ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি ও ঠাণ্ডার চিকিৎসা

ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি

ঠান্ডা অথবা জ্বর থেকে মুক্তি পাবার কৌশল, সত্যি বলতে জানা নেই কারো। যদিও এসব থেকে উপশমের অনেক ধরনের ব্যবস্থাই, জানে অনেকে। কিন্তু তাই বলে যে, সেসব উপায় গুলো যে কাজে আসবেই এমনটাও বলা যায় না।

আর কোন ব্যবস্থা কোন ধরনের সমস্যায় ব্যবহার করা হবে তার ওপরও অনেককিছুই নির্ভর করে। ঠান্ডা লাগলে গলায় খুসখুস ভাব, নাক-চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ভার হয়ে থাকা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। সর্দি-কাশিতে অন্তত এক সপ্তাহ অস্বস্তিতে থাকতে হয়।

ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার মতো তেমন কার্যকর ওষুধ খুব একটা নেই। সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চললে তা আরাম দিতে পারে। ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি সেটা জানা থাকলে,সুস্থ হওয়া কঠিন ব্যাপার না। আজকের আর্টিকেলে আমরা ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

আরও পড়ুনঃ  এলাট্রল এর কাজ, এর ব্যাবহারবিধি ও সতর্কতা

ঠান্ডা লাগার কারন

ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি

শীতকাল হল সর্দি-কাশির মৌসুম। শীতকালেই মানুষের ঘরে ঘরে জ্বর, নাক টানা, সর্দির সমস্যা লেগেই থাকে। তবে ইদানীং সর্দি-জ্বর আর মৌসুমি রোগ নয়। কারণ হলো সারা বছরই ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বৃষ্টিতে, ভিজেও ঠান্ডা লাগতে পারে, তেমনই প্রচণ্ড রোদে ঘাম বসেও হালকা জ্বর, সর্দির মতো সমস্যা হতে পারে। 

ঠান্ডা নিয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়. বারবার ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভুগলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঠাণ্ডা লাগলে লেবুপানি বা ফলের রস পান করুন, যা রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে গ্রিন-টি অথবা গরম চা পান করতে পারেন হালকা গরম পানিতে একটু পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলেও গলায় আরাম পাবেন।

ঠান্ডা থেকে যে সমস্যা হতে পারে 

ঠান্ডা লাগলে কিছু কিছু সমস্যা যে হতে পারে, তা আগে থেকে বোঝা যায়। নাকবন্ধ, গলাব্যথা, কাশি, হালকা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ জানান দেয় যে, ঠান্ডা লেগেছে। এই পরিস্থিতি যাতে বাড়াবাড়ি আকার ধারণ না করে, তার জন্য ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি,তা যদি  ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা হলে আর সমস্যা নেই।

তবে ঠান্ডা থেকে বাসতে শীতকাল আসলেই আমরা আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। দুটি সময়ে মানুষের বেশি ঠান্ডা লেগে থাকে। বেশি গরমকালে এবং বেশি শীতকালে। শীতকালে মানুষ প্রতিদিন গোসল করে না।

প্রতিদিন গোসল না করার পর অনেকদিন পর একদিন গোসল করলে সেই ঠান্ডাটা শরীরে বসে যায়। আর গরমকালে মানুষের শরীর থেকে ঘাম ঝরে, সেই ঘাম শরীরের সুখে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই এই সময় গুলো আমাদেরকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে থাকতে হবে যেন ঠান্ডা না লাগে।

ঠান্ডা লাগার ফলে যেসব রোগ এর সৃষ্টি হতে পারে –

১.নিউমোনিয়া

ঠান্ডা লাগার ফলে ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে, যা নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে।

২.ব্রংকাইটিস

ঠান্ডা লাগার ফলে ব্রংকিতে প্রদাহ হতে পারে, যা ব্রংকাইটিসের কারণ হতে পারে।

৩.সাইনাসাইটিস

ঠান্ডা লাগার ফলে সাইনাসে প্রদাহ হতে পারে, যা সাইনাসাইটিসের কারণ হতে পারে।

৪.অ্যাজমা

ঠান্ডা লাগার ফলে অ্যাজমার লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হতে পারে।১.ক্রুপ: এটি একটি শ্বাসনালীর সংক্রমণ যা শিশুদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার ফলে হতে পারে।

৫. RSV (respiratory syncytial virus)

এটি শিশুদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার ফলে হতে পারে এবং নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

ঠান্ডা থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায় 

ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি সেটা যদি আমরা জানি, তাহলে আগে থেকেই ঠান্ডা থেকে সম্ভব। কিছু কিছু করার নিয়মাবলী অনুসরণ করলে আমরা ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। নিম্নে ঠান্ডা থেকে বাঁচার কিছু ঘরোয়া উপায় দেয়া হলো।

১.হাত পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

২.পরিমিত ঘুম: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৩.সুষম খাদ্য: প্রচুর ফল, শাকসবজি, এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

৪.নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

৫.পর্যাপ্ত পানি পান করা: পানিশূন্যতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

৬.ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে এবং ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বাড়ায়।

৭.স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেস মানুষের,  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো অবলম্বন করো যদি কোন কারণে ঠান্ডা লেগে যায় তাহলে, নিম্নোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

১.গরম পানি: নিয়মিত গরম পানি পান করলে গলা ব্যথা কমে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২.গরম লবণ পানি: লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা কমে।

৩.আদা চা: আদা চা ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, এবং গলা ব্যথার জন্য খুব উপকারী।

৪.তুলসী পাতা: তুলসী পাতার রস ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, এবং জ্বরের জন্য উপকারী।

৫.মধু: মধু কাশি কমাতে সাহায্য করে।

৬.ভাপ: গরম পানিতে ভাপ নেওয়া সর্দি এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে।

৭.বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ঠান্ডা লাগা থেকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি – সতর্কতা

১.যদি ঠান্ডা লাগার লক্ষণ ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

২.যদি তীব্র জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বা বুকে ব্যথা হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

২.শিশুদের ঠান্ডা লাগার বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

৩.গর্ভবতী মহিলাদের ঠান্ডা লাগার বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

এই তথ্যগুলো কেবলমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

বাচ্চাদের ঠান্ডা হলে করণীয়

শীতের সকাল গুলো খুব ঠান্ডা হয়। ঠিক বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ই তাপমাত্রা ও  বাড়তে থাকে। তেমনি,আবার সন্ধ্যা বা রাতে জেঁকে বসে একঝাক শীত। কখনো কখনো ও আবার শুষ্ক-দমকা বাতাসে হুট করেই বেড়ে যায় শীতের তীব্রতার ধরন।

এই এমন আবহাওয়ার তারতম্যের সঙ্গে, যে কারো ই খাপ খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে, তো এইটক আরও সমস্যা। এ কারণে ই এই সময়ে শিশুদের কমন কোল্ড বা সাধারণ ঠান্ডা লেগে থাকা টা খুবই স্বাভাবিক। যে ঠান্ডা থেকে হতে পারে জ্বর, গলাব্যথাসহ অন্যান্য অনেক অনেক জটিলতা।

এইসকল সমস্যা থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য ঠান্ডার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়গুলো সকলের  জানা দরকার।

নিম্নলিখিত উপায়ে আপনার শিশুকে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারেন।তাই বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি সেটা নেমে দেয়া হলো। 

১.ঠান্ডা আবহাওয়া মনে হলেই, শিশুর শরীর চাদর অথবা গরম জামাকাপড়, দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

২.হাপানির কারণে যদি কারো বারবার কাশি হতে থাকে,তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

৩.শিশুকে সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা দিন।

৪.সাধারণ ভাবেই পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। যেমন:নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া এসব ইত্যাদি।

৫.বুকের দুধসহ স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়া।

৬.শিশুর চামড়া মোলায়েম হয়,তাই তাদের শরীর গরম রাখার জন্য পর্যাপ্ত কাপড় পরিধান করাতে হবে।

৭.হালকা গরম শর্ষের তেল অথবা অলিভ-ওয়েল দিয়ে শিশুর  শরীর ম্যাসাজ করতে হবে।

৮.ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ানো।

পরিশেষে

বলা যায় ঠাণ্ডা লাগলে সতর্কতা গুলো জেনে ব্যাবস্থা নিতে হবে। তাই আপনার যদি ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে, ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি সেটা আপনাকে জানতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। 

ঠান্ডা লাগলে করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ 

১.বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে করণীয় কি?

উত্তর: শিশুর চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, কান চুলকানো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। 

২.ঠান্ডার ওষুধের নাম কি?

উত্তর: প্যারাসিটামল এবং আইবুপ্রোফেন দু’টোই একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে লক্ষণ বুঝে। তবে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩.ঠান্ডা লাগা কি দুই সপ্তাহ থাকতে পারে?

উত্তর:সর্দি সাধারণত 3 থেকে 7 দিন স্থায়ী হয়, তবে কখনও কখনও এটি 2 সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। 

আরও পড়ুন-

জ্বর হলে করণীয় কি, যা বর্জনীয় ও ঘরোয়া উপায়

বড়দের কাশির সিরাপ, কার্যকারিতা ও সেবনবিধি

Leave a Comment