিলে কি হবে?
উত্তরঃ মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করতে ও শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। চুলের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি। চুলের সঠিক পুষ্টি, কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে। চুলকে নরম ও মসৃণ করতে, হাইড্রেট করতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে অলিভ অয়েলের বিকল্প নেই।
২। চুলের জন্য কোন তেল ভালো হবে?
উত্তর; নারকেল তেল ছাড়াও আরগান তেল এবং জোজোবা তেল শুষ্ক চুলে ভালো প্রভাব দেখায়। এই তেলের সাহায্যে চুল পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পায় এবং চুলে উজ্জ্বলতা দেখা যায়। চুলের উপরিভাগে খুশকি বা ময়লা জমে যাওয়ার কারণেও মাথায় চুলকানি শুরু হয়। এক্ষেত্রে চুলকানি ও খুশকি থেকে মুক্তি পেতে নিমের তেল বা টি ট্রি অয়েল লাগাতে পারেন।
৩। ক্যাস্টর অয়েল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
উত্তরঃ যেকোনও সাধারণ হেয়ার অয়েল বা চুলে মাখার তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারে আপনি। এছাড়াও হাল্কা গরম করে নিয়ে সরাসরি ক্যাস্টর অয়েলও ম্যাসাজ করতে পারেন চুলের লম্বা অংশ এবং মাথার তালু বা স্ক্যাল্পে। তবে এই তেল খুবই চিটচিটে ধরনের। তাই ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করলে অন্তত দু’বার শ্যাম্পু করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন-
২ দিনে চুল লম্বা করার উপায়
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে